মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসবে পূণ্যার্থীদের ঢল

সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৫৯
ছবি-যায়যায়দিন

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী তিথি অনুযায়ী শুরু হয়েছে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও ভুটানসহ দেশ-বিদেশ থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীদের দুই দিনব্যাপী মহাষ্টমী স্নানোৎসব।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী স্নান উদযাপন কমিটি জানান, অষ্টমী তিথির লগ্ন ও পূণ্য স্নান গতকাল বিকেল ৪টা ২১ মিনিট থেকে শুরু হয়েছিল চলবে আজ বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত। স্নানোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের লাঙ্গলবন্দ এলাকার বিভিন্ন স্নান ঘাটে হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী পুণ্যার্থীরা ডাব, দুর্বা, বেলপাতা, ফুল ও ফলমূলসহ পূজার বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে পুণ্যস্নানে নামছেন। এসময় প্রতি ঘাটে বসে থাকা পুরোহিতদের কাছে ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’- এই মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদে ¯œান করছেন পূণ্যার্থীরা। স্নান করতে আসা পূণ্যার্থী সুরেশ, দিলীপ, মনা বাবু, কাকলী, কাজলী, মায়া রানী, অঞ্জনা, গীততা রানীসহ অনেকে জানান, ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম মুনি তার পিতার আদেশ পালনে হাতে থাকা কুঠার দিয়ে মাকে হত্যা করলে তার হাতে আটকে যায় কুঠারটি। পরবর্তিতে ভগবান শিবের তপস্যা করে হাতে লেগে থাকা কুঠার নিয়ে কৈলাস থেকে উৎপত্তি হওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ধরে তীর্থ যাত্রা করে লাঙ্গলবন্দ আসেন। এখানে বিশ্রাম নেয়ার এক পর্যায় কুঠারটি হাত থেকে মুক্ত হয়। পরে এই ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করেন তিনি। সেই থেকে এই স্নানের নাম হয় পুণ্য স্নান। তারই ধারাবাহিকতায় পাপ মোচনের লক্ষ্য নিয়ে লাঙ্গলবন্দে পূণ্য স্নান করতে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী স্নান উদযাপন কমিটির সদস্য সুরেষ কুমার সাহা বলেন, “পুণ্যার্থীদের জন্য ২০টি স্নান ঘাট সংস্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ খাবারের জল সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৬টি নলকূপ। কাপড় পরিবর্তনের জন্য বিপুলসংখ্যক কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে । ১৫০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া ব্রহ্মপূত্র নদের কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ৫টি মেডিকেল টিম ও নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস ১০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছেন”।

তিনি আরো জানান, দর্শনার্থীদের সেবা নিশ্চিতে বেসরকারিভাবে ৬০টি সেবা ক্যাম্প ও ৪০০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থকে পুরো ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১০০ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তবে স্নানোৎসব উপলক্ষে লোকজ মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা আরোপ করলেও রাস্তার দুপাশে লোকজ মেলা বন্ধ করা যায়নি।

বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম. এ মুহাইমিন আল জিহান জানান, স্নান উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। স্নান ঘাটগুলো বাধাই কাজসহ কাপড় বদলানোর কক্ষ ও পর্যাপ্ত অস্থায়ী টয়লেটেরও ব্যবস্থা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা পোশাকে তৎপর রয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে সকল কিছু মনিটরিং করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকসহ দেড় হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে ১শ’র অধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল বসানো হয়েছে।

পুণ্যার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে মহাসড়ক ও সড়কে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় তৎপর রয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে