বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা

তাবলিগের কাজিয়া মিটেছে, ফেব্রুয়ারিতে একসঙ্গে ইজতেমা

যাযাদি রিপোটর্
  ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:১০
গত বছরের বিশ্ব ইতজেমার আখেরি মোনাজাত Ñফাইল ছবি

তাবলিগ জামাতের প্রতিদ্ব›দ্বী দুই পক্ষের বিবাদ মিটে গেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আসছে ফেব্রæয়ারিতে দুই পক্ষ একসঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা করতে সম্মত হয়েছে। দুই পক্ষের ‘মুরুব্বিদের’ নিয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণা আসে। তিনি বলেন, “তাদের বিরোধ মীমাংসা হয়েছে, এখন আর কোনো বিরোধ নেই। ফেব্রæয়ারি মাসে একসঙ্গে ইজতেমা হবে। আগামীকাল ধমর্প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দুই পক্ষের দুজন প্রতিনিধি বসে ইজতেমার তারিখ নিধার্রণ করবেন।” কয়েক লাখ লোকের জমায়েতের কারণে বিশ্ব ইজতেমাকে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মিলন বলা হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হলেও তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের দ্ব›েদ্ব এবার তা স্থগিত হয়ে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের মধ্যে তাবলিগের শুরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেকুল ইসলাম এবং দেওবন্দপন্থিদের মধ্যে শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ধমর্প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, পুলিশের মহাপরিদশর্ক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় দুই পক্ষের ‘মুরুব্বিদের’ কোলাকুলি ও কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। বিরোধ মীমাংসায় সমন্বয়কারীর ভূমিকায় থাকা কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মাজহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে, একবারেই ইজতেমা হবে। তাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা মিটমাট হয়ে গেছে। এখন আর বিরোধ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইজতেমার তারিখ ঠিক করার জন্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদ ও মাওলানা ওয়াসেকুল ইসলাম ধমর্ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দিল্লির মাওলানা সাদ এবার আর ইজতেমায় যোগ দিতে আসছেন না। বৈঠকে সেরকম সিদ্ধান্তই হয়েছে। উপমহাদেশে সুন্নী মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূল কেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি পÐিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শুরা কমিটির উপর। মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর মাওলানা সাদ আমিরের দায়িত্ব নেন এবং একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান তখন নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমথর্করা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান। কিন্তু সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে। নেতৃত্ব নিয়ে দিল্লির মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীদের মধ্যে এই দ্ব›দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে গত বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় বিশ্ব ইজতেমার সময়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসা সাদ কান্ধলভি বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। শেষ পযর্ন্ত ইজতেমায় অংশ না নিয়েই তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়। এরপর দুই পক্ষের কোন্দল চলতে থাকলে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নিধাির্রত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পবর্ গত নিবার্চনের আগে স্থগিত করা হয়। কিন্তু তার মধ্যেই সাদপন্থিরা ডিসেম্বরের শুরুতে পঁাচ দিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দপন্থিরা টঙ্গীর ইতজেমা মাঠ দখল করে পাহারা বসায়। ১ ডিসেম্বর ভোর থেকে সাদের অনুসারী শত শত মানুষ টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি বিস্ফোরোণ্মুখ হয়ে ওঠে। এক পযাের্য় দুই পক্ষের লোকজন বঁাশ ও লাঠিসেঁাটা নিয়ে সংঘষের্ জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে পড়ে প্রাণ যায় সত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধের, দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে দুইপক্ষের অনুসারীদের বের করে দিয়ে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর সরকারের তরফ থেকে কাজিয়া মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হলে সাদের অনুসারীরা নিজামুদ্দিন মারকাজের তত্ত¡াবধানে ইজতেমার আয়োজন, পছন্দমতো বিদেশি মেহমান আনার সুযোগসহ বেশ কিছু শতর্ দেয়। বুধবার বৈঠকে সেসব শতের্র মধ্যে কী কী মানা হয়েছে তা জানা না গেলেও সমঝোতা হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে