শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে
নতুনধারা
  ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত দেশ। বছরের নানান সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে উপকূলীয় জেলাগুলোতে। আবার এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে, বিশ্বের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেও বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই এই অবস্থা দৃশ্যমান। সিডর, আইলার মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় 'সিডর' এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় 'আইলা'র আঘাতের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে উপকূলবাসীকে। এরপর ফণীসহ নানান নামের ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে বাংলাদেশকে। আর মৌসুমী দুর্যোগ বন্যা তো রয়েছেই। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে শনিবার রাত ৯টায় প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে এবং রাত ৩টার দিকে বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল।

গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল'-এর আঘাতে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে ১০ জেলায় ১৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোতে উপড়ে গেছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণে কোনো কোনো এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত, মাছের ঘের। অনেক এলাকায় পোল ভেঙে বিদু্যৎ সরবরাহ ব্যবস্থা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। গাছ ভেঙে পড়ে অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের পর আক্রান্ত এলাকায় পুলিশ, বিজিবি,র্ যাব ও সেনাবাহিনী দ্রম্নততার সঙ্গে উদ্ধার কাজ শুরু করায় উপদ্রম্নত এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসার পর সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের কাছ দিয়ে এ ঝড় পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে। তারপর রোববার ভোর ৫টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছায়। বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে বুলবুল পরিণত হয় গভীর স্থল নিম্নচাপে। সরকারি হিসাবমতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে চার থেকে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য জেলা থেকেও ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এসেছে। সুন্দরবন প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে বরাবরের মতো এবারও বুলবুল-কে দুর্বল করে দিয়েছে, যে কারণে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

এটা ঠিক যে, আগে থেকে তথ্য পাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল' মোকাবিলার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হয় সরকার। ছুটি বাতিল করা হয় কর্মকর্তাদের। ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে এবং এলাকার মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও উলেস্নখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্ঘুম রাত কাটান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা এবং এর আগে ফণীসহ আরও কিছু ঘূর্ণিঝড়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়া থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা সক্ষমতায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। একটা সময় ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই ছিল ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানি। কিন্তু সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। আর তাই বুলবুলের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য স্বস্তিকর। তবে এই ক্ষতিকে যথাযথভাবে আমলে নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাঁধ মেরামতসহ ঘরবাড়ি হারানোদের পুনর্বাসনের যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এবার খুলনা অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে ঘূর্ণিঝড় চলাকালে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে নিজেদের বাড়িঘরে অবস্থান করেছেন। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এ অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রের অপ্রতুলতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। ফলে দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ জরুরি বলেও প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি বলতে চাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার প্রাণসংহারী, ভয়াবহ এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়েও তা মোকাবিলা করে আসছে। সরকারও যথেষ্ট তৎপর যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায়। এটা ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সময় লাগে। এজন্য আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নত ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75041 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1