মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রা : গাজীপুরে চান্দনা—চৌরাস্তাই পথের কাটা

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৮
আপডেট  : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১০
ছবি-যায়যায়দিন

রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের সাতটি ফ্লাইওভার খুলে দেয়া হলেও ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা দূর হয়নি। বিশেষ করে বিআরটি প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দৃষ্টি নন্দন ফ্লাইওভার ব্রীজটির সিংহভাগ নির্মিত হলেও ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনই চলাচলের জন্য ব্রীজের অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

ফলে গাজীপুর শহর থেকে ঢাকাগামী, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী ও ঢাকা থেকে গাজীপুর শহরগামী বাসগুলো চলাচলের জন্য ব্রীজটি উপযোগী হলেও অন্যান্য রোডের গাড়ি ব্রীজের নীচ দিয়ে ননবিআরটি সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করতে হচ্ছে।

সৌখিন পরিবহন সার্ভিসে চলাচলকারী বাসের মালিক পক্ষের নেতা মো. আবুল হোসেন জানান, চান্দনা—চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের নীচে ননবিআরটির অংশটিই হচ্ছে এখন পথের কাঁটা। যানজট প্রবণ এ পথে ফ্লাইওভারের মোটা মোটা খুটিগুলো এ পথকে আরো সংকুচিত করে দিয়েছে। চান্দনা—চৌরাস্তা ফ্লাইওভার ব্রীজটি ব্যবহার করে ঢাকা— টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলের জন্য কোন অংশ নির্মাণ করা হয়নি। চান্দনা—চৌরাস্তার এ অংশ অতিক্রম কিংবা চলাচলের জন্য ফুটপথ কিংবা ফুটওভারব্রীজ না থাকায় পথচারীরা ঢাকা—টাঙ্গাইল, ঢাকা—ময়মনসিংহ সড়কের দুইপাশের লেন ব্যবহার করছেন। দলবেঁধে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ পার হচ্ছেন। এতে এখানে পথচারী ও যানবাহনকে সেই পূর্বচেনা যানজটের দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়তি। থেমে থেমে যানজট হচ্ছে এখনই। মাঝেমধ্যেই এ যানজট চান্দনা—চৌরাস্তা মোড় থেকে উত্তরে ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়কের সালনা ও পশ্চিমে ঢাকা—টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে।

এ ছাড়াও ননবিআরটি অংশ সরু হয়ে পড়ায় মালেকের বাড়ি, গাজীপুরা, বোর্ড বাজারসহ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, সড়কে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোয় দেখা দেয় যানজট। এছাড়াও কয়েকটি স্থানে বিআরটি'র স্টেশন করায় ননবিআরটি সড়ক সরু হয়ে গেছে, ফলে এসব স্থানেও হতে পারে যানজট।

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে সাতটি ফ্লাইওভার। এই পথে এখন ঢাকা থেকে অনেকটাই স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারছেন টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণার মানুষ।

তবে ঈদযাত্রায় চান্দনাসহ কয়েকটি পয়েন্টে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, বিশেষ করে চান্দনা—চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকামুখী ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। এছাড়া ফ্লাইওভার থেকে নেমেই ব্যস্ত রাস্তায় পড়বে গাড়ি। এছাড়া পথচারী পারাপার ফুটওভারব্রীজ না থাকা, ঈদযাত্রায় যেখানে—সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোয় দেখা দেবে যানজট।

চালকদের গাফিলতি, মানহীন যানবাহন, স্বল্প গতির থ্রি—হুইলার গাড়িসহ নানা কারণে মহাসড়কে যানজটের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। তবে এবার ঈদযাত্রায় যানজটের দুর্ভোগ কমাতে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। যানজটসৃষ্টির কারণ ও যানজট কারীদের চিহ্নিত করেত ড্রোন, সিসি টিভি ও আইপি ক্যামেরা এবং রেকারিং করে যানজট নিরসনে কাজ করবে পুলিশ। এজন্য পুলিশের টহল টিমছাড়াও মোটরসাইকেল টিমও কাজ করবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ওয়াচ টাওয়ার, মোবাইল টিমের পাশাপাশি যেকোনো জায়গায় যদি অবৈধ পার্কিং হয় সেগুলোকে সরাতে রেকার কাজ করবে। সার্বক্ষণিকভাবে এ কাজগুলো চলবে, যাতে রাস্তায় কোনো গাড়ি অযাচিতভাবে দাঁড়িয়ে না থাকে এবং রাস্তায় যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়।

পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পুলিশ বিভাগগুলোর সাথে সমন্বয় করে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্ন চলাচলের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রান্সপোর্টেশন যাতে সঠিকভাবে হয়, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট যাতে সঠিকভাবে হয়, সে বিষয়ে আমাদের পরিপূর্ণ পরিকল্পনা রয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জেলা পুলিশ সমন্বয়ে ট্রাফিক সিস্টেম যাতে ভালো থাকে। এছাড়া আমরা রোডস এন্ড হাইওয়েরও সহযোগিতা নিচ্ছি। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ ও মানহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে এসময় মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমান আদালত) পরিচালনা করা হবে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম জানন, প্রতি ঈদের মতো এই ঈদেও রয়েছে মহানগর পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি। গাজীপুর মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ, ভলেন্টিয়ার, এপিবিএন, মোতায়েন করা হবে। স্থানে স্থানে মাইক দিয়ে অ্যাওয়ারনেস কর্মসূচিও পালন করা হবে। এবার ঈদের যানজট ও সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ছয়শ'র মতো পুলিশ কাজ করবে। এছাড়াও রাস্তায় থাকবে মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম, আইপি ক্যামেরা সিসি ক্যামেরা এবং ড্রোন সার্ভিলেন্স টিম। আশা করছি গতবারের মতো এবারও ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে মহানগর এলাকা পার হতে পারবেন।

দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে কলকারখানাগুলো এক সাথে ছুটি দিলে এই এলাকার সড়কে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। তাই কলকারখানায় ধাপে

অপরদিকে ধাপে ছুটি দিয়ে যানজট কমানোর পরামর্শ দেন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ—২ (গাজীপুর)—এর এসপি মোহাম্মদ সারওয়ার আলম। তিনি জানান, কোন কোন পোশাক কারখানা ৫ এপ্রিল থেকে বেতন বোনাস দিয়ে পোশাক ছুটি দিয়েছে। আর কিছু কারখানার ৭,৮ ও এপ্রিল ছুটি দেয়া হবে। যানজট নিরসনে এসব কারখানা পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে ৭ এপ্রিল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ৮ এপ্রিল ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং বাকি কারখানাগুলো ৯ এপ্রিল ছুটি দেবে। এতে অনেকাংশে যানজট হ্রাস পাবে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে