শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবিলায় টিকার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধিও জরুরি

জাহিদ হাসান
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

বাংলাদেশে করোনায় এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৮১ জনের মৃতু্য হয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩০ হাজার ৮৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিন আসার সংবাদে গত কয়েকমাস দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে গেছে। এমনকি সরকারের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বর্তমানে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ছাড়া ভাইরাসটি সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো কাজ নেই। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক না পরেই বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন। শীতকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্ব হারিয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ভ্যাকসিন আসার পর জনসাধারণের মাঝে কিছুটা আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। অথচ এখনো ব্যাপকভিত্তিতে প্রয়োগ শুরু হয়নি। এছাড়া যে ভ্যাকসিন জনগণকে দেওয়া হবে সেগুলো ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন। ফলে কতদিন কার্যকারিতা থাকবে তারও যথাযথ সমীক্ষা হয়নি। তাই করোনা প্রতিরোধে শুধু ভ্যাকসিন যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানাও জরুরি।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল সভায় পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল করোনায় সংক্রমণ ও মৃতু্য বাড়ার পূর্বাভাস জানিয়েছে। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির পূর্বাভাসবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলটি বলেছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রম্নয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। জুন নাগাদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর সংখ্যা ১৭ হাজার হতে পারে। তবে তারা এ-ও বলছেন,

সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে সংক্রমণ ও মৃতু্য দুই-ই কমানো সম্ভব।

ওই দলে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ আবদুল হামিদ ও শাফিউন শিমুল, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাখখার হোসেন, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নুসরাত জেবিন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। দলটি গত মে মাস থেকে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে সরকারকে নিয়মিত বিরতিতে করোনা সংক্রমণের পূর্বাভাস দিয়ে আসছে।

পূর্বাভাসে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আগামী জুন পর্যন্ত করোনায় আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃতু্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও বর্তমানে দেশে মৃতু্যহার কম। তবে মৃতু্যহার কেন কম তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, ব্যাখ্যা করাও সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে একাধিক জনস্বাস্থ্যবিদ যায়যায়দিনকে বলেন, দেশে ভ্যাকসিন এলেও ব্যাপকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়নি। ভ্যাকসিন শরীরে কতদিন কার্যকর থাকবে সে ব্যাপারেও তেমন গবেষণা হয়নি। তাই মহামারিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই, উচিতও না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধের কাজগুলোতে আরও জোর দিতে হবে।

তারা বলছেন, সরকারি হিসাবে গত বছরের নভেম্বরের শুরু থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এরপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ আবার কিছুটা কমতে দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ালেও পরীক্ষার পরিমাণ বাড়েনি। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় দৈনিক নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কম হচ্ছে। কম পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সংক্রমণের সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। দেশে দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হওয়া দরকার। এই সংখ্যক পরীক্ষা কোনোদিন হয়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। ফেব্রম্নয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামতের ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

শুক্রবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আয়োজিত এ সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী বলেছেন, ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের যে টিকা বাংলাদেশে এসেছে তা মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। ফলে করোনা মোকবিলায় টিকা স্থায়ী সমাধান নয়। তিনি বলেন, ভারত থেকে উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে, এটি একটি সুখবর। কিন্তু ভারতে বহু মানুষ টিকা নিতে অস্বীকার করছে। যেসব ভ্যাকসিন দেশে আসছে, নিয়মমাফিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সেগুলো নিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে হবে। এসব কাজে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, গবেষকদের যুক্ত করতে হবে। কৃষক-শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষও যেন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব হবে না।

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'এখন যে ভ্যাকসিন জনগণকে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে বলা হয় ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় একে ভ্যাকসিনের ফোর্থ ট্রায়ালও বলা হয়। হাজার হাজার মানুষকে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আবার বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।'

এই ভাইরোলজিস্ট আরও বলেন, 'সাধারণত ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন নেওয়া হয় না। এখন আমাদের হাতে সময় কম থাকায় ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন নিতে হচ্ছে। রূপান্তরিত করোনাভাইরাসেও ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা থাকবে। তবে এই কার্যকরিতা ছয় মাসের বেশি থাকবে না। ফলে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সবাইকে ইমোশনাল না হওয়ার পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধের কাজগুলোতে আরও জোর দিতে আহ্বান করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে