শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্বংসস্তূপে জন্ম নিচ্ছে নতুন প্রাণ

অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল
যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

নজিরবিহীন দাবানলে কয়েক মাস ধরে ছারখার হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল। কমপক্ষে ৫০ কোটি বন্যপ্রাণী মারা গেছে। কত গাছ আর কত কীট পতঙ্গ যে পুড়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। প্রায় সাড়ে ছয় মিলিয়ন (৬৫ লাখ) হেক্টর ভূমি পুড়েছে। এক হেক্টর মোটামুটি একটা ফুটবল খেলার মাঠের মতো। কিন্তু কিছু এলাকায় ছাই ভেদ করে প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অল্প অল্প করে গজিয়ে উঠতে শুরু করেছে ঘাস ও গাছের চারা। আলোকচিত্রশিল্পী মারি লোয়ে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঞ্চলের কাছে সমুদ্র তীরবর্তী কুলনারা এলাকায় গিয়ে তুলে এনেছেন সেসবের ছবি।

এসব এলাকায় মাটির ওপর জমে থাকা আগুনের ছাইয়ের মধ্যে হেঁটে হেঁটে সবুজ ঘাস এবং পুড়ে যাওয়া গাছের গুঁড়িতে কেবল গজিয়ে ওঠা গোলাপি রঙের কুঁড়ি দেখতে পেয়েছেন। ৭১ বছর বয়সি এই আলোকচিত্রী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার তোলা ছবি পোস্ট করার পর তা হাজার হাজার বার শেয়ার হয়েছে। ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের মাঝেই মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে এই খবর।

এটাই কি প্রকৃতির পুনর্জন্ম?

শখের বসে ছবি তোলেন অবসরে যাওয়া এই সাবেক যানবাহন প্রকৌশলী। লোয়ে মূলত গিয়েছিলেন আগুনে ছারখার হয়ে যাওয়া প্রকৃতির ছবি তুলতে। কুলনারার সড়ক ধরে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ঢুরাগ জাতীয় উদ্যানে থেমেছিলেন। তিনি বলেন, 'এক ধরনের অতিপ্রাকৃত নীরবতার মধ্যে দিয়ে পুড়ে যাওয়া গাছের গুঁড়িগুলোর পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন আমার পায়ের প্রতিটি ধাপের সঙ্গে মাটি থেকে বাতাসে ছাই উড়ে যাচ্ছিল। ভয়াবহ আগুনই পারে এমন বিধ্বংসী ছাপ রেখে যেতে।'

কিন্তু নতুন করে ঘাস আর কুঁড়ি গজাতে দেখে তিনি যেন আশা ফিরে পেলেন। তিনি বলেন, 'এই পুনর্জীবনের চিহ্নই আমরা কামনা করছিলাম। একটি বনের পুনর্জন্মের মুহূর্তের সাক্ষী আমি।' প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরব্যাপী এই ঢুরাগ জাতীয় উদ্যানে রয়েছে এমন কিছু প্রজাতির গাছপালা, যা শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই জন্মায়।

শেফিল্ডস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. কিম্বার্লি সিম্পসন ব্যাখ্যা করেন, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকৃতি কোটি কোটি বছর ধরে এমন দাবানল মোকাবিলা করেছে।

তাই তাদের বিবর্তনের মাধ্যমে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে হয়েছে। ড. সিম্পসন বলেন, পুড়ে যাওয়া গাছ প্রতিকূলতা থেকে দুই ভাবে অভিযোজনের চেষ্টা করে। একটি হলো অঙ্কুরিত হওয়ার মাধ্যমে, যা ছবিগুলোতে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।

ইউক্যালিপটাস-সহ অস্ট্রেলিয়ার কিছু প্রজাতির গাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের গুঁড়ির গভীরে কুঁড়ি লুক্কায়িত থাকে। এটি একধরনের বেঁচে থাকার পদ্ধতি, যাতে গাছের গুঁড়ির বাইরের অংশ পুড়ে গেলেও সেই কুঁড়ি বেঁচে যায়। ঘাস ও অনেক প্রজাতির ঝোপঝাড় শিকড় থাকে মাটির অনেক নিচে লুকানো। আগুন নিভে গেলে তাই তাদের পক্ষে দ্রম্নত কুঁড়ি গজানো সম্ভব হয়।

দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো, আগুন প্রতিরোধী বীজের মাধ্যমে। অনেক গাছের বীজের এই ক্ষমতা রয়েছে। আর ছাই থেকে তারা প্রচুর পরিমাণে গাছের জন্য উপযোগী পুষ্টি উপাদান পায়। সে কারণে পুড়ে যাওয়া এলাকা দ্রম্নত আবার সবুজ হয়ে উঠতে পারে। তবে অঙ্কুরিত হতে এই বীজগুলোর এখন বৃষ্টি দরকার হবে। কিন্তু দাবানল শুরুর পর থেকে কুলনারা অঞ্চলে কোনো বৃষ্টি হয়নি।

আক্রান্ত সব অঞ্চলে কি এটি ঘটবে?

আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর কিছু গাছ দ্রম্নত প্রাণ পেলেও অনেক গাছের প্রচুর সময় লেগে যায়। তবে অস্ট্রেলিয়ার যে ধরনের বিধ্বংসী দাবানল এবার হয়েছে, তাতে যেসব গাছ বিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করেছে, তাদেরও টিকে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে জানান ড. সিম্পসন। তিনি বলেন, আগুন যে তাপমাত্রায় পৌঁছেছে, আর সেই সঙ্গে চলমান খরার কারণে বহু উদ্ভিদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। তিনি মনে করছেন, 'বিভিন্ন প্রজাতির প্রতিরোধী ক্ষমতার ঊর্ধ্বে চলে যেতে পারে বিষয়টি। হয়ত এ কারণে আমরা কিছু প্রজাতির বিলুপ্তি দেখতে পারি।' বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার রেইনফরেস্টের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ এ ধরনের বনাঞ্চলে আগুনের অভিজ্ঞতা নেই। তাই তাদের আগুন প্রতিরোধী ক্ষমতাও কম। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85064 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1