শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পাক-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর

বন্দুকের নলের মুখে সাধারণ মানুষ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
আতঙ্কে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের লোকজন

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নাকয়াল সেক্টরের একটি ছোট্ট গ্রাম। এক পাশ জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়। গ্রাম থেকে চারপাশে তাকালে সবুজ অরণ্যের দৃশ্যে মনই ভরে যাবে। কিন্তু নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই আছে ছলচাতুরী। দেখতে সৌন্দর্যের আধার মনে হলেও সেখানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মৃতু্যফাঁদ। এসব নিয়ে গ্রামে বসবাসকারী মানুষগুলো প্রতিনিয়তই দুশ্চিন্তায় থাকে। গ্রামটি থেকে কয়েকশ মিটারের মধ্যেই পাকিস্তান-ভারতের লাইন অব কন্ট্রোলের অবস্থান। চিরবৈরী দুই দেশের সীমান্তবর্তী এই স্থানটি প্রচন্ড মাত্রায় সামরিক বিরোধপূর্ণ।

পাহাড়গুলোর গা ঘেঁষেই আছে সামরিক চেকপোস্ট। গত ৮ আগস্ট সেখানে সর্বশেষ সহিংসতার ঘটনাটি ঘটে। সেই রাতে ওই গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। আনন্দ-উৎসবের মধ্যে হঠাৎ একটি স্নাইপার বুলেটের আঘাতে নিহত হন একজন নারী। নিহতের স্বামী তারেক মোহাম্মদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর চেকপোস্টের দিকে আঙুল তুলে বললেন, 'গুলিটি ওখান থেকেই এসেছে। তারা কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের আনন্দকে শোকে পরিণত করেছে।' এই হত্যাকান্ডের দুই সপ্তাহ পরও শোকে বিমূঢ় তারেক। তার রাগ-ক্ষোভ পাক-ভারত উভয় সেনাবাহিনীর ওপরই। তিনি বলেন, 'এই দুই বাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে আমরা নিষ্পেষিত। আর তাদের বিবাদের দাম চুকাতে হচ্ছে আমাদেরই। তারা দাবি করে, তারা কাশ্মীরের জন্য যুদ্ধ করছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তাদের কেউই এখানকার জনগণকে নিয়ে চিন্তাও করে না।'

লাইন অব কন্ট্রোলের অপর পাশের ৭৪০ কিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে এই একই গল্প। ২০০৩ সালের নভেম্বরে সেখানে অস্ত্রবিরতি চুক্তি হলেও দুই দেশের সেনারা প্রায়ই ভারী অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলি ও মর্টার বর্ষণে মেতে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতায় উভয় পাশেই বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই হামলার জন্য তারা একে অপরকে দায়ী করে আসছে।

নাকয়াল সেক্টরের ওই গ্রামের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার নাম জাভেদ আহমেদ। বিবিসির প্রতিনিধিদের তিনি ভারত নিক্ষিপ্ত মর্টার শেল এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ দেখালেন। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তিনি এগুলো সংগ্রহ করেছেন। সীমান্তবর্তী গোলাগুলিতে তিনি তার চাচাকে হারিয়েছেন। অপর এক ঘটনায় তার আরেক আত্মীয়ও আহত হয়েছেন। একইভাবে দুই বাহিনীর গোলাগুলিতে তাদের গৃহপালিত জন্তু এবং অন্যান্য সম্পদও হারিয়েছেন। বিষণ্ন চিত্তে তিনি বললেন, 'পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর প্রশাসনের কেউ কখনো আমাদের দেখতে আসেনি। গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে আমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টলাইনে বাস করলেও আমাদের কখনোই কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।'

সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শত শত গ্রামবাসী নিরাপত্তার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এভাবে গ্রামের অন্তত ২৬০টি পরিবার স্থানান্তরিত হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা নাকয়াল সেক্টরের বাইরে তাঁবু গেড়ে অবস্থান করছে। তবে সেখানে সরকারি কোনো সহায়তা না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাঁবুতে অবস্থান করা চার বছর বয়সি এক শিশুর মা বলেন, 'বার বার মর্টার শেল হামলার ঘটনায় আমার সন্তানরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে তারা খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। আমি তাদের গ্রামে ফিরিয়ে নিতেও পারছি না।' কথাগুলো বলতে বলতেই গাল বেয়ে অশ্রম্ন ঝরতে থাকে ওই মায়ের। তিনি আরও বলেন, 'এখানে সন্তান বড় করার কোনো পরিবেশ নেই। আমাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানি প্রশাসন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।'

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের অনেক অঞ্চলেই মানুষের এখন এমন মনোভাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের কিছু কঠোর নীতিমালার কারণেই এই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে আছে, এই অঞ্চলে নিরপেক্ষ সাংবাদিক প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা। এ কারণে এখানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। অনেক সাংবাদিক অভিযোগ করেন, পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন সময় হুমকি দেয়া হয়। এমনকি অনেক সময় তাদের হয়রানিও করা হয়। এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিবিসির প্রতিনিধিরাও একইভাবে প্রতিকূলতার শিকার হয়েছেন। অবস্থা পর্যবেক্ষণে বোঝা যাচ্ছে, কাশ্মীর সংঘাতে উভয় পাশের মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিকে কোনো পক্ষই আমলে নিচ্ছে না। আর সাধারণ মানুষের চোখকে আড়াল করতে সেখানে চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70901 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1