দলীয় পরিচয় বহাল রেখে জোটবদ্ধ কোনো দলের প্রতীকে ভোট করতে পারবেন না অনিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের প্রাথীর্। এ ধরনের ক্ষেত্রে এ সব দলের কাউকে ভোট করতে হলে দলীয় পরিচয় বাদ দিয়ে আসতে হবে। যে দলের প্রতীকে ভোট করতে আগ্রহী, সেই দল থেকেই মনোনয়ন নিতে হবে প্রাথীের্ক। নিবাির্চত হওয়ার পর প্রতীক নেয়া দলের সংসদ সদস্য হিসেবেই তাকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। গণপ্রতিনিধত্ব আদেশ (আরপিও) পযাের্লাচনা ও নিবার্চন কমিশন (ইসি) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ২০ ধারা অনুযায়ী, জোটবদ্ধ কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিজস্ব প্রতীক ছাড়াও ওই জোটভুক্ত অন্য কোনো দলের প্রতীকে ভোট করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে কমিশনকে তা জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতীক নেয়ার জন্য অনাপত্তি থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট দলেরও। তবে, কোেনা দল জোটভুক্ত হলেও কমিশনে তার নিবন্ধন না থাকলে তাদের দলীয় পরিচয় ঠিক রেখে অন্য দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিবার্চন কমিশনের যুগ্ম-সচিব পযাের্য়র এক কমর্কতার্ বলেন, কমিশনের হিসাব হচ্ছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে। অনিবন্ধিত কোনো দল কার সঙ্গে জোট করলো কিনা, সেটা কমিশনের দেখার বিষয় নয়।
এই কমর্কতার্ জানান, কমিশন জোটবদ্ধ নিবার্চনের তথ্য চেয়ে কেবল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তথ্য দিলে ইসির কিছুই করণীয় নেই। তাদের তথ্য কমিশন বিবেচনায় নেবে না বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর জোটবদ্ধ হয়ে নিজেদের প্রতীকের বাইরে কোনো প্রতীকে ভোট করতে চাইলে তার তথ্য চেয়ে নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে ইসি। আরপিও অনুযায়ী তফসিলের তিনদিনের মধ্যে এই তথ্য কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, কমিশন সোমবার নিবার্চনের তফসিল পুনঃনিধার্রণ করার ফলে দলগুলো নতুন করে আরও তিনদিন সময় হাতে পেয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই সময় শেষ হবে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় চিঠি দেয়ার পরপরই নিজ দলের বাইরে জোটভুক্ত অন্য দলের প্রতীকে নিবার্চন করতে আগ্রহী দলগুলো কমিশনে তাদের তথ্য জমা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি দল তাদের প্রতীকে কোনো কোনো দল ভোট করবে, তার তালিকাও ইসিতে জমা দিয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ জাসদ (বাদল-আম্বিয়া), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (রেজাউর রশীদ), গণআজাদী লীগ ও গণতান্ত্রিক মজদুর পাটির্সহ জোটভুক্ত কিন্তু নিবন্ধিত নয়, এমন কয়েকটি রাজনৈতিক দলও তাদের তথ্য কমিশনে জমা দিয়েছে। চিঠিতে তার নিবন্ধন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে জোটবদ্ধ হিসেবে দলীয় পরিচয় অক্ষুণœ রেখে জোটের কোনো দলের প্রতীকে ভোট করতে চায়, তা জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। জানা গেছে, কমিশন এই চিঠিগুলো গ্রহণ করলেও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এগুলো বিবেচনায় নেবে না।
কমিশনের কমর্কতার্রা জানান, আগে কোনো দলের প্রাথীর্ হতে হলে ওই দলের সঙ্গে অন্তত তিন বছর সম্পৃক্ত থাকার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, বিদ্যমান আইনে সেটা নেই। ফলে এখন কেউ বা কোনো দলের সদস্য চাইলে অন্য দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার মনোনয়ন নিয়ে নিবার্চনে প্রাথীর্ হতে পারবে। অথার্ৎ ওই ব্যক্তি ওই দলে যোগ দিয়েছেন এবং তাদের হয়ে নিবার্চন করছে বলে বুঝে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আগে যে দলের পরিচয়ে পরিচিত হোক না কেন, যে দলের হয়ে লড়ছেন, তিনি সেই দলের প্রাথীর্ হিসেবেই পরিচিত হবেন। ওই ব্যক্তি নিবার্চনে জয়ী হলেও সংসদে নতুন দলের এমপি হিসেবে গণ্য হবেন।
এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আগেই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নিবন্ধন নেই, এমন কোনো দলের সদস্য যে কোনো নিবন্ধিত দলের প্রাথীর্ হতে পারবেন। তিনি যে দলের প্রাথীর্ হবেন, নিবাির্চত হলে সেই দলেরই এমপি হবেন।’
উল্লেখ্য, জোটভুক্ত নিবন্ধিত কোনো দল ইসির পূবার্নুমতি নিয়ে তার পছন্দমতো কোনো দলের প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করলে নিবাির্চত হওয়ার পরও নিজ দলের এমপি হিসেবে পরিচিত হবে।
জানতে চাইলে ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘আমাদের দল নিবন্ধিত নয়। তবে, দলীয় পরিচয় ঠিক রেখে নৌকা প্রতীকে ভোট করতে চাই, এমনটি জানিয়ে কমিশনে চিঠি দিয়েছি। যদিও বিষয়টি কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়, তবু আমরা মনে করি নৌকা প্রতীকে ভোট করার সুযোগ আমরা পাবো।’
এই প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘অনিবন্ধিত দলের কেউ ভোট করতে চাইলে দুটি পথ আছে। একটি হলোÑ নিজের দল ছেড়ে যাদের নিবন্ধন রয়েছে, সেখানে যোগ দিয়ে মনোনয়ন নেয়া, অন্যটি হলো স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে ভোট করা।’
ইসি সূত্র জানায়, জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলের মধ্যে অধিকাংশই নিজস্ব প্রতীকের পরিবতের্ জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে কমিশনে চিঠি দিয়েছে। বতর্মানে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। নিবন্ধিত এই ৩৯টি দলের মধ্যে ২৩টি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটে রয়েছে। বাকি ১৬টি দল এখন পযর্ন্ত দুই জোটের বাইরে রয়েছে। দুই জোটে থাকা ২৩টি দলের মধ্যে মাত্র চারটি দল এখন পযর্ন্ত নিজস্ব দলীয় প্রতীকে নিবার্চন করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। দল চারটি হলোÑ আওয়ামী লীগ (নৌকা), বিএনপি (ধানের শীষ), জাতীয় পাটির্ (লাঙ্গল), গণফোরাম (উদীয়মান সূযর্)। বাকি একুশটি দল নিজেদের দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি দুই জোটের প্রতীকে নিবার্চন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ জোটের বাইরে থাকা ১৬টি দল নিজস্ব প্রতীক নিয়েই নিবার্চন করতে চায় বলেও তিনি জানান।