সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাংবাদিক হেনস্তা, সংঘর্ষ ও আবাসিক হল ভাঙচুরসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার দায়ে ১৭ ছাত্রলীগ কর্মী এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের এক কর্মীসহ ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, '৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ ও ডিসিপিস্ননারি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কারাদেশ ৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ১১ আগস্ট খালেদা জিয়া হলে ছাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তাসফিয়া জাসারাত নোলককে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর এক কর্মরত সাংবাদিককে শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার ঘটনায় দুইজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরশিল আজিম নিলয় ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শোয়েব মোহাম্মদ আতিক।
গত বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের প্রভোস্ট কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হাসান মাহমুদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই ঘটনায় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলামকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া গত ২ ডিসেম্বর এ এফ রহমান হলে দেশীয় অস্ত্র হাতে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, হল কক্ষ ভাঙচুরসহ মূল্যবান সম্পদ বিনষ্ট ও দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা হুমকি প্রদর্শনের ঘটনায় আরও ছয়জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারা হলেন- সংস্কৃত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অয়ন কান্তি সরকার, একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের লাবিব সাঈদ ফাইয়াজ, ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিফাতুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. মোবারক হোসেন ও একই সেশনের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের নাহিদুল ইসলাম।
এছাড়া বিভিন্ন শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার দায়ে আরও ছয়জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। তারা হলেন- ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল হক চৌধুরী, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসেন ইলিয়াস, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফাহিম, ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইকরামূল হক, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নয়ন দেবনাথ। শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সুনাম বিনষ্টের দায়ে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী মো. জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়াও বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ এন্ড ডিসিপিস্নন কমিটি যে সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো-
১. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গোপন/সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী যেকোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সম্ভাব্য মাদক বিক্রির স্পট ও মাদক সেবনের স্থানসমূহে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানকারী ছাত্রত্ববিহীন (প্রাক্তন/সাবেক/ বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এরূপ ব্যক্তিবর্গদের ক্যাম্পাস ত্যাগকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথা পুলিশ, ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় গ্রহণ করা। ৩. সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত একাধিক ঘটনায় দেখা যায় যে, কতিপয় জুনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসদাচরণ, সন্ধ্যা পরবর্তী/রাতে সংঘর্ষে জড়ানো, অনিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন, বৈদু্যতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্ধকারাচ্ছন্ন করাসহ সামগ্রিক বিষয়টি 'ওভার সুপেরিয়টিতে' ভোগার শামিল। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
Google News ফিড অনসরণ করুন
