রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কনকনে শীতে চাই টাটকা খেজুরের রস!

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫৮
কনকনে শীতে চাই টাটকা খেজুরের রস!

কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের প্রধান আকর্ষণ হিমশীতল খেজুরের রস। যেন এর সাথে কোন কিছুর তুলনাই হয় না। শীতকাল আসতেই খেজুর রসের ঘ্রাণ ও স্বাদ নেওয়ার একরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়। স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেক মিষ্টি, প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুরের রস বেশ সস্তা ও পুষ্টিকর ও উপাদেয়। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ কনকনে ঠান্ডা ভোরে এর স্বাদ অতুলনীয়। শীতের তীব্রতায় খেজুর গাছ তার সর্বস্থ অমৃত ঢেলে দেয় তার রসে।

পৌষ-মাঘ মাসে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়। সাধারণত ঠাণ্ডা আবহাওয়া, কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে পর্যাপ্ত রস পাওয়া যায় এবং এর স্বাদও ভালো হয়। তাপমাত্রা বাড়লে খেজুর গাছ হতে নির্গত রসের পরিমাণ কম হয় এবং এর সুস্বাধু স্বাদও হারিয়ে যায়।

আবহমান বাংলার গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস সংগ্রহ করতে গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে গাছ পরিষ্কার করতে হয়। গাছ পরিষ্কার করার পর ১৫-২০ দিন পর গাছ ছাটতে হয়। ছাটা যে অংশে রস নিঃসরণ হয় সে অংশে চিকন ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা বাঁশের কঞ্চি আধা ইঞ্চি ঢুকিয়ে দিতে হয়। কাঠির মধ্যে দিয়ে ফোটায় ফোটায় নির্গত রস গাছে ঝুলানো ছোট বড় হাড়িতে সংগ্রহ করা হয়। গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এরপর আবার হালকা ছেটে পুনরায় রস সংগ্রহ করা যায়।

শীত মৌসুমে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য সাধারণ বিকেল বা সন্ধ্যার সময় গাছে হাঁড়ি ঝোলান এবং খুব ভোরে হাঁড়িতে জমাকৃত রস সংগ্রহ করেন। খেজুরের রস সাধারণত ডিসেম্বর হতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়।

অনেক আবেগপ্রবণরা হাঁড়ি নামানোর সঙ্গে সঙ্গে গাছিদের কাছ থেকে সরাসরি কাঁচা রস পান করেন।

তবে খেজুরের রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আইইডিসিআরের তথ্যমতে, ২০০১-২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে ৩০৩ জন আক্রান্ত এবং এদের মধ্যে ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের আলামত দেশের ৩১টি জেলায় দেখা মিলেছে।

তথ্যমতে নিপাহ ভাইরাস এক ধরনের ‘জুনোটিক ভাইরাস’ অর্থাৎ এই ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষের শরীরের সংক্রমিত হয় পরে সেটি মানুষে মানুষে সংক্রমণ হয়ে থাকে। নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা নেই। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে প্রচণ্ড প্রদাহ দেখা দেয়। এতে আক্রান্তরা জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। এক পর্যায়ে খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে।

গাছিরা যে হাড়ি ব্যবহার করেন, তা খোলা অবস্থায় রাখা, রস সংগ্রহের জন্য হাড়ি গাছে রাখলে কীটপতঙ্গসহ নানা ধরনের পাখি, বিশেষ করে রাতের নিশাচর প্রাণী বাদুড়, টিকটিকি, কাঠবিড়ালী এমনকি সাপও খেজুরের রস পান করতে হাড়িতে মুখ দেয়। তখন এদের মুখ থেকে নিঃসৃত লালা এমনকি মলমূত্র খেজুরের রসে মিশে অস্বাস্থ্যকর রসে পরিণত হয়। এই দূষিত কাচা রস পান করলে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তাই দূষিত কাঁচা রস খাওয়াতে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।

সংক্রমণের আশঙ্কা! তাই বলে কি লোভণীয় খেজুরের রস খাওয়া থেকে দূরে সরে যাবেন বিষয়টা তা নয়, এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করলেই হবে। প্রথমত রস সংগ্রহের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। গাছগুলোর রস সংগ্রহের স্থানে প্রতিরক্ষা আবরণ ব্যবহার করতে হবে, যাতে বাদুড়সহ কোন প্রাণী এর সংস্পর্শে আসতে না পারে। বাঁশ দিয়ে বানানো বেড়া। যেটা রসের নিঃসরণের চোঙের মাথা থেকে কলসির মুখ পর্যন্ত ঢেকে রাখে। হাড়ির মুখে ঢাকনার ব্যবস্থাসহ রসের উৎস মূল ঘিরে জাল দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া যেতে পারে। রস সংগ্রহের পর আগুনে ৭০-৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলেই জীবাণু সাধারণত মরে যায়। কাঁচা খেজুর রস পান না করে রস ফুটিয়ে পান করা নিরাপদ।

লেখক, তারেক রহমান

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে