সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে মসলার দাম আরও বাড়ার শঙ্কা

রেজা মাহমুদ
  ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

এবার কোরবানির ঈদের বহু আগেই চড়া দেশের মসলার বাজার। বিদ্যমান ডলার সংকট ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপে আমদানি হ্রাসে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ফলে গত ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের মসলা পণ্যের দাম ৩ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে যা আরও অস্থির হয়ে উঠেতে পারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার তুলনায় কম আমদানিতে সরবরাহ সংকট দেখা দেওয়ায় বাজারে কিছু কিছু মসলা পণ্যের দাম বাড়তি। এই সুযোগে বিভিন্ন সিন্ডিকেট মজুদ বাড়িয়ে বিশেষ করে ঈদকে টার্গেট করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এতে ঈদের আগে মসলা পণ্যের দাম আরও বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত ৩ মাসের মসলা পণ্যের বাজার দর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মার্চে আমদানি আদার কেজি ১২০ টাকা; যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়; জিরা ৩৫০ টাকা যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। একই ভাবে ৩ মাসের ব্যবধানে লবঙ্গ ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০০ টাকা, এলাচ ১০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০০ টাকা, মৌরি ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা, জয়ফল ২ হাজার থেকে বেড়ে ৩ হাজার টাকা, গোলমরিচ ৫০০ থেকে বেড়ে ৬৮০ টাকা, দারুচিনি ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা, ধনে ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা, সরিষা ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকা, লাল মরিচ ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকা হয়েছে।

বিভিন্ন মসলা পণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের আগে বার্মা আদার আমদানি বাড়লে আদার দাম কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু তাও স্বাভাবিক দামের থেকে অনেক বেশি থাকবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জিরা ছাড়া কোনো মসলা পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি। এর বিপরীতে অনেক মসলার দাম ১০-১৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে গড়ে বিভিন্ন মসলার দাম ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে কোরবানির ঈদে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশে গরম মসলার চাহিদা ৪ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ৬ মাসে যে পরিমাণ গরম মসলা বিক্রি হয়, এক কোরবানির ঈদে তার থেকে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। বিশেষ করে আদা, জিরা, গোলমরিচ, লবঙ্গ ও এলাচের চাহিদা থাকে সব থেকে বেশি।

অন্যদিকে আমদানি শুরু হওয়ায় প্রায় ২ মাস দেশের বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। চলতি সপ্তাহে বাণিজ্য সচিব নিত্যপণ্যের আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়েছেন। বলেছেন, ঈদের আগে বার্মা আদার সরবরাহ বাড়লে আদার দামও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু অন্যান্য মসলা পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে কিছু জানা যায়নি। ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদের আগে এসব মসলা পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ও মসলা আমদানিকারকরা জানান, বাংলাদেশের অধিকাংশ মসলা পণ্যই আমদানি হয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ থেকে। এলসি খোলা হলে পণ্য পেতে সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট থাকায় বাড়তি দাম দিয়েও এলসি খুলতে না পারায় পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়াও বিলাসী পণ্য হিসেবে মসলা আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করায় তা আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে।

তবে পাইকারি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ বলেন, ডলার সংকট গত বছর থেকেই চলছে কিন্তু এমন পণ্যের সংকট দেখা যায়নি। মূলত ঈদে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমদানিকারকরা বাড়তি দাম অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আসায় আমদানি সীমিত রেখেছেন। বিশেষ করে আদা, জিরা ও এলাচের নিত্য ব্যবহার রয়েছে। ঈদ ছাড়াও এসব মসলা পণ্যের চাহিদা থাকে। কিন্তু বাজারে গত ৩ মাস ধরে চাহিদার মাত্র ৪০-৬০ শতাংশ পণ্যের সরবরাহ পাচ্ছি।

এই ব্যবসায়ী বলেন, এখনো সময় আছে, ভারত কিংবা মিয়ানমার থেকে মসলা আমদানি করা হলে সর্বোচ্চ ৭ দিন সময় লাগবে দেশে আসতে। যদি তা না করা হয় ঈদে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে গরম মসলার দাম।

মসলার(কেজি) মার্চের দাম (টাকা) জুনের দাম (টাকা) দাম বেড়েছে (টাকা)

আদা ১২০ ৩৫০-৪৫০ ১৮০-২৫০

রসুন ১২০ ২৬০ ১৪০

জিরা ৩৪০ ৯০০ ৫৬০

লবঙ্গ ৭০০ ১৫০০ ৮০০

এলাচ ১০০০ ১৬০০ ৬০০

জয়ফল ২০০০ ৩০০০ ১০০০

মৌরি ১১০ ৩২০ ২১০

গোল মরিচ ৫২০ ৬৮০ ১৬০

দারুচিনি ২৫০ ৩৩০ ৮০

ধনে ১২০ ১৮০ ৬০

লাল মরিচ ২৫০ ৪৫০ ২০০

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে