শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিংহের গজের্ন ভীত নয় কলম্বিয়া

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ডাক নামানুসারে ইংল্যান্ড দলের ফুটবলাররা এক একটা সিংহ! রাশিয়া বিশ্বকাপে তারা ‘থ্রি লায়ন্স’ নামের সাথর্কতা প্রমাণ করতে সক্ষমও হয়েছেন। গ্রæপ পবের্ বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচটি বাদ দিলে প্রথম দুটিতে প্রতিপক্ষকে ছিঁড়ে-কুটে ফেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে দলটির খেলোয়াড়দের মধ্যে। আজ শেষ ষোলোয় কলম্বিয়ার বিপক্ষেও ওমন আক্রমণাত্মক মেজাজেই দেখা যাবে হ্যারি কেন-জেসে লিংগাডের্দর। তবে ইংলিশ সিংহদের গজের্ন মোটেও ভীত নয় দক্ষিণ আমেরিকান দলটি।

১১ সিংহের ইংল্যান্ডকে ‘দ্য টাইগার’ খ্যাত রাদামেল ফ্যালকাওয়ের নেতৃত্বে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছে কলম্বিয়া। ক্যারিয়ারের সোনালি সময়ে বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি মোনাকোর এই ফরোয়াডর্। গত আসরে ইনজুরি কেড়ে নিয়েছিল তার স্বপ্ন। ৩২ বছর বয়সে রাশিয়ায় আক্ষেপটা ঘুচেছে। গ্রæপ পবের্ একটি গোলও পেয়েছেন। আজ চেনা চেহারার কিছু মানুষের বিপক্ষে নামছেন মাঠে। যারা তাকে ‘সবচেয়ে ভালো’ এবং ‘সবচেয়ে খারাপ’ দুই অবস্থাতেই দেখেছে। ডিফেন্ডার গ্যারি কাহিল তাদেরই একজন। কাহিলের চেলসির বিপক্ষে ২০১২ সালে উয়েফা সুপার কাপে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফ্যালকাও।

কলম্বিয়ান তারকার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে কিনে নিয়েছিল চেলসি। কিন্তু স্টামফোডর্ ব্রিজে এসে যেন নিজেকে অন্ধকার কুটুরিতে আবিষ্কার করেন ফ্যালাকাও। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দুই মৌসুমে ৪১ ম্যাচ খেলে ৫ গোল করেছিলেন। কী পরিমাণ সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। সময় এসেছে সমালোচকদের ধারণা পাল্টে দেয়ার। সে জন্য পুরো ইংল্যান্ড দলটাকেই সামনে পাচ্ছেন তিনি। ইংলিশ সিংহ বধে বাঘের মতোই ঝঁাপিয়ে পড়বেন আজ। সঙ্গে থাকবেন হামেস রদ্রিগেজ, ইয়ারি মিনা এবং হুয়ান কুয়াদ্রাদোর মতো তারকারা।

ফ্যালকাও-মিনা-কুয়াদ্রাদোদের কল্যাণেই এবার খাদের কিনার থেকে ঘুরে দঁাড়িয়েছে কলম্বিয়া। শেষ ষোলোয় তারাই একমাত্র দল যারা হার দিয়ে টুনাের্মন্ট শুরু করেছিল। ভয়-ডর জিনিসটা তাই লস ক্যাফেটেরোদের মাঝে নেই। ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত কোয়াটার্র ফাইনালে জায়গা করে নিতে প্রস্তুত হোসে পেকারম্যানের শিষ্যরা। গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা যেমন বলেছেন, ‘চার বছর আগের দলটার চেয়ে আমাদের এখনকার দলটা বেশি ভালো। আমাদের এখন ব্রাজিল বিশ্বকাপের চেয়ে অভিজ্ঞ আর শক্তিশালী একটা দল রয়েছে। আমাদের খেলোয়াড়রা বিশ্বের সেরা সেরা ক্লাবের হয়ে খেলছে এবং প্রায়ই এ ধরনের ম্যাচ খেলে অভ্যস্ত। কাজেই কোনো কিছুতেই আমরা ভীত নই। ইংল্যান্ড ভালো দল। কিন্তু আমরা আমাদের প্রতিপক্ষ নিয়ে কিছু ভাবছি না। আমরা কেবল জানি, দেশের জন্য আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে লড়তে হবে।’

কলম্বিয়ানদের স্বপ্ন ভেস্তে দিতে সেরা একাদশ নিয়েই নামছে ইংল্যান্ড। বেলজিয়ামের বিপক্ষে গ্রæপ পবের্র শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল মূল দলের আটজনকে। তাদের সবাই মাঠে নামার অপেক্ষায়। যথারীতি দল আর আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দেবেন হ্যারি কেন। টটেনহাম তারকা তুখোড় ফমের্ আছেন। দুই ম্যাচ খেলেই করে ফেলেছেন ৫ গোল! আজ আরেকটি দ্যুতি ছাড়ানো পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে দলকে শিরোপার পথে এগিয়ে নিতে চাইবেন তিনি। জামাির্ন-আজেির্ন্টনার মত ফেভারিট দলগুলো না থাকায় ইংল্যান্ডের রাস্তাটা এবার ফঁাকা বলা যায়। তবে অতীতে বিশ্বকাপের আটটি নকআউট ম্যাচের মাত্র দুটিতে কেবল জিতেছে থ্রি লায়ন্সরা। আর সামনে যখন কলম্বিয়ার মত দল, তাদের তো সমীহ জানাতেই হবে! হ্যারি কেনও তাদের ব্যাপারে সতকর্, ‘কলম্বিয়া একটা কঠিন দল। তাদের দারুণ কিছু ফুটবলার রয়েছে। কাজেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা আমাদের আসল পরীক্ষা।’

ইংল্যান্ডের মত সেরা একাদশ নিয়ে নামাবে কলম্বিয়াও। তবে মাঝমাঠের গুরুত্বপূণর্ খেলোয়াড় হামেস রদ্রিগেজের খেলা নিয়ে কিছুটা সশংয় রয়েছে। সেনেগালের বিপক্ষে গ্রæপ পবের্র শেষ ম্যাচে চোটে পড়েন বায়ানর্ মিউনিখ তারকা। কলম্বিয়া জানিয়েছে, তার চোট গুরুতর নয়। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার মাঠে নামার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি দলটি। সে ক্ষেত্রে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে হুয়ান কুইন্টেরোকে। গ্রæপ পবের্ কলম্বিয়ার করা পঁাচ গোলের তিনটিতে সরাসরি অবদান রেখেছেন এই রিভারপ্লেট মিডফিল্ডার। পরিসংখ্যান বিচারে আজ ফেভারিট ইংল্যান্ডই। অতীতে পঁাচ দেখায় কখনো কলম্বিয়ার কাছে হার মানেনি থ্রি লায়ন্সরা। বিশ্বকাপে দু’দলের একমাত্র সাক্ষাৎ ১৯৯৮ সালের আসরে। গ্রæপ পবের্র লড়াইয়ে দক্ষিণ আমেরিকান প্রতিপক্ষদের ২-০ গোলে পরাজিত করে ইংলিশরা। সবের্শষ ২০০৫ সালের প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয় তারা। ওই ম্যাচ ইংল্যান্ড ৩-২ ব্যবধানে জিতে নেয়। আজ কি অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে, নাকি থ্রি লায়ন্সদের উড়িয়ে লাল-নীল-হলুদে মস্কোর স্পাতর্ক স্টেডিয়াম রাঙাবে কলম্বিয়া? দেখার অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে