বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে থাকে। গুণগত ও উন্নত শিক্ষাব্যবস্থাই কেবল পারে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে, আলোকিত করতে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বছর ব্যবধানে সারা দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১ শতাংশ। সর্বশেষ হিসাব আনুযায়ী, দেশে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। যেখানে ২০১৮ সালে গড় সাক্ষরতার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। 'আন্তর্জাতিক সাক্ষরতার দিবস-২০১৯' (৮ সেপ্টেম্বর) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এসব তথ্য তুলে ধরবেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের হিসাবে দেশে বর্তমানে ৫০ থেকে ৬৭ বছর পর্যন্ত সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৭ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। গড় সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছর গড় সাক্ষরতার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে সারা দেশে এখানো ২৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ নিরক্ষরতার অন্ধকারে রয়েছেন।
আমরা জানি, উন্নত দেশে সাক্ষরতার হার শতভাগ। এমনকি শ্রীলংকায় সাক্ষরতার হার ৯৮ ভাগ। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বছরে এক শতাংশ সাক্ষরতার হার বাড়া বড় ধরনের ইতিবাচক ঘটনা নয়। এই হার আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার হারও বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জন নিয়ে আমাদের আত্মতৃপ্তির কমতি নেই। অবশ্য আমাদের অর্জনও এতে কম নয়। শিক্ষা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস আজকাল আমাদের শিক্ষা প্রশাসনে একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মূল কাজ- লেখাপড়া ফেলে ছাত্র রাজনীতির ছত্রছায়ায় নানা প্রকার সন্ত্রাসে লিপ্ত রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে শিক্ষা প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরীক্ষায় নকলপ্রবণতা শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটা মহামারীর রূপ ধারণ করেছিল। গত দু'বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক ও কার্যকর উদ্যোগের ফলে এ প্রবণতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পরীক্ষায় নকলপ্রবণতা অনেক কমে যাবে। আমরা চাই কেবল সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি নয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার এবং শিক্ষার সামগ্রিক বিকাশ। জাতিকে আলোকিত করতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
অবশ্য শিক্ষার প্রসারে ও সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বই ছাপানো, প্রশিক্ষণ গাইড তৈরি ও নিরক্ষর ব্যক্তিদের শনাক্তে জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সেকেন্ড চান্স হিসেবে ১০ লাখ শিশুকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেখানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালে পাইলটিং হিসেবে ৬ উপজেলায় ১ লাখ শিশুকে এর আওতায় আনা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ২৫০ উপজেলা ও ১৫টি শহরে পর্যায়ক্রমে আরও ৯ লাখ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। শিক্ষা বিষয়ে সরকারের নানা ইতিবাচক উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় দেশের মানুষ শতভাগ স্বাক্ষর হোক, দেশব্যাপী দ্রম্নত শিক্ষার প্রসার ঘটুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।