শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধুপুরের বংশাই নদীতে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ করলেন গ্রামবাসী

হাফিজুর রহমান. ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ১৮ জুন ২০২১, ২১:২২

কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ দিয়েছেন টাকা আর কেউ দিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রম- এভাবেই সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছেন এ বাঁশের সাঁকোটি।

স্থানীয় লোকজন অনেক দিন ধরে বিভিন্ন দফতরে ধর্ণা দেয়ার পরও টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী ইউনিয়নের লোকদেও- মধুপুর পৌরসভার কাতকাই গ্রামের একমাত্র যোগাযোগস্থল বংশাই নদীর উপর সেতু নির্মাণ হয়নি। প্রতি বছরের মত এবারো স্বেচ্ছাশ্রমে সেখানে বাঁশ দিয়ে প্রায় ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকো নির্মাণ করেছেন নদীর পাশের দুই গ্রামের বাসিন্দারা। এতে কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ দিয়েছেন টাকা আর কেউ দিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রম- এভাবেই সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন। এ বাঁশের সাঁকোটি হওয়ায় গোলাবাড়ী ইউনিয়নের লোকদেও- পৌরসভার কাতকাই গ্রাম ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের সকল গনমানুষের চলাচলের পথ উন্মুক্ত হল।

জানা যায়, গোলাবাড়ী ইউনিয়নের লোকদেও- পৌরসভার কাতকাই গ্রামের বাসিন্দারা এ পথে নিয়মিত চলাচল করেন। এ পথে গ্রামের শিক্ষার্থীরা কাতকাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুর রানী ভবানী উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুর শহীদ স্মৃতি ম্যাধ্যমিক ও উচ্চ ম্যাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভাইঘাট আইউডিয়াল কলেজ, গোলাবাড়ী ইউনিয়নের লোকদেও- পৌরসভার কাতকাই গ্রামের ছেলে মেয়েরা প্রাইমারী স্কুল,হাইস্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। লোকদেও সহ আশ-পাশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা মধুপুর পৌর শহরে বাজারে কেনাবেচা করতে যান। কিন্তু এখানে সেতু না থাকায় তারা বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলার ভেলা বা একটি বাঁশের সঙ্গে আরেকটি বাঁশ বেঁধে তৈরি বাঁশের সাঁকো (আড়) দিয়ে নদী পারাপার হন। এতে কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করতে না পারার পাশাপাশি চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হন তারা। রোগী নিয়ে হাসপাতালে ঠিক সময় মত যাওয়া যায়না। জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে আবারো গ্রামের লোকজন নদী পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেন।

শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় শতাধিক লোক নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন। সাঁকো নির্মাণকে কেন্দ্র করে সেখানে যেন উৎসব চলছে। তাদের কেউ কেউ কেউ বাঁশ কাটছেন। আর কেউ বা বাঁশের টুকরো গুলো চেঁছে সমান করে দিচ্ছেন। আর কেউ পানিতে নেমে বাঁশের খুঁটির উপর বাঁশের ছোট টুকরো গুলোকে পেরেক মেরে ১ ফুট প্রস্থ ও ৮০’ ফুট দীর্ঘ বিশিষ্ট সাঁকো নির্মাণ করছেন। আর বয়স্করা বসে থেকে তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। আরেক পাশে সবার জন্য চলছে চা ও পান খাওয়ার আয়োজন।

গোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না অক্তার, রেশমা সহ আরো অনেক শিক্ষার্থীরা জানায়, সাঁকোর উপর দিয়ে যখন নদী পার হই মনে হয় কখন যেন পড়ে যাই। খুব আতংষ্কে থাকি। তবে আমাদের দাবী এখানে একটি দ্রুুত বীজে নির্মাণের দাবী।

কাতকাই গ্রামের আব্দুল মালেক ও ভোলা ড্রাইভার বলেন, জানান, আমাদের ছেলেমেয়েরা নদীর ওপারের স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। কলার ভেলায় বা অনেক দূর দিয়ে ঘুরে তাদের যেতে হয়। এতে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কায় থাকতে হয়। তাই গ্রামের লোকজন সাঁকোটি নির্মাণ করেছেন।

ভাইঘাট আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন, সুজন ও সিয়াম আহমেদ জানান, আমরা সকলেই খুব সমস্যায় রয়েছি এই বংশাই নদীর উপর ব্রীজ না থাকায়। আমরা সঠিক সময়মত যোগাযোগ ব্যাবস্থা খারাপ থাকায় কোন কাজ আমরা ঠিকমত করতে পারছিনা।

গোলাবাড়ী ইউনিয়নের লোকদেও গ্রামের অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য সার্জেন্ট মতিউর রহমান, ছলিম উদ্দিন, ইয়াকুব আলী,ছামাদ আলী, জুবায়ের খান সহ আরো অনেকে এখানে একটি সেতুর জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ বিভিন্নজনের কাছে ঘুরেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আপাতত সাঁকোটি নির্মাণ করে চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রাখা হচ্ছে। তবে এখানে সরকারীভাবে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি স্থানীয় কৃর্তপক্ষ সহ মধুপুর-ধনবাড়ী আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি মহোদয়ের নিকট জোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

গোলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খান বাবলু জানান, লোকদেও গ্রামটি আমার গোলাবাড়ী ইউনিয়নের মধ্যে কিন্তু নদীর অর্ধেকাংশ মধুপুর পৌরসভার কাতকাই গ্রামের মধ্যে পড়েছে। তবে এখানে একটি ফুট ব্রীজ হলে ঐ অঞ্চলের লোকজনের চলাচলের অনেক সুবিধা হতো। এখানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ হওয়ায় এলাকাবাসীর চলাচলে সুবিধা হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে একটি সেতু নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষ কে বার বার তাগিত দেওয়া হচ্ছে। তবে দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে