শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধষর্ণ সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে

ইফতেখার আহমেদ টিপু ঢাকা
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সামাজিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, কমর্হীনতা, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, পনোর্ ছবির অবাধ বিক্রি, সবোর্পরি নারীর প্রতি পুরুষের হীন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু ধষের্ণর ঘটনা। ধষের্ণর সঙ্গে জড়িতরা হয়ে পড়ছে অপ্রতিরোধ্য। শিশু থেকে কিশোরী, যুবতী থেকে বৃদ্ধা, স্কুলছাত্রী থেকে পোশাককমীর্, ডাক্তার, আইনজীবী এমনকি ভিখারিনীও রেহাই পাচ্ছে না মানুষরূপী এসব হায়েনাদের হিংস্র থাবা থেকে। ধষর্করা শুধু ধষর্ণ করেই ক্ষান্ত থাকছে না, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঘটাচ্ছে নৃশংস হত্যাকাÐ।

সম্প্রতি ধষের্ণর ভয়াবহতা ও ধষর্ণ পরবতীর্ নিযার্তনের লোমহষর্ক সব ঘটনায় অঁাতকে উঠছে দেশবাসী। ধষর্ণ রুখে দিতে প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার গুরুত্বপূণর্। বতর্মান কল্পনাতীত ধষর্ণ ও ধষর্ণপ্রবণতার বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে এখন বড় ধরনের সামাজিক গবেষণার ব্যাপার হয়ে দঁাড়িয়েছে। মানুষ কেন এতটা বেপরোয়াভাবে যৌনতাড়িত হয়ে পড়ছে, কেনই বা ধষর্ণপ্রবণদের মধ্যে কাজ করছে না কোনো ধরনের ভয়ভীতি, এটা এখন এক বড় প্রশ্ন। ধষর্কদের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছে। অথচ সেসব দৃষ্টান্ত কোনোই কাজে আসছে না। অথার্ৎ দেখা যাচ্ছে, ধষর্ণপ্রবণতা এক অপ্রতিরোধ্য মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, যা শুধু আইন প্রয়োগ করেই দমানো যাবে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় সবর্গ্রাসী রূপ ধারণ করেছে এবং তাই সে মানতে চাইছে না কোনোকিছুইÑ আইন-আদালত, সামাজিক সম্মানবোধ, আত্মসম্ভ্রম। আমরা মনে করি, ধষর্ণ রোধে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি এই প্রবণতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ধষর্ণপ্রবণতার পেছনে দেশের প্রচলিত সমাজব্যবস্থা কতটা দায়ী সেটাও অনুধাবন করার প্রয়োজন পড়েছে।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। মানুষের মধ্যে যে আদিম প্রবৃত্তি, তা দমিয়ে রাখতে হলে শৈশব থেকে বা পরবতীের্ত স্কুল-কলেজে যথাযথ জ্ঞানচচার্, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। মূলত সচেতনতার অভাবেই বাড়ছে ধষের্ণর মতো ঘটনা। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে ধষের্ণর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। এসব পরিবার সবসময়ই নানা ধরনের টানাপড়েনের মধ্যে থাকে। এর সুযোগ নেয় এক ধরনের নরপশুরা। তারা সুযোগ বুঝে এসব পরিবারের শিশুদের নিজের কাছে নেয় এবং অবুঝ শিশুরা তাদের লালসার শিকার হয়। সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে ধষের্ণর শিকার হয়ে বেশিরভাগ নারীই বিচার চাইতে যান না। আবার যেসব নারী বিচার চাইতে যান, তাদের পুলিশ, প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন পযাের্য় যথেষ্ট হেনস্তা হতে হয়। ধষের্ণর অভিযোগগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রমাণ হয় না। এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, ঘটনার তদন্ত প্রভাবিত হওয়া।

বতর্মানে যেভাবে শিশুরা ধষের্ণর শিকার হচ্ছে, তা তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। পরিষদ এ জন্য উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। কেন এমন নৃশংসতা? এ ধরনের খবর আমাদের সবাইকে ব্যথিত করে, কঁাদায়, উদ্বিগ্ন করে। যারা এ জন্য দায়ী, তাদের বিচারের দাবি ধ্বনিত হচ্ছে। শিশুদের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দান ও মৌলিক অধিকার রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাজনৈতিক, পারিবারিক বা অন্য যে কারণেই হোক শিশু খুনের ঘটনা সামাজিক সংহতির অভাব ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের স্মারক। শিশুদের প্রতি নিমর্মতা থামছে না। জাগতিক পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত বলে শিশুদের বলা হয় স্বগের্র দূত। ভবিষ্যতের কাÐারী শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির বিকল্প নেই। এ সমাজ কলুষমুক্ত করতে হলে সব অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে পঙ্কিলতার আবতের্ ঘুরপাক খাবে সমাজ।

আমি মনে করি, ধষর্ণ রোধে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি এই প্রবণতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ধষর্ণপ্রবণতার পেছনে দেশের প্রচলিত রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা কতটা দায়ী সেটাও অনুধাবন করার প্রয়োজন পড়েছে। আথির্ক দুনীির্ততে ছেয়ে গেছে দেশ, এই দুনীির্ত হয়তো মানুষকে উৎসাহী করছে চারিত্রিক অন্যান্য স্খলনেও। অনেকেই বলছেন, সমাজটা যেহেতু ভোগবাদী হয়ে পড়েছে, তাই মানুষ নানা ধরনের ভোগে প্রলুব্ধ হতেই পারে। এই প্রলুব্ধতার পেছনে কোনো ধরনের নৈতিকতা কাজ করছে না।

বাংলাদেশ এক জনবহুল রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের কোথায় কী ঘটছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তার সব খেঁাজ রাখা সম্ভব নয়। জাতিকে নৈতিকতাসমৃদ্ধ করে তুলতে না পারলে ধষের্ণর মতো অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। আমরা জোর দিয়েই বলতে চাই, দেশের অপরাধ বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সমাজবিশারদ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব- সবাইকে একত্র হয়ে ধষর্ণপ্রবণতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সে মোতাবেক এই রোগের নিরাময়ের উপায় বের করতে সচেষ্ট হতে হবে।

স্বীকার করতেই হবে যে, ধষর্করাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ ভ‚মিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এরকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ধষের্ণর মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে।

পরিশেষে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, ইয়া আল্লাহ তুমি এই জঘন্য ও নিকৃষ্ট নর পিশাচদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34990 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1