শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে ইস্পাতের দরপতনে কমেছে আকরিক লোহার দাম

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

যুক্তরাষ্ট্রের পরই বিশ্ব অর্থনীতির একটি বড় নিয়ন্ত্রক দেশ চীন। এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশটিতে কোনো পণ্য বা সেবার মূল্য, আমদানি, রপ্তানির ওঠানামার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি আকরিক লোহার বাজারেও এমন প্রভাব লক্ষ করা গেছে। এক সপ্তাহ আগে চীনের ইস্পাত মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড করলেও সর্বশেষ দরপতন ঘটেছে ইস্পাতের বাজারে। ফলে কমেছে বৈশ্বিক আকরিক লোহার দামও। খবর রয়টার্স ও মাইনিং ডটকম।

লোহার অপরিহার্য উপাদান আকরিক। আবার ইস্পাত উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল লোহা। মোটরগাড়ি, রেল ইঞ্জিন, জাহাজসহ বিভিন্ন বড় বড় শিল্পের জন্য ইস্পাত একটি অপরিহার্য উপাদান। তাই ইস্পাতের দামের পরিবর্তনের সঙ্গে আকরিকের মূল্যেরও উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।

অন্যদিকে আকরিক লোহা উৎপাদনে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলের পরই তৃতীয় অবস্থান চীনের। আবার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে পণ্যটির শীর্ষ আমদানিকারকও দেশটি। তাই আকরিক লোহার দাম পরিবর্তনের পেছনে সর্বদা চীনের একটা বড় ভূমিকা থাকে।

বৈশ্বক বাজারের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহকারী সংস্থা ফাস্টমার্কেট এমবির মতে, উত্তর চীনের সিএফআর কুইংদাও বাজারে গত সপ্তাহে আকরিক লোহার দাম ছিল টনপ্রতি ১৭৩ ডলার ১০ সেন্ট, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ কম। আর সর্বশেষ এপ্রিলে সরবরাহ মূল্য ৫ শতাংশ কমে ডালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে চলতি সপ্তাহে আকরিকের দাম দাঁড়িয়েছে ১৪৯ ডলার ৩৪ সেন্টে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের শীর্ষ নির্মাণ ও শিল্প-কারখানার যন্ত্রপাতি উৎপাদক দেশ চীনের সাম্প্রতিক ইস্পাত উৎপাদনের নিম্নগতি আকরিক লোহার দরপতনে ভূমিকা রেখেছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি লোহা ও ইস্পাত উৎপাদনে নতুন নীতিমালা গ্রহণ করেছে চীন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে সম্প্রতি শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদনক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশটি। চীনের সাকল্যে লোহা উৎপাদনক্ষমতা ২০২০ সালে ছিল ১০৩ কোটি ২০ লাখ টন। সেখান থেকে কমিয়ে সম্প্রতি ৯৯৮ কোটি টনে লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে দেশটি।

মূলত এমন কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে চীনের স্টিল উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে ইস্পাতের চাহিদা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে চীনের শিল্প-কারখাগুলো। মূলত এসব কারণে ইস্পাতের পাশাপাশি কমে গেছে আকরিক উৎপান, একই সঙ্গে কমে গেছে আকরিকের দামও।

সিনো স্টিল ফিউচারসের মতে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে আকরিক লোহার মজুদ একটি বড় পরিমাণে কমে আসবে। ফলে বৈশ্বিক ইস্পাতের দাম হঠাৎ করেই আরো বেড়ে যাবে।

এদিকে চীনের পাশাপাশি এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও আকরিক লোহার দরপতন পরিলক্ষিত হয়েছে। সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জে আগামী মে মাসে সরবরাহ মূল্য কমেছে

দশমিক ৫ শতাংশ। বাজারটিতে আকরিক লোহার মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ১৬৪ ডলার ৪০ সেন্টে।

পরামর্শক সংস্থা স্টিলহোমের মতে, স্পট মার্কেটে চীনের আকরিক লোহার দাম বেড়েছে গত বৃহস্পতিবারে। এর মাধ্যমে বাজারে আকরিক লোহার দাম ছিল চার সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চে। স্পট মার্কেটে আকরিক লোহার মূল্য স্থিয় হয় টনপ্রতি ১৭০ ডলার ৫০ সেন্টে।

স্টিল প্রস্তুতের প্রধান কাঁচামালের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করে অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং গ্রম্নপের পণ্যকৌশলবিদরা বলেন, চীনের ইস্পাতের দরপতনের কারণেই আকরিক লোহার দামও কমে গেছে। গত বুধবার রেকর্ড পতনের পর থেকেই নিম্নমুখী চীনের ইস্পাতের ভবিষ্যৎ সরবরাহ বাজার (ফিউচার মার্কেট)। সাংহাই ফিউচার এক্সচেঞ্জে ইস্পাতের রিবারের দাম কমেছে ১ শতাংশ। এছাড়া হট-রোলড কয়েলের দামও ১ শতাংশ কমেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে