শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের উন্নয়নে যা করণীয়

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে বাংলাদেশি শ্রমিকেরাই যে কোনো কাজে অগ্রাধিকার পায়। তারা আজ বিশ্ব শ্রমবাজারে দক্ষতা, বিশ্বস্ততা, পরিশ্রমে ও উৎপাদনশীলতায় অন্য যে কোনো দেশের শ্রমিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা সারা বিশ্বব্যাপী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শ্রমবাজারের একটা বড় অংশই আজ বাংলাদেশি শ্রমিদের দখলে। কারিগরি শিক্ষার ফলে আজ বাংলাদেশ থেকে অনেক ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, ড্রাইভার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য অনেক দক্ষ জনশক্তি আজ বিদেশে গিয়ে কাজ করছে। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, সফটওয়্যার ফার্মের বড় বড় পদে আজ বাংলাদেশিরা রয়েছে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে আছে, তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে একটি নতুন মাত্রায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দিক থেকে অনেক উন্নতি করছে। নিম্নে এর কারণগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পোশাকশিল্পে অনেক উন্নতি করছে। বাংলাদেশের পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে- যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি বড় কারণ। একটি সুষম ও সমন্বিত উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে ২০২১ সালের মাধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ঠরংরড়হ-২১ নামে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেন- যা রূপকল্প-২০২১ নামে পরিচিত। এর মূল বিষয়গুলো যেমন- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমন, শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, শিক্ষার হার একশত ভাগে উন্নীতকরণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯ এ উন্নীতকরণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক উন্নীতকরণ, মানবসম্পদ সূচকের উন্নয়ন, শিশুমৃতু্যর হার প্রতি হাজারে ৫৬ কমিয়ে আনা, মাতৃমৃতু্যর হার ৩.৭ নামানো, নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো, যগোপযোগী কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, একশত ভাগ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা, অতি দারিদ্র্যতার হার ২৩ শতাংশে কমিয়ে আনা ইত্যাদি।

ভিশন-২০২১ এর আলোকে সরকারের অর্জিত উলেস্নখযোগ্য সাফল্য নিম্নে তুলে ধরা হলো-

শিক্ষা খাত: সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বতর্মান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে 'শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন' প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে 'শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট'।

স্বাস্থ্যসেবা খাত: শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে 'জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা'। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশুমৃতু্য হার এবং জন্ম হার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উলেস্নখযোগ্য হারে। ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃতু্যর হার ১৪৯ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩-তে; স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি জনশক্তি।

নারী ও শিশু উন্নয়নে: নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে 'জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা'। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও। 'জাতীয় শিশু নীতিমালা' প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুস্থ, এতিম, অসহায় পথশিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ডে।

নারীর ক্ষমতায়নে: নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০%-এর ওপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে: ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বতর্মানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ (১) এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

কৃষি খাতে ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অজনে: কৃষি খাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বতর্মানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ করেছেন ৩টা। তার এই অনন্য অজর্ন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত।

বিদু্যৎ খাতে: বিদু্যৎ খাতে বাংলাদেশের উলেস্নখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদু্যৎ সংযোজন, যার ফলে বিদু্যতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সঙ্গে মাথাপিছু বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদু্যৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লাখ গ্রাহককে। নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি বিদু্যৎকেন্দ্র।

শিল্প ও বাণিজ্য খাতে: বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ওষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যশিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটিশিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ২০১৩-২০১৪ অথর্বছরে বাংলাদেশের আইটিশিল্প ১০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে: হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে এ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বতর্মানে এ কাযর্ক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।

পাকিস্তানি সরকার এ দেশকে সবসময় দমিয়েই রাখতে চেয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কখনও যে স্বাধীন বাংলাদেশ নামের আরেকটি রাষ্ট্রের জন্ম হবে তা বোধ হয় তাদের কখনও কল্পনাতেও ছিল না। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাব, ছয়দফা আন্দোলন, তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থান এবং তারপরই বাঙালি জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জন্মলাভ করে; স্বাধীন হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয় নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বিশ্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশের এই উন্নয়ন বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের কাছে ঈর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন খউঈ (খবধংঃ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঈড়ঁহঃৎু) থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগুচ্ছে। এ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এখন বেড়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের সিংহভাগেরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন, কারিগরি শিক্ষা প্রদান ও যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করেছেন। এসব প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে এসব শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে থেকে অনেক দক্ষ জনশক্তি ও উদ্যোক্তা বেরিয়ে এসেছে। সরকার এসব উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এসব দক্ষ জনশক্তির অনেকেই এখন সরকারের সহায়তার বিদেশে কাজ করছে। শেখ হাসিনা সরকার, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বিশাল জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করেছে। এই মানবসম্পদ এখন বিদেশে গিয়ে কাজ করে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে। দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে বাংলাদেশি শ্রমিকেরাই যে কোনো কাজে অগ্রাধিকার পায়। তারা আজ বিশ্ব শ্রমবাজারে দক্ষতা, বিশ্বস্ততা, পরিশ্রমে ও উৎপাদনশীলতায় অন্য যে কোনো দেশের শ্রমিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা সারা বিশ্বব্যাপী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শ্রমবাজারের একটা বড় অংশই আজ বাংলাদেশি শ্রমিদের দখলে। কারিগরি শিক্ষার ফলে আজ বাংলাদেশ থেকে অনেক ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, ড্রাইভার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারসহ অন্যান্য অনেক দক্ষ জনশক্তি আজ বিদেশে গিয়ে কাজ করছে। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, সফটওয়্যার ফার্মের বড় বড় পদে আজ বাংলাদেশিরা রয়েছে।

\হবিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স, দেশের দক্ষ পোশাক শ্রমিকদের আয় করা রেমিট্যান্স, দেশের জনশক্তির কর্মদক্ষতা পূর্বের তুলনায় আরও বেড়ে যাওয়ায় আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। বাংলাদেশে এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের কাছে ঈর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এই অর্জিত উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে দেশে কারিগরি শিক্ষার আরও প্রসার ঘটাতে হবে। এ দেশের পোশাক শিল্পের সুনাম সারাবিশ্ব জোড়া। পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা যাতে সঠিক মজুরি পায়, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং তাদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে এ খাতে বাংলাদেশ সরকার আরও উন্নয়ন করতে সক্ষম হবে। দেশের বেকার, শিক্ষিথ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে। তাদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে, তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে তাদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। দেশের জনগণকে আরও পরিশ্রমী হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরও উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

বিগত ১০ বছরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন ব্যবস্থায় দেশ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১, ১০০ ুবধৎ ফধঃধ ঢ়ষধহ প্রভৃতি বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি আন্তর্জাতিক মহলে সুনাম অর্জন করেছে। তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বা বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে টঘ, ঊট প্রভৃতি সংস্থা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ মহাকাশে ঝধঃঃবষরঃব নিক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশ ঝঁনসধৎরহব ক্রয় করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর ভাষায় 'কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি আজ নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে উঠছে। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।'' বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কারণ বিশ্লেষণ করলে নিম্নরূপ বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১, শতবর্ষীয় ডেল্টা পস্ন্যান, সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা প্রভৃতি সামনে রেখে বর্তমান সরকার তাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করছে। এতে নির্দিষ্ট সময়েই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে- যা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ তার পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে বহির্বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দূর করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দেশের অর্থনীতি বিকশিত করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উন্নতির জন্য সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ঊচত স্থাপন, বিশেষ বাণিজ্য অঞ্চল স্থাপন, বৈদেশিক বিনিয়োগ প্যাকেজ, তেল-গ্যাস-বিদু্যৎ সুবিধা, শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ, খধনড়ৎ টহরড়হ প্রতিষ্ঠা, ঙহব ংঃড়ঢ় ংবৎারপব পবহঃৎব প্রতিষ্ঠা, কর অবকাশ প্রভৃতি। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছে এবং দেশের ঋঙও (ঋড়ৎবরমহ উরৎবপঃ ওহাবংঃসবহঃ) বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন বিশেষায়িত শিল্প অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে। নতুন নতুন শিল্প যেমন- ওঞ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য ঐরঃবপয ঢ়ধৎশ তৈরি করা হয়েছে। দেশে ঋৎববষধহপবৎ- দের জন্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যোগাযোগ খাতে উন্নয়নের জন্য দেশে পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, নৌবন্দর গড়ে উঠেছে। দুই লেনের রাস্তাকে সম্প্রসারিত করে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে উঠছে পদ্মা সেতু- যা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এ ছাড়া কর্ণফুলী টানেল, গজঞ- মেট্রোরেল, পায়রা বন্দর প্রভৃতি স্থাপন করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের জন্য ঝঁনসধৎরহব পধনষব এর সংযোগ নেয়া হয়েছে। মহাশূন্যে ইধহমধনধহফযঁ ঝধঃঃবষরঃব-১ প্রেরণ করা হয়েছে। উচ্চ গতির ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে দেশে ওঞ ওহফঁংঃৎু বিকশিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বে প্রচুর দক্ষ ও অদক্ষ লোক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের পাঠানো জবসরঃধহপব এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার জবংবৎাব বেড়ে ৩২ বিলিয়ন (২০১৮) ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। সরকার তাদের উন্নয়নে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, ঝশরষষ পবহঃৎব, ইওঞঊঈঐ, ইগঊঞ প্রভৃতি সংস্থায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নতি অর্থাৎ এউচ প্রবৃদ্ধি ৭ মাত্রা অতিক্রম করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রাকে ধরে রাখতে হবে। বহির্বিশ্বে দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি করে অর্থাৎ দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে।

\হপোশাকশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবসম্মত শিল্পনীতি গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে দেশে ঋউও বাড়াতে হবে। শিল্পকারখানা ও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দেশে বর্তমানে বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্র বাড়াতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। পদ্মা ব্রিজের পর দেশে ২য় পদ্মা সেতুর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে ২এ-৩এ-৪এ নেটওয়ার্ক বিদ্যমান। ভবিষ্যতে তা ঁঢ়মৎধফব করে ৫এ হবঃড়িৎশ স্থাপন করতে হবে। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই দেশ উন্নত দেশ হিসেবে পরিণত হবে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<44622 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1