বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
কদর বেড়েছে ফুটপাতে বিক্রি করা শীতবস্ত্রের

কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা

স্বদেশ ডেস্ক
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠান্ডায় কাহিল নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা শীত নিবারণে ভাসমান দোকানগুলোতে ভিড় করছেন। ওইসব দোকানের গরম কাপড়ের কদর বেড়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, তাপমাত্রা কমতে থাকায় কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ফলে মানুষ দিনরাত গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে ধরে রয়েছেন। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার কুয়াশা কিছুটা কমেছে। তারপরেও রাতে বৃষ্টির মতো ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে কুয়াশা।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে ৩ হাজার কম্বল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিতরণ করেছেন বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান।

ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, ছিন্নমূল ও অতি দরিদ্র মানুষজন। এ ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তা ও ধরলা নদী তীরবর্তী চরবাসী। শীত ও কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজে যেতে না পারায় কষ্টে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।

রাজারহাট উপজেলার নাজিম খান ইউনিয়নের গোলজার হোসেন বলেন, 'আমি হোটেলে কাজ করি, সকালে পানির কাজ করতে হয়। ঠান্ডার কারণে হাত পা বরফ হয়ে যায়। কয়েকদিন থেকে ঠান্ডা বেশি পড়ছে। বৃহস্পতিবার কুয়াশা একটু কম, কিন্তু ঠান্ডার মাত্রা কমেনি।'

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এ হাসপাতালে সর্দি-জ্বরের রোগী তেমন ভর্তি নেই। তবে কয়েকদিনে শীতজনিত আউটডোরে ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, এই জানুয়ারি মাসে ১-২টি শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জন-জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনের টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঠান্ডা হওয়ায় বিপদে পড়েছে নিম্ন আয়ের লোকজন। প্রচন্ড শীতে শ্রমজীবী মানুষ মাঠে কাজে যেতে পারছেন না। ফলে দরিদ্র পরিবারগুলো এখন চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ায় দুপুর পর্যন্তও সূর্যের দেখা মিলছে না। এদিকে শীত বস্ত্রের অভাবে দরিদ্র লোকজন খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশার প্রভাবে রবি শস্যসহ বোরো বীজ তলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় শিশু-বৃদ্ধরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তানভীর হানান জিকু জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা। ভুগছে শিশু-কিশোর ও বয়স্ক লোকজন সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত রোগে। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শিশু ও বড়দের শীতের পোশাকের কদর বেড়েছে ফুটপাতের দোকানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট কেনাবেচা হচ্ছে ভাসমান দোকানগুলোতে।

দেখা যায়, বৃহস্পতিবার কটিয়াদী সাপ্তাহিক হাট বাজার উপলক্ষে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তার পাশে, কটিয়াদী সরকারি কলেজের সামনে রাস্তায় ও কটিয়াদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনেসহ বাজারে বিভিন্ন স্থানে ভাসমান দোকানিরা শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ রিকশাভ্যানে কমদামি শীতের পোশাক, আমদানি করা পুরনো শীতের পোশাক ফেরি করছেন অলিগলিতে। বেশি বিক্রি হচ্ছে শিশুদের সোয়েটার, মোটা কাপড়ের গেঞ্জি সেট, মাথার টুপি, হাত ও পায়ের মোজা, ছোটদের কম্বল, লেপ-কাঁথা, গলাবন্ধনী, শাল ইত্যাদি।

শীতের পোশাক কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম ও মো. সোহাগ নামের দুই বন্ধু জানান, 'শীতের কাপড় কিনতে আমরা দুই বন্ধু বাজারে এসেছি। শৈত্যপ্রবাহ থাকার কারণে বাজারে শীতের কাপড়ের কদর বেড়েছে। মোটা কাপড়ের গেঞ্জিসেট কিনব, যেন শীতে সমস্যা না হয়।'

কটিয়াদী বাজারের ফুটপাত ব্যবসায়ীরা বলেন, শৈত্যপ্রবাহে কারণে শীতের কাপড় বিক্রি বেশ ভালো। ছোটদের পোশাকের পাশাপাশি বড়দেরও শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। শীত বেশি হলে ভারী গরম কাপড়ের চাহিদা যেমন বাড়বে তেমনি দামও বাড়তে পারে।

তারা জানান, ফুটপাতে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের গরম পোশাক। যার মধ্যে রয়েছে শিশুদের জিন্সের ফ্রক, স্কার্ট, উলের পোশাক, বেবি কিপার, রেকসিনের জ্যাকেট, ওভারকোট, কার্ডিগান, মাফলার ও নতুন ডিজাইনের কানটুপি। এসব পোশাক দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে