শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাস্তায় যানবাহন ও মানুষ বেড়েছে

ঢিলেঢালা লকডাউন
নতুনধারা
  ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাত দিনের 'সর্বাত্মক লকডাউনের' পর তা আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। সেই বর্ধিত লকডাউনের প্রথম দুদিনে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতিও তুলনামূলকভাবে বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক দিন ধরে ব্যারিকেড বসিয়ে রাস্তা সংকীর্ণ করে রেখেছে পুলিশ। বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ আজ বের হওয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে শ্রমজীবীদের কথা হচ্ছে, 'লকডাউনের অনেক দিন হয়ে গেছে। আর সহ্য হচ্ছে না। ঘরে বসে থাকলে খাবার খরচ কে জোগাবে?'

উলেস্নখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃতু্য হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে প্রথম দফায় ৫ এপ্রিল সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হয়। ঢিলেঢালাভাবে পালিত সেই লকডাউনের মধ্যেই ১৪ এপ্রিল থেকে আবার সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হয়। সেই সর্বাত্মক লকডাউন আবার বর্ধিত করা হয় আরও এক সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যেই বর্ধিত লকডাউনের মধ্যে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষ বেড়েছে। ঢিলেঢালাভাবে চলছে লকডাউন। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। মনে রাখতে হবে সংক্রমণ কিছুটা কমলে কোনোভাবেই মৃতু্য ঠেকানো যাচ্ছে না। অথচ ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। সরকার ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকেও করোনাভাইরাসের টিকা আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সরকার তৎপর থাকলেও দেশের জনগণ একেবারে উদাসীন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বলে যে দাবি করা হয়েছিল সরকারের একটি গবেষণা সংস্থা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। দুই সপ্তাহ আগে আইসিডিডিআরবি বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব বাংলাদেশে ভাইরাসের প্রসারের ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন আনে। দেশে শনাক্ত করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর মধ্যে এখন ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়ান্ট। ভাইরাসের ধরন নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মেনে চলতে হবে সরকারি নির্দেশনা। সারাবিশ্ব করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত। দিন যতই যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃতের সংখ্যাও। এ নিয়ে সারা বিশ্ব টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। যে দেশ যতই আশার বাণী শোনাক, এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। করোনার টিকাও নিশ্চিত করতে পারছে না এর প্রতিরোধ।

উলেস্নখ্য, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃতু্য হয়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। করোনাভাইরাসের তীব্রতা এতই বেড়েছে, উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে রোগীদের মৃতু্য হচ্ছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পাঁচ দিনের মধ্যে ৫২ শতাংশ করোনা রোগীর মৃতু্য হচ্ছে। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ রোগী উপসর্গ শুরু পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভর্তি হয়েছিল। ১২ শতাংশ ভর্তি হয় উপসর্গ শুরু ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে ভয়ংকর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ভাইরাস কয়েকগুণ শক্তিশালী। যার কারণে দ্রম্নত ফুসফুসে সংক্রমণ শুরু হয়ে রোগীর মৃতু্য ঘটায়। এটা আমাদের জন্য এক ভয়ংকর বার্তা।

মাঝে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে গিয়েছিল। তখন দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ জন আক্রান্ত হতো। মৃতু্য নেমে এসেছিল ১০-এর নিচে। তখন সবার মধ্যে ঢিলেঢালাভাব লক্ষ্য করা গেছে। তখনো বাংলাদেশ ছাড়া সারাবিশ্বে টালমাটাল অবস্থা, এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থাও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে ছিল। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমরা উদাসীন হয়ে পড়লাম। যার চরম খেসারত এখন আমাদের দিতে হচ্ছে। এই অবস্থা আমাদের জন্য খুবই আতঙ্কের। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কঠোর লকডাউন ছাড়া অন্য বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে