বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
জ্বালানি সাশ্রয়ে পরিকল্পনা

'কার হলিডে'সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ দিন বন্ধের প্রস্তাব

'কোনো কিছুই বন্ধ করে নয়' বরং কিছুটা সচল রেখেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা
আমানুর রহমান
  ২৮ জুলাই ২০২২, ০০:০০
'কার হলিডে'সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ দিন বন্ধের প্রস্তাব

জ্বালানি সাশ্রয়ের পরবর্তী পরিকল্পনা হিসেবে 'কার হলিডে'সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ দিন বন্ধ এবং আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। এছাড়াও আর কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় তারও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সরকারের আসন্ন পরিকল্পনা হচ্ছে 'কোনো কিছুই বন্ধ করে নয়', বরং কিছুটা সচল রেখেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। গত সপ্তাহে ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর অতিরিক্ত হিসেবে ওই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এগুলো আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর করার ঘোষণা আসতে পারে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এছাড়া অকটেন এবং পেট্রলের দাম বাড়ানো হতে পারে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে। এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ধরনের একটি প্রস্তাবও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, আরও যে সব পদক্ষেপ সরকারের বিবেচনায় রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের বড় বড় শপিংমল পালাক্রমে বন্ধ রাখা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যানবাহন আরও সীমিত করা এবং সরকারি-কর্মকর্তাদেরও জ্বালানি ব্যবহার আরও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা। এ সব বিষয়গুলো সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের পরই ধীরে ধীরে ঘোষণা করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৫ শতাংশ বিদু্যৎ সাশ্রয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি আগামী সপ্তাহ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শ্রীলংকার মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলে ওই তিন দিনের পাঠদান ও পাঠ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেটি অন-লাইনেও হতে পারে, অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিনও হতে পারে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সরকারের নির্দেশনার পরই এ পরিকল্পনা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

করোনাপরবর্তী সময়ে আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ সম্পর্কে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ব্যাপারে প্রস্তাবনা বা সুপারিশ করা হবে, সেটি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেবে। তিনি জানান, এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মৌখিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের (জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের) পরিকল্পনা ও বিবেচনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

জ্বালানি সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে বর্তমানে রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট-শপিং মল খোলা রাখা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বড় শপিং মল পালাক্রমে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে। যেমন কোন শপিং মল কোন দিন বন্ধ থাকবে- তা স্থানীয় প্রশাসন নির্ধারণ করে দেবে। এ নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য মনিটরিংও জোরদার করা হবে। কারণ রাজধানীসহ সারাদেশে শপিং মল রাত ৮টার পর বন্ধ রাখার বিষয়টি যথাযথভাবে প্রতিপালন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, জ্বালানি তেলে দাম বাড়ানোরও পরিকল্পনা করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ নিয়ে বেশ আগে থেকেই কথা বলছেন। এখন যে বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে, তা হলো- শুধু অকটেন-পেট্রলের দাম আবার বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভর্তুকি কমিয়ে আনতে চায় সরকার। এ ব্যাপারে আগামী সপ্তাহে সরকারি ঘোষণা আসতে পারে।

এ ব্যাপারে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে, অকটেন মূলত ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটর সাইকেলসহ দামি গাড়িতে ব্যবহার হয়। ডিজেল যেহেতু কৃষি সেচ কাজ এবং সাধারণ মানুষ বেশি ব্যবহার করে, ফলে আপাতত ডিজেলের দাম নাও বাড়তে পারে। তবে, সেটিও বাড়বে আন্তর্জাতিক বাজার দরের গতি প্রকৃতির বিশ্লেষণ শেষে। তবে অকটেন এবং পেট্রলের দাম বাড়ানো হতে পারে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, জ্বালানি সাশ্রয়ের আরও বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে, বিশেষ করে জাপানসহ অন্যান্য উন্নত জনবহুল দেশের আদলে 'কার হলিডে' চালু করা। সপ্তাহে একদিন গাড়ি বন্ধ রাখা। অর্থাৎ একদিন জোড় নাম্বারের গাড়ি চলবে, আরেকদিন বিজোড় নাম্বারের গাড়ি রাস্তায় থাকবে। এতে প্রতিদিন অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় চলা কমে যাবে। তবে পরিবহণ সংকটে মানুষের চলাচলে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সেদিকও ভাবা হচ্ছে। এর বিকল্প চিন্তাও রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। সেটি হচ্ছে শুধু ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হতে পারে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, দেশে ডিজেল যে পরিমাণ ব্যবহার হয়, তার ৯০ শতাংশই ব্যবহার হয় পরিবহণ খাতে। ফলে পরিবহণ খাতে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল কমিয়ে আনার কথা ভাবতে হচ্‌েছ। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গাড়িতে ২০ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি আরও বাড়াতে পারে। যার ঘোষণা আগামী সপ্তাহে আসতে পারে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। আগামী সপ্তাহ থেকে সেটি কার্যকর হতে পারে। তবে সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প কী প্রক্রিয়ায় বন্ধ রাখা হবে, তার কৌশল নিয়ে পরিকল্পনা করছে সরকারের জ্বালানি বিভাগ। বিশেষ করে মহাসড়কে যেসব পেট্রোল পাম্প আছে, সেগুলো চালু রেখে শহরকেন্দ্রিক পেট্রোল পাম্প সপ্তাহে একদিন বন্ধ রাখা হবে। একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখলে কী পরিমাণ জ্বালানি সাশ্রয় হবে, সেটির পরিসংখ্যান নেই। ফলে সেটি আগামী সপ্তাহ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হতে পারে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা বিশ্বে বর্তমানে যে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছে, সেটি থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। এর জন্য সবাই যদি সাশ্রয়ী হয়, তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

\হএ ব্যাপারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় জ্বালানি সাশ্রয় করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। এ জন্য দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে