মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মা-স্ত্রীকে আর ডাক্তার দেখানো হলো না

সড়কে প্রাণ গেল স্ত্রী-ছেলেসহ নিজের
দীপঙ্কর অপু, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) থেকে
  ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৬

কথা ছিলো মা-স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে একবারে ত্রাণের টিন নিয়ে ফরিদপুর থেকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার ছত্রকান্দা আসবেন সচিবালয়ের লিফট অপারেটর রাকিবুল ইসলাম মিলন মোল্যা। মিলনের ইচ্ছানুযায়ী মা-স্ত্রীকে আর ডাক্তার দেখানো হলো না।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরের এবলুম রেস্টুরেন্টের সামনে ফরিদপুর যাওয়ার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো মিলন মোল্যাকে (৪২)। সেই সাথে লাশ হলেন স্ত্রী সুমি বেগম (৩৫), বড় ছেলে রুহান (৯) এবং ছোট ছেলে আবু সিনান (৬)। আর মারাত্মক আহত মা সুরাইয়া বেগমকে (৫৫) ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে আছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

নিহতদের লাশ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। বাবা, ভাই, বোন, ভাবিসহ পরিবারের ও আশেপাশের লোকেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় মিলনের একমাত্র বোন রত্না বেগম মূর্ছা যান।

মিলন মোল্যা ও আশেপাশের আরও কয়েকজন ত্রাণের টিন আনার জন্য পিকআপ ঠিক করেছিলেন ফরিদপুর যেতে। মিলনের মা-স্ত্রী সাথে যান ডাক্তার দেখানোর জন্য। এ সুযোগে ছেলে দুটো বায়না ধরে মা-বাবার সাথে যাওয়ার জন্য। আর এ যাওয়াই হয় তাদের অন্তিম যাত্রা।

মিলন মোল্যা ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা তারা মোল্যার ছেলে। বাবা তারা মোল্যা বেঁচে আছেন। ছেলে, ছেলে বৌ আর দুই নাতনিকে হারিয়ে তিনি বাকরুদ্ধ। চার ভাইবোনের মধ্যে মিলন মেজ। বড় ভাই ফরিদ মোল্যা আলফাডাঙ্গা আরিফুজ্জামান পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই হাবিবুর মোল্যার আলফাডাঙ্গায় ফ্লেক্সিলোড, বিকাশের দোকান। একমাত্র বোন রত্না বেগমের বিয়ে হয়ে গেছে।

মিলন ঢাকাতে চাকরি করলেও পরিবার থাকতো বাড়িতে। যৌথ পরিবার ছিলো তাদের। বড় ছেলে রুহান (৯) পাশের আলফাডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির আর ছোট ছেলে আবু সিনান (৬) তাহেরা রাশেদ লিটল এনজেল স্কুলের নার্সারি শ্রেণির ছাত্র ছিলো। চলতি মাসের ৮ তারিখে ঈদের ছুটিতে মিলন বাড়ি আসেন। বাড়ি আসার সময় পরিবারের সবার জন্য ঈদের পোশাক কিনে আনেন। এবারের ঈদে পোশাক কেনাই তার জীবনের শেষ ঈদ শপিং- একথা মানতেই যেন পারছেন না তার পরিবারের সদস্যরা।

প্রতিবেশী মিম আক্তার বলেন, প্রতিবেশী একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে আমরা শোকাচ্ছন্ন, এ শোক সইবার নয়।

বড় ভাবি হাসি বেগম বলেন, ত্রাণের টিন আনার জন্য ফরিদপুর ডিসি অফিসে যাওয়ার কথা ছিলো। এজন্য পিকআপ ভাড়া করা হয়। মা-স্ত্রীকে ফরিদপুরে ডাক্তার দেখানো হবে। এজন্য তারাও সাথে যায়। আবার ছেলে দুটো বায়না করায় তাদেরও সাথে নেয়া হয়। এক সড়ক দুর্ঘটনা সবকিছু কেড়ে নিল।

এ ব্যাপারে শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, নিহত মিলন আর আমি একই গ্রামের বাসিন্দা। ছেলেটি ঢাকায় চাকরি করতো। বাড়িতে এলে দেখা হতো। ভালো ছেলে ছিল। কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে