শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রোববার নির্দেশনা আসছে

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে ফেব্রম্নয়ারির প্রথম সপ্তাহে

জুনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
আমানুর রহমান
  ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

ফেব্রম্নয়ারির ১ম সপ্তাহে সীমিত আকারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে ৪ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে খোলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্দেশনা জারি করা হবে আগামী রোববার। এ ছাড়া আগামী জুনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে।

বৃহস্পতিবার বিকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অতিরিক্ত সচিব এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবদ্বয় সব অতিরিক্ত সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান, আন্তবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকরা ভার্চুয়াল এ বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।

বৈঠকে সরকার যে গুচ্ছ শিক্ষা পরিকল্পনা নিয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের ব্যাপারে নীতিগত একমত হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ পরিকল্পনা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আগামী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে এটি শিক্ষা বোর্ডগুলো প্রকাশ করবে। এ সিলেবাস অনুসারেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ক্লাস শুরু হবে। খোলার পর ক্লাস হবে প্রথমে দশম শ্রেণির পরে ধীরে ধীরে অন্য শ্রেণির ক্লাস খোলা হবে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, সিনিয়র শিক্ষক ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ১২ কর্মদিবসে চারটি কর্মশালা করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির জন্য মোট ৩৬টি পাঠ্যবইয়ের জন্য নতুন সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছ। তার মধ্যে নবম শ্রেণিতে পড়ানো হয়েছে এমন বিষয়ের মধ্যে যেগুলোর সঙ্গে দশম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক মিল রয়েছে সেব বাদ দেওয়া হয়েছে। একাদশ শ্রেণির সঙ্গে মিল রয়েছে সেগুলোও কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে প্রতিটি বিষয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রস্তাব করেছে এনসিটিবি।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান যাযাদিকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। তার আলোকে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, 'সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিটি বিষয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বিষয় কমানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে গিয়ে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি মাথায় রেখে সিলেবাস কমানো হয়েছে।

\হ

পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশে বিল পাসের সুপারিশ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিশেষ কারণে পরীক্ষা ছাড়াই পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশে বাধা দূর করতে সংসদে উত্থাপিত তিনটি বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে অনুমোদনের সুপারিশ করে।

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বিল তিনটির প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করে তা পাসের সুপারিশ করেন। সংসদের পরবর্তী বৈঠকে বিল তিনটি পাস হতে পারে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার পর ফল দেওয়ার বিধান রয়েছে। সংশোধিত বিলে পরীক্ষা ছাড়াই বিশেষ পরিস্থিতিতে ফলাফল প্রকাশের সুযোগ রাখা হয়েছে।

১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে।

কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মতো এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না।

সেদিন তিনি জানান, অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষিত হবে।

কিন্তু আইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের বিধান থাকায় গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আর ফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে নতুন বছরের শুরুতেই ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সংসদ অধিবেশন বসার সময় হয়ে যাওয়ায় অধ্যাদেশের ঝামেলায় না গিয়ে একেবারে সংসদে বিল পাস করার পক্ষে মত দেয় মন্ত্রিসভা। গত ১১ জানুয়ারি ওই আইন তিনটি সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মঙ্গলবার 'ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১', 'বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১', 'বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১', সংসদে উত্থাপন করেন।

পরে ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন বিলটি একদিনের মধ্যে এবং বাকি দুটি দুদিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

শিক্ষামন্ত্রী সংসদকে জানান, শিক্ষার্থীদের ফলাফল ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে, বিল পাস হলেই তা দ্রম্নত প্রকাশ করা যাবে।

হাইকোর্টে রিট

অবিলম্বে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন ভাওয়াল মির্জাপুর পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকার।

অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী এ রিট করেন। তিনি বলেন, রিটে শিক্ষাসচিব, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, উপসচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। নোটিশের পরেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ রিট করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছিল, কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মোট ১১ বার বন্ধের সময় বাড়ানো হয়েছে। ১৬ জানুয়ারির পর আর বন্ধের সময় বৃদ্ধি না করতে ওই নোটিশে অনুরোধ করা হয়েছিল।

রিটকারীর আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, টিভি দেখে সময় কাটাচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ব্যবহার করে খারাপ অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে।

মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে, সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে