বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার সাজা বেড়ে ১০ বছর

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় আপিলের রায়
যাযাদি রিপোটর্
  ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
খালেদা জিয়া Ñফাইল ছবি

বিদেশ থেকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা পঁাচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদÐ দিয়েছে হাইকোটর্।

খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির আপিল এবং দুদকের একটি রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোটর্ বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেয়।

এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে জজ আদালতে পঁাচ বছরের কারাদÐপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের কারাদÐপ্রাপ্ত মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ হাইকোটের্ আপিল করে খালাস চেয়েছিলেন।

অন্যদিকে মামলাকারী ও তদন্তকারী সংস্থা দুনীির্ত দমন কমিশন খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ বাড়াতে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করেছিল, যার ওপর রুল দিয়েছিল হাইকোটের্।

নিম্ন আদালতের রায়ের আট মাসের মাথায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় হাইকোটের্র সিদ্ধান্ত জানাতে এজলাসে এসে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, তিনটি আপিল খারিজ করে দেয়া হলো। খালেদা জিয়ার সাজা বাড়াতে যে রিভিশন আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করেছিল, তা যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করা হলো এবং খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদÐ দেয়া হলো।

খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর ক্ষেত্রে হাইকোটর্ কোন বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে, তা এই সংক্ষিপ্ত রায়ে আসেনি। তবে অ্যাটনির্ জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া ছিলেন এ মামলার মুখ্য আসামি। অন্য আসামিদের যেখানে ১০ বছরের সাজা হয়েছে, মুখ্য আসামি তার চেয়ে কম সাজা পেতে পারেন না। এ কারণে হাইকোটের্র রায়ে সব আসামির সাজা সমান করা হয়েছে বলে তিনি অনুমান করছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটনির্ জেনারেল মাহবুবে আলমের পাশাপাশি দুদকের

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে আসামি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কেউ আদালতে যাননি।

রায়ের পর খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেগম জিয়া ছিলেন এই মামলার মুখ্য আসামি। সেই গ্রাউন্ডে তার সাজা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। ফলে মামলায় সব আসামির সাজাই ১০ বছর হলো।’

এক দশক পর রায়

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের এই মামলা দায়ের করা হয়ে ২০০৮ সালে, দেশে তখন জরুরি অবস্থা।

দীঘর্ বিচার প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছর ৮ ফেব্রæয়ারি পুরান ঢাকার বকশীবাজারে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাস থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক আখতারুজ্জামান। খালেদা জিয়াকে ‘ক্ষমতায় থেকে অথর্ আত্মসাতের মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ কারণে দোষী সাব্যস্ত করে পঁাচ বছরের সশ্রম কারাদÐ দেন তিনি।

মামলার বাকি পঁাচ আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে দেয়া হয় ১০ বছর করে সশ্রম কারাদÐ।

সেই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন বিচারক।

ওই রায়ের পরপরই খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় তিনিই ছিলেন পরিত্যক্ত ওই কারাগারের একমাত্র বন্দি। পরে হাইকোটের্র আদেশে ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানে তিনি কারা তত্ত¡াবধানে চিকিৎসাধীন।

বাকি আসামিদের মধ্যে তারেক মুদ্রা পাচারের এক মামলায় সাত বছর এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন সাজার রায় মাথায় নিয়ে গত ১০ বছর ধরে পালিয়ে আছেন দেশের বাইরে। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানও পলাতক। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন জামিনে থাকলেও হাইকোটের্র রায়ের পর তা বাতিল হয়ে গেছে।

আপিল ও রিভিশন

জজ আদালতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার পঁাচ বছর সাজার রায় আসে ফৌজদারি দÐবিধির ৪০৯ ধারায় ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ কারণে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তাহার সরকারি কমর্চারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার, বণিক, আড়তদার, দালাল, অ্যাটনির্ বা প্রতিভ‚ হিসাবে তাহার ব্যবসায় ব্যাপদেশে যে কোনো প্রকারে কোনো সম্পত্তি বা কোনো সম্পত্তির ওপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হইয়া সম্পত্তি সম্পকের্ অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদÐে বা দশ বছর পযর্ন্ত কারাদÐে দÐিত হইবে এবং তদুপরি অথর্দÐে দÐিত হইবে।’

পূণার্ঙ্গ রায়ে নিম্ন আদালত বলে, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অথৈর্নতিক অপরাধ করেছেন। বাকি পঁাচ আসামিকে এই ধারার সবোর্চ্চ সাজা দিলেও প্রধান আসামিকে কম দÐ দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে রায়ের দিন বিচারক বলেন, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও বয়স ও সামাজিক মযার্দার কথা বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে পঁাচ বছরের কারাদÐ দেয়া হয়েছে। ওই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর ২০ ফেব্রæয়ারি হাইকোটের্ আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ২২ ফেব্রæয়ারি তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে খালেদার অথর্দÐ স্থগিত করে আদালত।

আর দুনীির্ত দমন কমিশন খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ বাড়াতে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করে গত ২৫ মাচর্। দুদকের যুক্তি ছিল, আদালত মুখ্য আসামিকে পঁাচ বছরের সাজা দিয়ে সহযোগী আসামিদের দিয়েছে ১০ বছরের সাজা। এটা সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য। সেই আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার ?শুনানি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ ২৮ মাচর্ রুল জারি করে। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুনীির্ত মামলায় খালেদা জিয়ার পঁাচ বছরের সাজা কেন বাড়ানো হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। তবে আদালত বলে দেয়, রুলের ওপর শুনানি হবে খালেদা জিয়ার আপিলের সঙ্গে। গত ১২ জুলাই এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হওয়ার পর ২৮ কাযির্দবসের মধ্যে ২৬ কাযির্দবস খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর শুনানি ও যুক্তিতকর্ উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা।

এরপর গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবী তাদের যুক্তিতকর্ শেষ করেন। শুনানিতে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চাওয়া হয় দুদকের পক্ষ থেকে। আর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজা বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেয়। এর মধ্যেই গত ২২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলার অথের্র উৎসের বিষয়টি স্পষ্ট করতে অতিরিক্ত সাক্ষ্য চেয়ে আবেদন করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা আপিল বিভাগেও যান। সেই সঙ্গে এ মামলার আপিল নিষ্পত্তির সময় চেয়ে সবোর্চ্চ আদালতে আবেদন করেন।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সোমবার সময়ের আবেদন খারিজ করে দিলে আগের নিদের্শনা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট দুনীির্ত মামলার আপিল শুনানি শেষ করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। এরপর হাইকোটর্ সোমবারই অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে শুনানির সমাপ্তি টানে এবং রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন রাখে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20208 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1