শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মসজিদ অক্ষত থাকলেও কি এই রায় হতো?

তিন মুসলমান নারীর মন্তব্য
যাযাদি ডেস্ক
  ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিতর্কে সুপ্রিম কোর্ট শনিবার রায় ঘোষণার পর তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে বিবিসি কথা বলেছে ভারতের তিনটি প্রধান শহরে তিনজন বিশিষ্ট মুসলমান নারীর সঙ্গে। এরা হলেন মুম্বাইয়ে ভারতীয় মুসলমান মহিলা আন্দোলনের কর্ণধার ও সমাজকর্মী নূরজাহান সাফিয়া নিয়াজ, দিলিস্নতে রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট ও অধ্যাপক নাজমা রেহমানি এবং কলকাতায় শিক্ষাবিদ ড. মীরাতুন নাহার।

তারা কেউ সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন, '১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যদি বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার তীব্র দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি না ঘটত, তাহলেও কি আজ সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিতে পারত?' কেউ আবার মনে করছেন, ওই কলঙ্কজনক অধ্যায়কে পেছনে ফেলে ভারতের এখন এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে- আর সেখানে এই রায় অযোধ্যা বিতর্কে একটা 'ক্লোজার' এনে দিতে পারে। কেউ আবার ৯ নভেম্বরকে 'ভারতীয় সংবিধানের জন্য একটি চরম অমর্যাদার মুহূর্ত' হিসেবেই দেখছেন।

অধ্যাপক নাজমা রেহমানি বলেন, 'আমার প্রশ্ন হলো, বাবরি মসজিদই বলুন বা বিতর্কিত কাঠামো- আজও যদি সেটা অক্ষত অবস্থায় ওখানে দাঁড়িয়ে থাকত, তাহলেও কি সুপ্রিম কোর্ট আজকের এই রায় শোনাতে পারত? তা ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইনডিয়া) একটি রিপোর্টকে আদালত সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু সেই রিপোর্টের কি ঠিকমতো বিশ্লেষণ করা হয়েছিল? আমি বলতে চাইছি, ওই রিপোর্টের বক্তব্য অনুযায়ী, আদালত মেনে নিয়েছে মসজিদের নিচে কিছু একটা স্থাপনা ছিল। কিন্তু সেটা কি কোনো মন্দির, বা মন্দির হলেও রামের মন্দির না অন্য কোনো দেবতার- সেটাই বা কে বলল? আসলে প্রশ্নটা তো শুধু এক টুকরা জমির নয়, এখানে ভারতের সামাজিক সম্প্রীতির চেহারা কিংবা ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থানের চিত্রটাও কিন্তু এই মামলার সঙ্গে জড়িত।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার ধারণা যতটা না সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে, তার চেয়েও বেশি দেশের সামাজিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই আদালত এই রায় দিয়েছে। রায়টা দেখে অন্তত সে রকমই মনে হচ্ছে। ভারতের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় এই রায়কে এখন কীভাবে নেবে, সেটা ভেবে আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন। এখন পরিবেশটা খুব সংবেদনশীল, কড়া নিরাপত্তায় সব মুড়ে রাখা আছে বলে পরিস্থিতি হয়তো শান্ত আছে। কিন্তু এভাবে কতদিন থাকবে?'

সমাজকর্মী নূরজাহান সাফিয়া নিয়াজ বলেন, 'অনেকের মতো আমরাও এই রায়কে স্বাগত জানাই। আর এটাই হয়তো প্রত্যাশিত ছিল। বছরের পর বছর ধরে এই ইসু্যটাকে কাজে লাগিয়ে যে সংঘাত আর রক্তপাত হয়েছে, আশা করি এবারে তার অবসান হবে। বাবরি-রামমন্দির পেছনে ফেলে আমাদের এখন আরও কত কিছু নিয়ে ভাবার আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে মনোযোগ দেওয়া দরকার, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর কথা ভাবা দরকার। আমাদের অস্তিত্ব্ব যখন সংকটে, তখন কতদিন আর ওসব নিয়ে পড়ে থাকব? কাজেই আমি খুশি, ইটস ফাইনালি ওভার।'

সাফিয়া জানান, '৬ ডিসেম্বরের কথা যদি বলেন, সেদিন ভারতের মুসলমান সমাজ ও এ দেশের সামাজিক বন্ধনের সঙ্গে যা হয়েছিল, তার মতো দুর্ভাগ্যজনক বোধ হয় কিছুই আর হতে পারে না। কিন্তু সেটা নিয়ে আর কতদিন পড়ে থাকব? একটা কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তো একদিন এই বিতর্কের সমাধান করতেই হতো, তাই না? এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান এনে দিতে পেরেছে বলেই আমরা মনে করি। এই রায়ে হয়তো অনেকেই শেষ পর্যন্ত খুশি হবেন না। কিন্তু কে খুশি আর কে অখুশি হলো, তাতে কী এসে যায়? বিষয়টার একটা যে নিষ্পত্তি হলো, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। হো গয়া আভি- ইটস ওভার!'

ড. মীরাতুন নাহার বলেন, একটা সম্পূর্ণ 'তৈরি করা বিবাদ যে এভাবে দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত গড়াতে দেওয়া হলো, আমি তাতে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। দেশপ্রেমী একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমি ভাবতেই পারি না, যাদেরকে আমরা দেশের ক্ষমতায় বসিয়েছি, তারা কীভাবে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতিকে এভাবে উসকানি দিতে পারেন? শুধুমাত্র নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে তারা ভারতের মহান সংবিধানকেও অপমান করলেন।'

মীরাতুন জানান, 'জমির দখল নিয়ে বিবাদ, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ দুটো পরিবারের মধ্যে হয়, কখনো বা আদালতেও গড়ায়- এটাই চিরকাল জেনে এসেছি। কিন্তু সেই জমির বিবাদকে ঘিরে দেশের দুটো ধর্মীয় সম্প্রদায়কেও যে লড়িয়ে দেওয়া যায় তা কখনো ভাবতেও পারিনি। আর সে কারণেই পুরো বিষয়টা আমার কাছে এতটা কষ্টদায়ক! আজকের রায় নিয়ে আর কী বলব? আদালতে গেলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, তাই সেটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার মানে হয় না।

আমার প্রশ্ন তাই একটাই, এই যে বিবাদ, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হয়েছিল, সেটা কি আপনা থেকেই তৈরি হয়েছিল, না কি সচেতনভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল? সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74984 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1