শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন

হুশিয়ারিতে হুঁশ নেই তৃণমূল বিএনপির

কিছু স্থানে দলের সিদ্ধান্ত স্থানীয় নেতারা মেনে নিলেও অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী
হাসান মোলস্না
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

জাতীয় নির্বাচন ব্যাপক বিপর্যয়ের পর দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো ধরনের নির্বাচনে না যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে যাতে দলের কোনো নেতাকর্মী অংশ না নেয় তার কঠোর বার্তাও দেয়া হয়েছে তৃণমূলে। কিছু স্থানে দলের সিদ্ধান্ত স্থানীয় নেতারা মেনে নিলেও অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই তৃণমূলের নেতাদের নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে দলের সিনিয়র নেতারা নির্বাচন বিষয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের আগ্রহ না দেখানোর নির্দেশ দেন। সর্বশেষ গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের প্রাথমিক সদস্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত কেউই উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচনের

প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। তাতে কাজ না হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

বিএনপি সূত্র মতে, স্থানীয় পর্যায়ে জরিপের মাধ্যমে বিএনপির কাছে তথ্য আছে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কারণ ক্ষমতাসীন দলেই একাধিক প্রার্থী আছেন। পাশাপাশি মহাজোটের শরিক দলগুলোও ছাড় দেবে না। এ জন্য বেশি শক্তিশালী প্রার্থীরা পেশিশক্তি দেখাবেন ও প্রশাসনের সুবিধা পাবেন। সঙ্গত কারণে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। বিএনপি অংশ নিলে নতুন করে তুনমূলের নেতাকর্মীরা মামলা-হামলার শিকার হবেন। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন বর্জনই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করে বিএনপি। এজন্য বিএনপি কোনো অবস্থাতেই এ নির্বাচনে দলের যে অংশ নেবে তাদের ছাড় দেবে না।

বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের ৮৭টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ২১ জন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ ছাড়া ৩৫ থেকে ৪০ জন রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিল পদে যথারীতি মনোনয়ন তারা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তবে তাদের কেউই নিজের পরিচিতিতে বিএনপির নেতা বা কর্মী উলেস্নখ করেননি। স্বতন্ত্র পরিচয়ে ফরম দাখিলও করেছেন। তারা দলের চেয়ে ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।

সূত্রমতে, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও নীলফামারী কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ওলামা দলের জেলা সভাপতি আ ন ম রুহুল ইসলাম, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুলস্নাহ আল মামুন, বাগমারায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডি এম জিয়াউর রহমান ও পুঠিয়ায় জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোখলেসুর রহমান নির্বাচন করছেন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুর উদ্দিন, আজমিরীগঞ্জে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খালেদুর রশিদ, চুনারুঘাটে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ লিয়াকত হাসান, মাধবপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মো. শাহজাহান এবং নেত্রকোনার পূর্বধলায় প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান। পঞ্চগড় সদরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু দাউদ প্রধান, বোদায় পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক জাকির হোসেন, দেবীগঞ্জে বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল গণি বসুনিয়া এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাখ্‌খারুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলায় বিএনপির সাতজন নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন তাহিরপুর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনিসুল হক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফারুক আহমদ ও আনসার উদ্দিন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় নির্বাচন করছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য মো. শাহজাহান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।

দলের কঠোর সিদ্ধান্তের পরে নির্বাচনের মাঠে থাকা কয়েজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দল যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন তারা নির্বাচন থেকে সরবেন না। কারণ হিসেবে অনেকেই উলেস্নখ করেন, বিগত সময়ে নির্বাচনে তারা বিজয়ী হয়েছেন। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর পদে ছিলেন। তাদের পদে থাকার কারণে দলের সাংগঠনিক ভিত শক্ত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে এ নির্বাচন বর্জন করলে তৃণমূলে দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা মনে করেন। এ জন্য শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার ব্যাপারেও আশাবাদী অনেকে। তবে অনেকেই ব্যক্তির চেয়ে দলকে বড় করে দেখে সিদ্ধান্ত বদল করেছেন। এমনই একজন ফরিদপুর সদর উপজেলায় গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু। স্থানীয় নেতাকর্মী, সমর্থকদের চাপ থাকলেও শুধু দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37535 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1