বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা

ঢামেক করোনা ইউনিটে দালালদের দৌরাত্ম্য

বেসরকারি ল্যাবরেটরি ও প্যাথলজির দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবা নিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন রোগীরা। অজানা কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
জাহিদ হাসান
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
ঢামেক করোনা ইউনিটে দালালদের দৌরাত্ম্য

ফুসফুসে সংক্রমণজনিত শ্বাসকষ্টের রোগী তাজুল ইসলাম (৭০) কুমিলস্নার মুরাদ নগরের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢামেকে ভর্তির সুপারিশ করলে বুধবার দুপুরে মেয়ে তানিয়া ও স্ত্রী লাইলী বেগম তাকে নিয়ে ঢামেক-২ এ আসেন। এ সময় হাসপাতালের নিচতলায় ঘোরাফেরা করা কয়েকজন ব্যক্তি তাজুল ইসলামকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামাতে প্রতিযোগিতা শুরু করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা রোগীকে ট্রলিতে তুলতে উদগ্রীব হন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা।

তাজুলের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামীর কুমিলস্নাতে করোনা পরীক্ষা ফলাফল নেগেটিভ এসেছে বলার পরও কয়েকজন লোক করোনা ইউনিটে শ্বাসকষ্টের রোগীর পৃথক ভর্তি ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান। তাদের মাধ্যমে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে সহজে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। দিশেহারা হয়ে হাসপাতালে ভর্তির জন্য তাদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে বলে জানান লাইলী বেগম।

শুধু তাজুল ইসলামই না, ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে সেবা নিতে আসা প্রায় সব রোগীর সঙ্গে এমন আচরণ করেন পূর্বে থেকেই হাসপাতালের আশপাশে ওঁৎ পেতে থাকা বিভিন্ন ল্যাবরেটরি-প্যাথলজির দালালরা। সবকিছু দেখেও চুপ থাকেন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে বিভিন্ন বেসরকারি ল্যাবরেটরি ও প্যাথলজির দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবা নিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন করোনা ইউনিটের রোগীরা। রোগীরা হরহামেশা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। আর অজানা কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত ঢাকা মেডিকেল-২ এর সামনে কথা হয় বেসরকারি প্যারাডাইজ ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মার্কেটিং বিভাগের কর্মী শান্ত হোসেনের সঙ্গে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মার্কেটিং প্রতিনিধি শান্ত যায়যায়দিনকে বলেন, ঢামেকের করোনা ইউনিটে তার মতো অন্তত ৫০ জন রয়েছেন। যারা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক মার্কেটিংয়ে কাজ করেন। তাদের সঙ্গে একাধিক নারী কর্মীও রয়েছে। হাসপাতালের রোগীদের টেস্ট করানোর বিনিময়ে তারা বেতন ছাড়াও অতিরিক্তি কমিশন পেয়ে থাকেন।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক যায়যায়দিনকে বলেন, সংক্রামকব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই রোগীদের সংস্পর্শে আসতে চান না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসারদের যোগসাজশে বেসরকারি প্যাথলজি ও ল্যাব কর্মীরা টেস্ট বাণিজ্য করছে। অতিরিক্ত টেস্ট দেওয়ার বিনিময়ে কিছু চিকিৎসক তাদের কাছ থেকে কমিশন নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, ঢামেকে করোনা ল্যাবে প্রতিদিন ৩০০ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও গড়ে ১০০টির কম নমুনা হচ্ছে। এতে করে সংকটাপন্ন ভর্তি রোগীদের পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত সময় লাগছে। কারণ সন্ধ্যা সাতটার পর মেডিকেলের ভাইরোলজি বিভাগের সব কাজ বন্ধ থাকে। ফলে ওই সময় কোনো রোগীর নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন হলে সেটি সম্ভব হয় না। এর আগে করোনা পরীক্ষার অনুমোদনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফরিদ ও নাসির নামে ঢাকা মেডিকেলের দুইজন টেকনোলজিস্ট টাকার বিনিময়ে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। তখন ভাইরোলজি বিভাগ ও হাসপাতাল প্রশাসন বিষয়টি জানার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ ব্যাপারে ভাইরোলজি বিভাগের কয়েকজন স্টাফ যায়যায়দিনকে অভিযোগ করেন, ভাইরোলজি বিভাগের যেসব স্টাফ করোনা নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৪৫ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সেই টাকা এখনো পাননি। ফলে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা ছাড়াও হাসপাতালের যেসব চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীরা সেলফ কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে রয়েছেন তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কয়েকজন টেকনোলজিস্ট গা-ছাড়া ভাব দেখাচ্ছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেলের ভাইরোলজি বিভাগের একাধিক চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহারা বানু যায়যায়দিনকে বলেন, 'দ্বিতীয়বারের মতো করোনা পজিটিভ হওয়ায় তিনি সেলফ আইসোলেশনে রয়েছেন। ছুটিতে থাকায় করোনা ইউনিটের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলতে পারছেন না। বর্তমান পরস্থিতি সম্পর্কে পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।'

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দীন মিটিংয়ে থাকায় সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আশরাফুন নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনিও কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসায় মেডিকেলের ভবন-২ ও পুরাতন বার্ন ইউনিট ৮৮৩ শয্যাবিশিষ্ট অবকাঠামো রয়েছে। বৃহস্পতিবার সেখানে ৬৩৯ জন জেনারেল শয্যা ও আইসিইউতে ২৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<112552 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1