শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলা প্রতিদিন

জমেনি লিটল ম্যাগ চত্বর

এস এম মামুন হোসেন
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
জমেনি লিটল ম্যাগ চত্বর

মেলা এখন তার ভরা যৌবন পার করলেও এখনো জমে উঠেনি ম্যাগাজিনগুলোর জন্য নির্ধারিত লিটল ম্যাগ চত্বর। বর্ধমান হাউজের পাশের বহেরা তলায় এবার প্রায় ১৮০টির মতো লিটল ম্যাগের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হলেও তিন ভাগের এক ভাগ স্টল এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বইমেলা এখন মূলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় বর্ধমান হাউজের পেছনের পাশে খুব বেশি লোক সমাগম হচ্ছে না। এ কারণে এখানে স্টল দিতে আগ্রহ নেই ম্যাগাজিনগুলোর।

লোক সমাগম না হওয়ার কারণে এরই মধ্যে অনেক ম্যাগাজিন স্বত্বাধিকারী দাবি তুলেছেন ম্যাগাজিনের স্টলগুলোকে সোহরাওয়ার্দীতে স্থানান্তরের। কিন্তু তা না হওয়ায় এখানে আসতে চাননি ম্যাগাজিন মালিকরা। তবে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা লিটল ম্যাগকে সোহরাওয়ার্দীতে স্থানান্তরে প্রস্তুত থাকলেও ম্যাগাজিন স্বত্বাধিকারীরাই এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এ কারণে এবার তা সোহরাওয়ার্দীতে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি। তারা সকলে মিলে যদি দরখাস্ত করে তবে বাংলা একাডেমি তাতে রাজি আছে বলেও জানা গেছে।

এবারের বইমেলায় ভালো মানের ম্যাগাজিনও এসেছে অনেক কম। মূলত লোক সমাগম কমে যাওয়ায় মেলা উপলক্ষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ম্যাগাজিনগুলোর মালিকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলা একাডেমিতে নিলে আবারও লিটল ম্যাগে প্রাণ ফিরে আসবে।

এবারের মেলায় আসা ভালো মানের কয়েকটি ম্যাগাজিনের মধ্যে রয়েছে, একুশের সংকলন এনেছে 'কবিতাচর্চা', একুশ উপলক্ষে সংখ্যা বের করেছে 'জলধি', 'কাঠপেন্সিল', 'শালুক'। নাট্যবিষয়ক খুব সিরিয়াস এক সংখ্যা প্রকাশ করেছে থিয়েটার বিষয়ক ছোটকাগজ 'ক্ষ্যাপা'। এ পত্রিকার সম্পাদক পাভেল রহমান বললেন, লিটল ম্যাগাজিন চত্বর ছোট ছোট বই ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে। 'কাঠপেন্সিল' এর কর্মী আহমেদ ইউসুফ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই চত্বর নিয়ে যাওয়া হলে আরো অনেক পাঠকের নজরে আসত। এখানে আমরা অনেকটাই নিঃসঙ্গ। কবি ওবায়েদ আকাশ বললেন, লটল ম্যাগাজিন চত্বরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেয়া এখন সময়ের দাবি। অমরাবতী লিটল ম্যাগের প্রকাশক মতিন বাঙালি বলেন, মূল মেলা সোরাওয়ার্দী নিয়ে যাওয়াতে পাঠকরা এখানে কম আসেন। যারা আসেন তারা ঘোরাফেরা করেই চলে যান।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের সহ-প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, লিটল ম্যাগ সাহিত্যের বড় একটি মাধ্যম। এই মাধ্যমেই অনেক সাহিত্যিক বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। অথচ এই মাধ্যমকে বাংলা একাডেমির ভেতর রেখে মূল মেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে মেলার ক্রেতা ও দর্শনার্থীর কাছে অদেখাই থেকে যাচ্ছে লিটল ম্যাগ।

লিটল ম্যাগের এ দুরবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির পরিচালক এবং মেলা আয়োজন কমিটির সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, 'আমরা লিটল ম্যাগকে সহায়তা করতে চাই। তারা যেখানে চাইবে আমরা সেখানেই বরাদ্দ দিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে। কয়েকটি ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে এবার আমাদের কাছে দাবি করা হয়েছিল এটিকে সোহরাওয়ার্দীতে স্থানান্তরের। কিন্তু পরে অন্যরা এটির বিরোধিতা করতে থাকেন। তারা দাবি জানান, এখানেই থাকবেন তারা। এ কারণে এটি স্থানান্তরিত হয়নি। তবে তারা সকলে একমতে পৌঁছে যদি আবেদন করেন তবে আমরা এটিকে আগামী বছর থেকে সোহরাওয়ার্দীতে স্থানান্তরে প্রস্তুত আছি। আমরা চাই সকলের বেচাকেনা যেখানে ভালো হবে সেখানেই তাদের স্টল পড়ুক। এখানে আমরা কারো উপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না।'

একজন পাঠক সুমি আক্তার এ বিষয়ে বলেন, আগে মেলায় এলেই দেখতাম লিটল ম্যাগ সেই জমজমাট। কিন্তু এখন দেখছি শুধু পাঠকই নেই তা নয়; বরং ম্যাগাজিনই নেই মেলাতে। দেখুন একটিও ভালো মানের ম্যাগাজিন খুঁজে পাবেন না। অনেক স্টলতো ফাঁকাই পড়ে আছে। এমন থাকলে মানুষইবা কেন আসবে? সোহরাওয়ার্দীতে নিলে হয়তোবা লিটল ম্যাগে আবার প্রাণ ফিরতে পারে।'

নতুন বই : গতকাল ১৯ ফেব্রম্নয়ারি ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৯তম দিন। এ দিন মেলায় গল্পের বই এসেছে ৩৪টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ৪৫টি, গবেষণা ৭টি, ছড়া ৫টি, জীবনী ১১টি, মুক্তিযুদ্ধ ৪টি, বিজ্ঞান ২টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ১টি, স্বাস্থ্য ১টি, অনুবাদ ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য ৬টিসহ মোট ১৪২টি বই। উলেস্নখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে ছিল গ্রন্থকুটির থেকে প্রকাশিত সন্তোষ ঢালীর সামাজিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক বই 'মন না মতি', শব্দশিল্প থেকে প্রকাশিত আব্দুল লতিফের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই 'একটুকরো স্বাধীনতার অংশ এবং সনদবিহীন মুক্তিযোদ্ধা',  পদক্ষেপ থেকে প্রকাশিত আনোয়ারা সৈয়দ হকের গল্পগ্রন্থ 'আমি কুকুর ভয় পাই', অনার্য পাবলিকেন্স থেকে প্রকাশিত তানভির মোকাম্মেলের কবিতার বই 'বেহুলা বাংলা ও অন্যান্য কবিতা' অনন্যা থেকে প্রকাশিত ইমদাদুল হক মিলনের বই 'একাত্তর ও একজন মা'।

মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান : গতকাল বিকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আলম তালুকদার, আসলাম সানী, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম এবং আনজীর লিটন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।  

কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, মতিন বৈরাগী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, এনামুল হক বাবু। এগনেসর্ যাচেল প্যারিসের পরিচালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ 'গীতিনাট্য' পরিবেশন করেন এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন : 'সুর ধারা সংগীতায়ন'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শারমিন সুলতানা, সুমন চন্দ্র দাস এবং মো. জাকির হোসেন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন অভিজিৎ রায় (তবলা), হোসেন আলী (বাঁশি), শ্যামা প্রসাদ মজুমদার (কী-বোর্ড) এবং এস এম তৌহিদ সরকার (দোতারা)।

লেখক বলছি মঞ্চ : লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন মতীন্দ্র মানখিন, ফারুক মঈনউদ্দীন, ওবায়েদ আকাশ,  রেজা ঘটক, আলতাফ শাহ নেওয়াজ এবং বদরুল হয়দার।

আজকের অনুষ্ঠানসূচি :  আজ বুধবার। মেলার ২০তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং শেষ রাত ৯টায়। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সওগাত পত্রিকার শতবর্ষ : ফিরে দেখা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. ইসরাইল খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন হাবিব আর রহমান, সোনিয়া নিশাত আমিন, আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ড. মুহাম্মদ সামাদ। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37559 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1