বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুরো রমজানে তারাবির নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

যাযাদি ডেস্ক
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩১
ছবি-সংগৃহিত

মুমিন মুসলিমের দুয়ারে আবারও এলো মাহে রমাদান। এই মাসে নাজিল হয়েছে পবিত্র কুরআন। শবে কদরের রাতকে বলা হয় হাজার বছরের সেরা রাত। তাই এই রাতে মক্কা ও মদীনায় উপস্থতি হন লাখ লাখ মুসল্লি। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এই মাসের প্রধান দুটি আমল হলো সিয়াম ও কিয়াম।

সিয়াম বা রোজা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা। আর কিয়াম হলো রাতে তারাবির নামাজ।

‘তারাবিহ’ শব্দটি আরবি তারভিহাতুন থেকে এসেছে, যার অর্থ বিশ্রাম করা, প্রশান্তি লাভ করা।

তারাবি নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাত পর পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়, তাই এই নামাজকে সালাতুত তারাবিহ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।

তারাবির নামাজ এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর এবং বিতিরের পূর্বে আদায় করা হয়। তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। যেটা গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি।

তারাবির ফজিলত সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে নেকীর আশায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

রাসূল সা. তারাবিকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবি যেন ফরজ না হয়ে যায়, যেটা আদায়ে উম্মতের কষ্ট হতে পারে, সেটা রাসূল সা. এর একটি হাদিসে থেকেই বোঝা যায়।

হজরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তার সাথে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তারা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা. হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেয়া হয়। (বুখারি)

তারাবি বিশ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসূল সা., সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. রমজান মাসে ২০ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)

সমস্ত সাহাবীদের আমলও ২০ রাকাত ছিল। রাসূল সা.-এর নাতি হজরত আলী ইবনে হাসান রা. থেকে বর্ণিত, হজরত ওমর রা.-এর নির্দেশে লোকদেরকে নিয়ে উবাই বিন কাব রা. ২০ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ)

এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী রা.-সহ সকল সাহাবীদের ঐক্যমতে ২০ তারাবি পড়া হয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, মক্কা ও মদীনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে আজ পর্যন্ত সব সময় ২০ রাকাত তারাবি খতমে কোরআনসহ জামাতের সাথে পড়া হয়। তারাবি নামাজে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ করা ও সুন্নত। রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং একটি নেকীকে ১০ গুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে। (তিরমিজি)

কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের মতো শুনলেও একই রকম সওয়াব। এজন্য তারাবি নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সাথে মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনতে হবে।

২০ রাকাত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়। রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে। (তিরমিজি)

মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল তারাবির নামাজে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন আমরা যথাযথ গুরুত্বের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে