শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানব পাচার রোধে অগ্রগতি নেই

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ২৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

মানব পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যার নাম। বিশ্বের গরিব দেশগুলোই এ সমস্যার নিত্যকার শিকার। বাংলাদেশের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের প্রতি ১৭ জনের একজন এখন বিদেশে কর্মরত। বিদেশের মাটিতে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ায় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। আর এ ব্যাপারে জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান থাকলেও আদম ব্যাপারী নামের প্রতারকদের প্রতারণা অনেক বিয়োগান্ত ঘটনার জন্ম দিয়ে চলেছে। কিছুতেই থামছে না মানব পাচারের মতো জঘন্য অপতৎপরতা। সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা যায়, মানব পাচার রোধে সরকারের প্রচেষ্টা উলেস্নখ করার মতো হলেও পাচার রোধে অগ্রগতি নেই। যে কারণে টানা তৃতীয়বারও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নজরদারির তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ধাপের নজরদারিতে বাংলাদেশের নাম থাকলেও মার্কিন এ প্রতিবেদন অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। .

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ, পাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনা, শিশু পাচারের অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং রোহিঙ্গা পাচারের অভিযোগে তদন্ত অব্যাহত রাখা। তবে ২০১৮ সালে মানব পাচারবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের প্রচেষ্টা ওই বছরের তুলনায় জোরদার হতে দেখা যায়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক সময় পাচারের শিকার হয়ে এ দেশের শত শত শিশু মধ্যপ্রাচ্যে উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় জকি হতে বাধ্য হয়েছে। এখনো ইউরোপে কর্মসংস্থানের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় প্রাণ হারাচ্ছেন জাহাজ বা নৌকাডুবিতে। চলতি বছরের মে মাসেও তিউনিসীয় উপকূলে ইতালিতে পাচারের সময় নৌকাডুবিতে মারা গেছেন ৩৯ বাংলাদেশি। উন্নত জীবনের লোভে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। পাচারকারীদের পালস্নায় পড়ে থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে পণবন্দি হয়ে জীবনদান কিংবা ক্রীতদাসের জীবন বরণ করার ঘটনাও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সুতরাং ভয়াবহ এ অবস্থার অবসানই কাম্য।

উলেস্নখ্য যে, এর আগে জানা গিয়েছিল, মানব পাচারকারী আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশি চক্রের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। যেহেতু প্রতিবছর সাত লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমায়, তাদের প্রায় সবাই মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা বলাই বাহুল্য। বিশ্লেষকরা মানব পাচার চক্রকে চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার তাগিদ দিলেও সরকার এ ব্যাপারে ব্যর্থই বলা চলে। মানব পাচারকারী চক্রকে শনাক্ত এবং তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারার ব্যর্থতার দায় স্বাভাবিকভাবেই সরকারের কাঁধে বর্তায়।

স্মর্তব্য যে, কাজের সন্ধানে কিংবা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে যেতে হয় দেশ থেকে দেশান্তরে। কিন্তু এই যাত্রাপথ খুব মসৃণ নয়। নানা কায়দায়, নানারূপে বিভিন্ন প্রকরণ ও ছদ্মাবরণে মানব পাচার হয়েই চলেছে এবং তা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিব্যাপ্ত। এমনটা হচ্ছে মূলত কর্মসংস্থানের অভাব বা বেকার সমস্যা থেকেই। জীবিকার জন্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বাইরে যেতে চায়। এই যে মানুষ পাচার হয়ে যাচ্ছে অজানার পথে, অচেনা জগতে, ভাগ্য তাদের পরিণত হচ্ছে দুর্ভাগ্যে। বর্তমানে মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে মানব পাচার চলছে নানা পথ ও পদ্ধতিতে। ইউনিসেফ এবং মার্কিন মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেও বাংলাদেশকে মানব পাচারের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছিল এর আগে। এবার মার্কিন প্রতিবেদনেও উঠে এলো বিষয়টি, যা পরিতাপের।

সর্বোপরি বলতে চাই, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা উত্তম। যেহেতু জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে, সচ্ছল জীবনযাপনের লক্ষ্যে মানুষকে দেশান্তরী হতে হচ্ছে, সেহেতু তাদের গমনাগমন যাতে নিরাপদ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। মানব পাচারের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজনে মার্কিন প্রতিবেদনের পরামর্শগুলোও আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানব পাচার রোধে আরও কঠোর হবে এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<54803 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1