শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক‚টনৈতিক সাফল্যে শেখ হাসিনার সরকার

শেখ হাসিনার ক‚টনৈতিক সাফল্য প্রমাণ করেছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিপথে চলতে দিতে হবে। সম্ভবত এ জন্যই সংলাপের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের পথ খেঁাজার জন্য দেশের প্রধান সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তিনি। বিশ্বের গুরুত্বপূণর্ দেশসমূহ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তবে তার সরকারের প্রতি ভারত-রাশিয়াসহ বিশে^র সব দেশের সমথর্ন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
মিল্টন বিশ্বাস
  ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

শেখ হাসিনা সরকারের এক দশকের (২০০৯-২০১৮) ক‚টনৈতিক সাফল্য প্রমাণ করেছে বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থেকে কেবল নয়, কিন্তু মযার্দা অজের্ন বাংলাদেশ এখন সক্ষম জাতি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন পুনরায় দেখিয়ে দেবে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা জরুরিÑ যা বিশ^দরবারে এ দেশের ভাবমূতিের্ক উজ্জ্বল করে তুলবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিবার্চনের আগে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিকদের তৎপরতা সে সময় শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেন। উপরন্তু বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা বন্ধের ক্ষেত্রে ব্যথর্তার দায়ভার গিয়ে পড়ে বিদেশিদের শলাপরামশের্র ঘটনার ওপর। ওই নিবার্চনের পর ১৩ জানুয়ারি ২৫টি দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি শেখ হাসিনা সরকার সম্পকের্ নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিল। এ পরিস্থিতির মধ্যে ইউরোপীয় পালাের্মন্ট (ইইউ) ১৬ জানুয়ারি বিএনপিকে জামায়াত-হেফাজত ত্যাগ করার পরামশর্ দেয়। সহিংসতা বন্ধের আহŸান জানিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নিযার্তনের নিন্দাও জানানো হয়। একইদিন খালেদা জিয়ার কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছিলাম তারা ভারতের সঙ্গে সুসম্পকর্ রাখতে আগ্রহী। এর আগে ৭ জানুয়ারি সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপের আহŸান জানিয়েছিল মাকির্ন সিনেট। ১২ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে বলে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। তবে ৫ জানুয়ারি নিবার্চন সম্পন্ন হওয়ার পর তাৎক্ষণিক তাদের কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমরা তখন পাইনি। কিন্তু তাদের সেই নেতিবাচক ক‚টনৈতিক তৎপরতার মধ্যে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেরই ইতিবাচক মনোভঙ্গি ছিল। ২০১৮ সালে এসে আওয়ামী লীগ সম্পকের্ মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক মনোভাব পরিষ্কার। উপরন্তু ১ নভেম্বর (২০১৮) থেকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শেখ হাসিনার সংলাপ শুরু হওয়ায় বিশ^বাসী আরো বেশি আস্থা স্থাপন করেছে বতর্মান সরকারের ওপর।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পাবনার রূপপুরে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ঘটনা রাশিয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বারবার। আসলে বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পকর্ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই গভীর। ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক সম্পকর্ স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালের মাচর্ মাসে বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে গিয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ জন্য অতীতে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা পরামশের্র সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে তখন শেখ হাসিনাকে সমথর্ন জানিয়ে মস্কো এক বিবৃতিতে ৫ জানুয়ারির নিবার্চনকে সমথর্ন জানিয়ে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী গঠিত সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহায়তাকারী রাশিয়া সংবিধান সমুন্নত রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সরকার ও বিরোধী জোট উভয়ের প্রতিই আহŸান জানিয়েছিল। তবে সে সময় অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সক্রিয় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আহŸান জানালেও মস্কো ভোট বজের্নর জন্য বিএনপির সমালোচনা করেছিল। দেশের সবর্বৃহৎ ঘোড়াশাল থামার্ল পাওয়ার স্টেশনে তাদের অথার্য়ন রয়েছে। রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় করা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর দুদেশের সম্পকের্র উন্নতির নিদশর্ন। ২০১২ সালে দুদেশের চুক্তি অনুসারে এ দেশে আণবিক পাওয়ার সেক্টরে উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে রাশিয়া। রাষ্ট্রীয় সফরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সেন্ট পিটাসর্বুগের্ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন; ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় মস্কোতে সাক্ষাৎ হয় দুজনের।

মস্কোর আগেই প্রতিবেশী দেশ ভারত দশম সংসদ নিবার্চনকে সমথর্ন জানিয়ে বলেছিল, বাংলাদেশের সংবিধান রক্ষার জন্য এর প্রয়োজন ছিল। ৬ জানুয়ারি ভারত বলেছে, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি নিবার্চন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিপথেই চলতে দিতে হবে। ২০০৮ সালের নিবার্চনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বাংলাদশের সঙ্গে ভারতের ক‚টনৈতিক সম্পকের্র উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। তা ছাড়া নিবার্চনের আগে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, যে দলই বাংলাদেশের সরকারে থাক, ভারত তাদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলতে চায়। নিবার্চন দেখার জন্য পযের্বক্ষক পাঠিয়েছিল ভারত। তবে ভারত যে আমাদের রাজনীতিতে মাতব্বরি করতে চেয়েছে এটা সত্য নয়। বরং পাকিস্তান বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে নাক গলাতে চাইছে সব সময়। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগের ভালো সম্পকর্। একটা প্রচারণা বেশিরভাগ পত্রিকা চালিয়েছিল যে ৫ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া নিবার্চনটা ভারত করিয়েছে আমেরিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, অথার্ৎ হাসিনা সরকার ভারতের কথায় সবকিছু করেন, এককথায় ভারতের দালাল এবং সহসাই দেশটাকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য বানাবে। বেশির ভাগ মানুষ এই প্রচারণাটা খাবে, এরকমই একটি অবস্থা দঁাড়িয়েছিল। কিন্তু সে সময় কোনো পত্রিকা বলেনি যে, গঙ্গার পানিবণ্টন, তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল মীমাংসা, সমুদ্রসীমা সমাধান হবে যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন। ভারতে বাণিজ্য সুবিধা পাবে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকেন। বরং বাস্তবতা হলো সে সময় শেখ হাসিনার বদলে বেগম জিয়া ক্ষমতায় এলে উনি ভারতকে একচেটিয়া ছাড় দিয়ে যেতেন অতীতের মতো, পরিসংখ্যান তাই বলে।

২০১৮ এবং ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভারত ভ্রমণের পর থেকে দুদেশের সম্পকর্ গভীর হয়েছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অথৈর্নতিক সহযোগিতার দুয়ার উন্মুক্ত করায় বেগবান হয়েছে সেই সম্পকর্। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সম্পকর্ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংস্কৃতিক দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য ভারতীয় এলাকার সঙ্গে ভাষাগত মিল রয়েছে এ দেশের। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ট্রানজিট সুবিধা এখনো প্রবতর্ন করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে শিলিগুড়ি করিডর ব্যবহার করছে ভারত; বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চোরাচালান ও আদম পাচার বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে উভয় দেশ। সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়েছে। ফেলানি হত্যাকাÐের বিচার শেষ হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০১৮ পযর্ন্ত এক হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা করেছে। এ জন্য অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে উভয় তরফ রাজি হয়েছে। যদিও ভারতীয় নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, ২৫ শতাংশ বাংলাদেশি ভারতবিদ্বেষী তবু সম্পকের্র অবনতি হয়নি আমাদের সঙ্গে। শেখ হাসিনার ক‚টনৈতিক সাফল্যের অন্যতম দিক ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি এবং সমুদ্রসীমা মামলায় মিয়ানমার ও ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা পেয়ে জয়ী হওয়া। তার আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তিন বিঘা করিডোর নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশিরা তখন তিন বিঘায় যাতায়াতের অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয় ৫০০ মেগাওয়াট। সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এটিও ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসবে দুদেশের সম্পকের্ক অনেক ঘনিষ্ঠ করা হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না ’৭১-এ কিন্তু এই ভারতই আমাদের পাশে ছিল, যার কারণে মাত্র ৯ মাসেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কেউ কেউ বিতকর্ তুলেছিল জনগণ বড় না সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বড়। তা ছাড়া ভারত এ বিষয়ে বলার কে? তবে ভুললে চলবে না বিএনপি-জামায়াতের মদদ আর উসকানিতেই দেশে রাজনৈতিক হানাহানি ও সহিংসতা চলেছে। জনগণকে এত বোকা ভাবার দরকার কি? জনগণ সবই বুঝে, সে তার নিজের যুক্তি দিয়ে বিচার করে সত্যটা জানার চেষ্টা করে। বিএনপি-জামায়াত আপস রফার নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে দশম সংসদ নিবার্চন বজর্ন করেছিল। তাদের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ধিক্কার জানিয়েছিল। এখন ২০১৮ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বিএনপি ঐক্যজোটে শরিক হয়েছে। শেখ হাসিনার উদ্যোগের কারণেই ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পকর্ এখন নিবিড়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি কমর্সূচিতে সাড়ে পঁাচ কোটি পাউন্ডের বেশি আথির্ক সহায়তা দেয় যুক্তরাজ্য। এই দুটি প্রকল্পে তারা আথির্ক সহায়তা দিয়েছে গত ১০ বছরে। বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে বৈদেশিক সহায়তা পায়, তার মধ্যে যুক্তরাজ্য চতুথর্ অবস্থানে আছে। দেশটি ২০১৩-১৪ অথর্বছরে ২৭ কোটি ৪৯ লাখ পাউন্ড আথির্ক সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়া আথির্ক সহায়তার বেশির ভাগই যায় বাংলাদেশের আন্তজাির্তক সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ৩০ ভাগ সহায়তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবতর্ন প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হয়। বাংলাদেশ যে বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। কারণ আমরা জানি, ইউকেএইড বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ জনগণের যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অজের্ন প্রান্তিক ও গরিব মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী চালু করা প্রকল্পে সহযোগিতা অব্যাহত আছে। আমরা দেখতে পাই, ব্রিটিশদের তুলনায় ভারতের অবদান অনেক বেশি। ভারত সিডর-এ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি গ্রাম পুননির্মার্ণ করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে ব্রিটিশ অথার্য়নে পরিচালিত ‘এশিয়া ফাউন্ডেশন’ একটি এনজিও। তাদের অফিস বারিধারা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই কাজ করে বেশি। যেসব কাজ তারা করে, সে সব কাজ থেকে তেমন কোনো আউটপুট নেই। সুতরাং ওখানে টাকা না ঢেলে জনগণের জন্য কোনো কমর্সূচি গ্রহণ করলে সেটা ভালো হয়। বিএনপি, ড. ইউনূস কিংবা জামায়াতের প্ররোচনায় অনেক দেশই সাহায্য বন্ধ করতে পারে ভেবেছিল অনেকেই। তবে সেই আশঙ্কাকে শেখ হাসিনা থোরাই কেয়ার করেছেন। বিশ^ব্যাংকের দিকে চেয়ে না থেকে পদ্মা সেতু নিজস্ব অথার্য়নে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিবার্চনের পূবের্ই আমরা দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র টের পাচ্ছি। এ জন্য যত তাড়াতাড়ি ঐক্যজোটের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে ততই আমাদের দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি যা করেন তার সব কিছুই জনগণের জন্য। এ জন্য এই সরকারের প্রতি জনগণের নীরব সম্মতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ। আসলে জনগণ এবং বিশ^বাসীর সহযোগিতা দ্বিতীয় একাত্তরের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে যাচ্ছে। এ মুহূতের্ বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্ এবং শক্তিশালী সম্পকর্ রয়েছে ভারত-রাশিয়ার। পুনরায় স্মরণ করতে হয়, প্রাচীনকাল থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস একীভূত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম প্রভৃতি এলাকায় এ দেশের আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের কমর্কাÐ পরিচালিত হয়েছিল ভারত থেকেই। আর যুদ্ধে বিজয়ী বাঙালিদের সঙ্গে ভারতীয়দের তখন থেকেই আত্মিক সম্পকর্ সবল হয় এবং অদ্যাবধি তা অটুট রয়েছে। যদিও বিএনপির শাসনামলে সেই সম্পকের্ অবিশ্বাস জন্মেছে একাধিকবার। কারণ বিএনপির ক‚টনৈতিক কেন্দ্র পাকিস্তান ও আরব বিশ্ব। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত-রাশিয়াই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আজকের বন্ধু আমেরিকা, ইইউরা কিন্তু বিরুদ্ধে ছিল। শরণাথীের্দর আশ্রয়, খাওয়া-পরা, অস্ত্র দেয়া সবকিছুর দায় কিন্তু ভারতকেই নিতে হয়েছিল; রাশিয়া সে সময় পাশে ছিল। যেমনটি শেখ হাসিনা সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য করে যাচ্ছে। মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালে ধেয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা প্রশংসিত হয়েছেন বিশ^নেতৃবৃন্দের কাছে। জাতিসংঘের অধিবেশনসমূহে তার বুদ্ধিদীপ্ত ও  প্রাণবন্ত উপস্থিতি এ দেশের ক‚টনৈতিক সাফল্যের অন্যতম কারণ।

শেখ হাসিনার ক‚টনৈতিক সাফল্য প্রমাণ করেছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিপথে চলতে দিতে হবে। সম্ভবত এ জন্যই সংলাপের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের পথ খেঁাজার জন্য দেশের প্রধান সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তিনি। বিশ্বের গুরুত্বপূণর্ দেশসমূহ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তবে তার সরকারের প্রতি ভারত-রাশিয়াসহ বিশে^র সব দেশের সমথর্ন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বেলারুশ, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া ও লাওসসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে যে অভিনন্দন বাতার্ এসেছিল, তার মূলে ছিল শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক ক‚টনৈতিক তৎপরতা। এই তৎপরতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের শাসনামলেও (২০১৪-২০১৮) অব্যাহত থাকে। কারণ ৫ জানুয়ারির নিবার্চনের আগে ক‚টনীতিকদের যে তৎপরতা তা থেকে নিবার্চন পরবতীর্ সময়ে ইউটানর্ নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অভিনন্দনই প্রমাণ করেছিল নতুন সরকার বেশ ভালোভাবেই বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক ক‚টনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এটা শেখ হাসিনা সরকারের অজর্ন, বাংলাদেশের অজর্ন। বাংলাদেশের এই অজর্নকে ধরে রাখতে নতুন প্রজন্মকে জেগে উঠতে হবে। একটি অসা¤প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন এখন পূণর্তা পেয়েছে। ২০১৮ সালের নিবার্চনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে তারই প্রতিফলনকে আরো বেশি সত্য করে তুলবে।

মিল্টন বিশ্বাস: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ৎিরঃবৎসরষঃড়হনরংধিং@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21371 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1