রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঘন ঘন খাবারের ইচ্ছা! কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫১
ঘন ঘন খাবারের ইচ্ছা! কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?

আমরা সারাদিন নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকি, সেই কাজের জন্য আমাদের দেহের প্রয়োজন শক্তি। সেই শক্তি আমাদের দেহ খাবার থেকে পায়। তাই যখনই দেহের খাবারের প্রয়োজন হয় আমরা ক্ষুধা অনুভব করি এবং খাবার খাই। এটি দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু ফুড ক্রেভিং ক্ষুধা থেকে ভিন্ন। এই খাবারের ক্রেভিং আসলে কী, এর কারণ এবং কীভাবে কন্ট্রোল করবেন তাই জানবো আজকের লেখায়।

ফুড ক্রেভিং কী?

মাঝে মাঝে কোনো একটা নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ার জন্য তীব্র যে ইচ্ছে হয় এবং সেই খাবারটা না খাওয়া পর্যন্ত মন কিছুতেই শান্ত হতে চায় না। এটাকেই বলা হয় ফুড ক্রেভিং (ঘন ঘন খাবারের ইচ্ছা)। অনেকেরই ঘন ঘন নানা ধরনের খাবারের ক্রেভিং হয়, ফলস্বরূপ দেহের ওজন বাড়তে থাকে। কারণ ক্রেভিংয়ের জন্য গ্রহণ করা খাবার দেহের জন্য প্রয়োজনীয় না তাই সেই খাবার চর্বি আকারে শরীরে জমতে থাকে। তাই এই ক্রেভিং কন্ট্রোলে নিয়ে আসা অনেক বেশি জরুরি।

বারবার এই ক্রেভিং কেন হয়?

১) দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম খাদ্য না পেলে ঘনঘন ক্রেভিং হতে পারে। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য না খেয়ে থাকেন, তখন খাবারের ক্রেভিং বেড়ে যায়।

২) হরমোনাল কারণে যেমন পিরিয়ড ও প্রেগনেন্সির সময় ঘন ঘন খাবারের ক্রেভিং হয়। লেপটিন ও সেরোটোনিন হরমোনের জন্য খাবারের ক্রেভিং হয়ে থাকে।

৩) স্ট্রেসে থাকলে খাবারের ক্রেভিং বেড়ে যায় কারণ তখন কর্টিসল হরমোন রিলিজ হয়- যা বারবার ক্ষুধা অনুভব করায়। এছাড়া অনেকের খাবার খেলে স্ট্রেস কমে তাই বারবার খাওয়ার ইচ্ছে হয়।

৪) ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলে বারবার খাবারের ইচ্ছের প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ তখন শরীরের ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না, ইনসুলিন আমাদের শরীরের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

এই অভ্যাস কমানোর উপায়

প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খান

দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। লাইফস্টাইলের ওপর ভিত্তি করে সবার খাবারের চাহিদা ভিন্ন। প্রতিদিন দেহের প্রয়োজন যতটুকু খাবার ততটুকু গ্রহণ করলে ফুড ক্রেভিং অনেকটা কমে যায়। অনেকে ডায়েটের ফলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকে ফলে একপর্যায়ে গিয়ে খাবারের ক্রেভিং হয়- যা কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যায়। তাই ডায়েট করলেও ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং খাদ্যতালিকায় যাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ফুড ক্রেভিং বেশি হওয়ার মানে হরমোনাল ইস্যু

হরমোনাল ইস্যু আছে কিনা দেখে নিন

ফুড ক্রেভিংয়ের জন্য হরমোন দায়ী। তাই অতিরিক্ত ক্রেভিং হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে অবশ্যই জেনে নিতে হবে কোনো হরমোনাল ইস্যু আছে কিনা। পিসিওএস (চঈঙঝ) কিংবা ডায়াবেটিস থাকলে তা কন্ট্রোলের জন্য হেলথি লাইফস্টাইল অনুসরণ করতে হবে ও হরমোনের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

পিপাসা ও ক্ষুধার মধ্যে পার্থক্য করুন

অনেক সময় আমরা পিপাসা ও ক্ষুধার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি না। তাই পিপাসা পেলেও অনেকে মনে করে ক্ষুধা পাচ্ছে। তাই কোনো খাবারের ক্রেভিং হলে সঙ্গে সঙ্গে এক গস্নাস পানি খেয়ে ফলতে হবে সেক্ষেত্রে অনেক সময় ক্রেভিং কমে যায়।

মানসিক চাপ মুক্ত থাকুন

মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে ইয়োগা কিংবা মেডিটেশন করা যেতে পারে। মন অস্থির ও অশান্ত থাকার ফলে ওভার ইটিং বা খাবারের প্রবণতা বেড়ে যায়। এছাড়া প্রতিদিন ৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে, হাঁটার ফলে শরীর থেকে ডোপামিন রিলিজ বের হয়, এতে মুড ভালো থাকে।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বেছে নিন

বারবার ক্রেভিং হলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের জায়গায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বেছে নিতে হবে। জাঙ্ক ফুড ও প্রসেসড ফুড এমনিতেই বারবার ক্রেভিংয়ের প্রবণতা বাড়ায় তাই এসব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। ক্রেভিং হলে খেজুর, বাদাম, ডিম, দুধ, ওটস এ জাতীয় খাবার খেতে হবে।

অবেলায় খাবারের ক্রেভিং হলে অপেক্ষা করুন

কোনো কারণ ছাড়াই সারাক্ষণ কিছু না কিছু খেতে ইচ্ছে করে সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে এটি পুরোপুরি মানসিক। যে কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা সাধারণত ৩০ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী হয়। তাই অবেলা খাবারের ক্রেভিং হলেই খাবার খোঁজা শুরু না করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এতে ধীরে ধীরে ক্রেভিংয়ের মাত্রা কমে আসবে। খাবার থেকে মনোযোগ দূর করার জন্য গান শোনা যেতে পারে।

ক্রেভিং কমাতে রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করুন

রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে কোনো খাবারের ক্রেভিং লেইট নাইটে হয়ে থাকে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

অতিরিক্ত রেস্ট্রিকশন পরিহার করুন

নিজেকে অতিরিক্ত রেস্ট্রিকশনের মধ্যে নিয়ে আসা যাবে না, এতে আরও বেশি সমস্যা হতে পারে। তাই নিজের প্রিয় খাবার পরিমাণ বুঝে মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে যখন তখন তীব্র ক্রেভিং হবে না। হেলদি থাকতে হলে অবশ্যই রুটিন মাফিক খাওয়া দাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

মনে রাখতে হবে, ফুড ক্রেভিং কোনো খারাপ ব্যাপার না, মাঝের মধ্যে যে কোনো ধরনের খাবারের ইচ্ছে হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। তবে সমস্যা তখনই হয় যখন ঘন ঘন ও কন্ট্রোলের বাইরে ক্রেভিং হয়। অতিরিক্ত ফুড ক্রেভিং বা খাওয়ার প্রবণতা কখনোই হেলথের জন্য ভালো না। তাই লাইফস্টাইলে কিছু চেঞ্জ এনে এবং ইচ্ছা শক্তির দ্বারা ফুড ক্রেভিং কন্ট্রোলে নিয়ে আসা সম্ভব।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে