শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস

দুই বছরেও শুরু করতে পারেনি প্রতিশ্রম্নত পরিষেবা

রেজা মাহমুদ
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের (ওএসএস) আওতায় ৪৩টি পরিষেবা সরবরাহের জন্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। ওএসএসের আওতায় ২১টি পরিষেবা চালু থাকলেও এর মধ্যে ১৪টিই বিডার। আর বাকি ৭টি পরিষেবা দিচ্ছে মাত্র ৫ সংস্থা। অন্যদিকে সিস্টেম জটিলতাসহ বিভিন্ন অজুহাতে বাকি ১৮টি সংস্থা দুই বছরেও শুরু করতে পারেনি তাদের ৩৬টি পরিষেবা।

২০১৮ সালে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের (ওএসএস) আওতায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার দুই বছর পার হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের প্রতিশ্রম্নত পরিষেবাগুলো এখনো সরবরাহ করতে পারেনি।

জয়েন্ট স্টক কোম্পানি রেজিস্টার অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) ওএসএসের আওতায় ওই বছরেই একই সময়ে আরও আটটি পরিষেবা সরবরাহের জন্য বিডার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু ২ বছরে শুধু কোম্পানির নাম ও নিবন্ধন ছাড়পত্র পরিষেবা শুরু করতে পেরেছে।

এদিকে চলতি বছরের শুরুতে ২৮ দিনের মধ্যে নতুন বিদু্যৎ সংযোগ সরবরাহের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপস্নাই কোম্পানি (ডেসকো)। পরে আরও চারটি নতুন সংস্থা বিডার সঙ্গে একই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। প্রায় ১ বছর পার হলেও তাদের কেউ চুক্তি অনুযায়ী পরিষেবাটি চালু করতে সক্ষম হয়নি। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে একটি নতুন

\হবিদু্যৎ সংযোগ পেতে গড়ে প্রায় ১২১ দিন সময় লাগে।

ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের আওতায় ইতোমধ্যে শুরু হওয়া প্রধান কয়েকটা পরিষেবার মধ্যে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ই-টিআইএন রেজিস্ট্রার, আরজেএসসির অধীন কোম্পানির নামের ছাড়পত্র এবং নিবন্ধন, ইসি সচিবালয়ের এনআইডি আবেদনের যাচাইকরণ, সিকিউরিটি সার্ভিসেস বিভাগ কর্তৃক বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য সুরক্ষা ছাড়পত্রসহ সোনালী ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন কার্যক্রম।

তবে এখনো ওএসএস সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে পিডিবি, ডেসকোসহ ৬টি বিদু্যৎ বিতরণকারী সংস্থা। এছাড়া এ সার্ভিসের অটোমেশনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে তিন সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রদান, বিদেশি কোম্পানি নিবন্ধন, ই-ভ্যাট নিবন্ধন কার্যক্রম, আয়কর রিটার্ন দাখিল, কর্ম পরিকল্পনা অনুমোদন (সিডিএ)সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, প্রযুক্তিগত অসুবিধার জন্য অনেক সংস্থা তাদের সেবাগুলো শুরু করতে পারছে না। বেশ কিছু সংস্থা বিডার ওয়েব সিস্টেমের সঙ্গে তাদের সিস্টেমগুলো অ্যাটাচ করে ইতোমধ্যে পরিষেবা শুরু করেছে। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু সংস্থা পিছিয়ে রয়েছে।

ওএসএসের আওতায় এসব চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা না থাকা বা পূর্বপ্রস্তুতির ঘাটতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সরকারি সব সেবাই ডিজিটালাইজেশন করা হবে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের জন্যই এখন বিষয়গুলো নতুন এবং টেকনিক্যাল। বিডার সঙ্গে চুক্তি হলেও সার্ভার আপগ্রেডেশন তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তাই এসব সংস্থাকে বিডা জোর করতে পারে না। তবে যে সংস্থাগুলো পরিষেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের প্রস্তুতির বিষয়টি ব্যবসা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জাতীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে দ্রম্নত উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন।

বিদু্যৎ ও জ্বালানি সচিব বিদু্যৎ বিতরণসহ সংশ্লিষ্ট সেবাগুলো আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার জোর তাগিদ দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে বিডার চেয়ারম্যান জানান, দুই করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে তারা একটু পিছিয়ে পড়েছে। এছাড়া ভিয়েতনামের যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনলাইন আপগ্রেডেশনের কাজ করছিল তাদের লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় নতুন করে এর জন্য চুক্তি করতে হচ্ছে। তবে ওএসএস সার্ভিসের সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে শিগগিরই দুই মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও তিনি জনান।

ডেসকোর বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, সিটি প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রায় সবগুলো অটোমেশন কাজ শেষ হয়েছে। তবে যে প্রতিষ্ঠান এই প্রজেক্টটির কাজ করেছে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিডার সঙ্গে সিস্টেম সংহতকরণের কাজ কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবে সিটি করপোরেশনে এই কাজের জন্য নতুন দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এই পরিষেবাটি শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

আরজেএসসির কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, প্রযুক্তিগত কারণে তারা ছয়টি ওএসএস সার্ভিস এখনো শুরু করতে পারেননি। ওএসএসের অধীনে সেবাগুলো শুরু করতে আরজেএসসি সিস্টেমের সঙ্গে বিডা সিস্টেমের আধুনিকায়নের কাজ করতে হচ্ছে। এর ফলে এই একটু বেশি সময় নিচ্ছে বলে তারা জানান।

আরজেএসসি ইতোমধ্যে সংস্থার নাম এবং সংস্থার নিবন্ধকরণ ছাড়পত্র প্রদান শুরু করেছে। বাকি ছয়টি পরিষেবা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেগুলোও শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে আরজেএসসি।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. কাউসার আমির আলী জানিয়েছেন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিডার সঙ্গে পরিষেবা শুরু করা যায়নি। তবে দ্রম্নত সব কিছু সমাধান করা হবে। নতুন বিদু্যৎ সংযোগ পাওয়ার ঝামেলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক কম। সরকারের ওএসএস সার্ভিসের বিষয়টি ডেসকো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী দেড় মাসের মধ্যেই পরিষেবাটি শুরু করা হতে পারে।

ওয়ান স্টপ সার্ভিস কেবল কাগজে রয়েছে। কার্যকরী ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার না থাকলে ব্যবসার ব্যয় কখনই হ্রাস পাবে না। ফলে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রবাহও বৃদ্ধি পাবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, সংস্থাগুলোর অবহেলার কারণে সরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সংস্থা ওএসএসকে আটকে রেখেছে। কারণ এর ফলে তাদের ঘুষ এবং অন্যান্য দুর্নীতিমূলক আচরণের সুযোগ হ্রাস পাবে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। বাণিজ্যক লাইসেন্স, গ্যাস-বিদু্যৎ সংযোগ ইত্যাদি পরিষেবা সরবরাহের বিনিময়ে ঘুষ নেওয়া খুব সাধারণ বিষয়। যদিও গ্রাহকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে ঘুষ প্রদান করেন। তবে অনেক কর্মকর্তা তা পেয়ে যান। যদি পরিষেবাগুলো অনলাইনে শুরু হয়, তবে এই দুর্নীতি বন্ধ হবে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, প্রযুক্তির আধুনিকায়নে দুই বছর সময় নেওয়ার কথা নয়। অন্যান্য সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর উৎসাহের অভাবে ওয়ান স্টপ পরিষেবাটি এখনো অবনমিত রয়েছে। কোনো সংস্থারই আইনানুগভাবে চুক্তিটি বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা নেই। ওএসএসকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা আবশ্যক বলে এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন।

ওয়ান স্টপ সার্ভিসের সামগ্রিক পরিস্থিতির বিষয়ে বিডা ডিরেক্টর (ওয়ান স্টপ সার্ভিস অ্যান্ড রেগুলেটরি রিফর্ম) জীবন কৃষ্ণ সাহা জানান, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়। বিডা ওএসএসের আওতায় ৪৩টি সেবা প্রদানের কথা থাকলেও বর্তমানে ২১টি পরিষেবা সরবরাহ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে বিডা নিজেই ১৪টি এবং অন্য সংস্থাগুলো সাতটি পরিষেবা সরবরাহ করে। আরও ৪৫টি পরিষেবা বিডা ওএসএসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী বিডার এই অনলাইন পস্ন্যাটফর্মের মাধ্যমে মোট ৩৫টি সংস্থার ১৫৪টির বেশি পরিষেবা সরবরাহ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113722 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1