শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় বিপাকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের এই প্রথম দিনে বাংলার সবকিছু যেন সাজে নতুন সাজে। গ্রামগঞ্জ আর শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অলিগলির দোকান ও বিপণিবিতানে থাকে কেনাকাটায় উপচে পড়া ভিড়। বাহারি রঙের বৈশাখী পোশাক দেদার বিক্রি হয়। অনলাইনেও জমে ওঠে বেচাবিক্রি। বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বড় পরিসরে ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। এই সময়ে সারাদেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা হয়।

এ বছর দেশব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবকিছু থমকে গেছে। দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকারি নির্দেশে অফিস-আদালত, কারখানা, যানবাহন, জনসমাগম সব বন্ধ রয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে পহেলা বৈশাখের সকল কার্যক্রম। ফলে এ পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে যারা তাদের স্বপ্ন বাধে সেই সব উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের এবার মাথায় হাত।

প্রতিবছরই দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে পহেলা বৈশাখ এক ধরনের স্বপ্ন থাকে। যে এই দিনকে কেন্দ্র করে একটা ভালো বেচাকেনা হবে। আর এর জন্য উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা প্রতিবছরই নানা ধরনের কর্মসূচি ও উদ্যোগ হাতে নেয়। এবার সেটাও গেল। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে যারা পণ্য তৈরি করে রেখেছিলেন, তাদের এখন কী হবে! তাদের প্রায় সবাই এই উৎসবের বিক্রিবাট্টা থেকে ঋণের অংশ পরিশোধ করেন।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসায় টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তারা। সরকার যদি কোন সহযোগিতা না করে তাহলে তাদেরকে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।

এদিকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ক্ষদ্র উদ্যোক্তাদের দ্রম্নত তথ্য সংগ্রহ করে সরকারকে তাদের দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

হাসিনা মুক্তা নামে এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বলেন, সাধারণত পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে এ সময় পণ্য বিক্রি হয় বেশি। সাত দিন আগে থেকে বিক্রি শুরু হয়ে যায়। আমরা এ সময়টা টার্গেট নিয়ে পণ্য তৈরি করি। টাকা জোগাতে হয় ঋণ করে। উৎসবে উলেস্নখযোগ্য পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবার বৈশাখ উৎসবের মৌসুমে সবকিছু বন্ধ। আমাদের ১তৈরি পণ্য নিয়ে এখন কী করব?

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বড় বিপদের মধ্যে রয়েছেন জানিয়ে মুক্তা বলেন, এখন সরকার তাদের জন্য কিছু না করলে বেশির ভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বেকার হবে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।

পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক বড় ধরনের চাহিদা থাকে ফুলের। কেউ মাথায় ফুলের খোঁপা, কেউ ফুলের ব্যান্ড, কেউ ফুলের মালা আবার কেউ হয়তো প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেন। এবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান না হওয়ার কারণে এই ফুল ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন শঙ্কায়। আর সবচেয়ে বড় শঙ্কায় রয়েছেন যারা এই পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে তাদের বাগানকে সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন। ফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

শাহবাগের বটতলার ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক ফুল বিক্রি হতো। শাহবাগ ফুটপাতে ৫১টি দোকানে জমে উঠতে ফুল বিক্রি। এখন গত ২৬ তারিখ থেকে সরকারের নির্দেশনায় বন্ধ আছে আমাদের দোকান। আমরা সরকারের ঘোষণামতো বন্ধ রেখেছি। কবে খুলতে পারব জানি না। সরকার যেন আমাদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করে।

আমাদের এখানের দোকানদান দিনে দিনে বিক্রি করে সে টাকা দিয়েই তারা সংসার চালায়। বসে থেকে তাদের টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গেছে। কত দিন আর ঘরে বসে খাওয়া যায়!

এই পহেলা বৈশাখে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে ক্ষদ্র উদ্যোক্তারা উলেস্নখ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আমি ভাবছি শত শত উদ্যোক্তার কথা, যারা এই বৈশাখকে ঘিরে তাদের পণ্য উৎপাদন করেন, বিক্রির জন্য প্রস্তুত থাকেন। হালখাতার মিষ্টি, মাটির পুতুল থেকে শুরু করে মুড়ি-মড়কি কিংবা ফুলের ব্যবসা, পোশাক-আশাক তো আছেই, সবার একটা বড় বিক্রয়ের মৌসুম হলো পহেলা বৈশাখ। এই একটি উৎসব না হওয়ার কারণে ব্যবসা নষ্ট হবে এই উদ্যোক্তাদের।

সরকারকে এসব অণু ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার রিফাইন্যান্সিং স্কিম দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, একটা জরুরি ফান্ড করে খুব অল্প সুদে তাদের ঋণ দেওয়া যেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কি হবে জানতে চাইলে পলিস্ন কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, সারাদেশে বহু উদ্যোক্তা রয়েছে। যারা এই মহামারিতে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হবেন। তাই এখানে সরকারকে নজর দিতে হবে। এসব উদ্যোক্তা ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসা শুরু করে। তাদের ঋণ আদায়টা পিছিয়ে দিতে হবে। আরও ঋণ লাগলে সেটা তাকে সহজ শর্তে দিতে হবে। এমনকি অনুদানও দেয়া দরকার। বড়দের না দিয়ে এমন ছোট উদ্যোক্তাদের অনুদান দিতে হবে।

সরকারকে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে এখনই তথ্য নিতে হবে বলে মনে করেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান। সারা দেশের ছোট-ছোট উদ্যোক্তাদের কিছু তথ্য আমাদের কাছে আছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছেও তথ্য আছে। এর ভিত্তিতে কাজ করা দরকার, যাতে এসব উদ্যোক্তা স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। অথবা যে অবস্থায় আছে সেটা যেন ধরে রাখতে পারে।

চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। এর বিস্তার রোধে সরকার পহেলা বৈশাখের সব ধরনের অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম স্থগিত করেছে। স্থগিত করা হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের বৈসাবি উৎসবের অনুষ্ঠানও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95204 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1