শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আব্বু শেষবার আমার কপালে চুমু দিয়েছিল: নুসরাত

নওগাঁ প্রতিনিধি
  ১৭ মে ২০২২, ১৫:০৪

আম্মুকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে রাজশাহীতে যাওয়ার আগে আব্বু আমাকে বলেছিল, আম্মু নুসরাত আমরা সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়িতে চলে আসবো। বাড়িতে ফিরতে তোমার জন্য অনেক খাবার আনবোনি আম্মু, তুমি স্কুলে যাও। কিন্তু আব্বু,আম্মু আর ছোটো কেউ ফিরে আসলোনা সুস্থ্যভাবে। সবাই মারা গেল আমার আর কেউ রইলোনা। এভাবেই মা,বাবা আদরের ছোট বোনকে হারিয়ে কান্না বিজরিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ১৩বছরের নুসরাত আক্তার।

গত রোববার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা এলাকায় আমান মসজিদের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের বাড়িই নওগাঁ জেলায়। এদের মধ্যে একই পরিবারের আছে তিনজন। তারা হলেন, নুসরাতের বাবা নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মকবুল হোসেন এর ছোট ছেলে আক্তার হোসেন (৩৫), নুসরাতের মা স্ত্রী বিথি খাতুন (৩২) এবং বছরের ছোট বোন মরিয়ম জান্নাত () অপর আরেক নিহত হলেন মান্দা উপজেলার ছোট বেলালদহ এলাকার ময়েজ উদ্দিন Ðলের ছেলে আব্দুল মান্নান (৪৮) একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুতে বর্তমানে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের মাতম।

গত সোমবার বিকেলে জানাজা শেষে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নুসরাতের বাবা,মা ছোট বোনকে। একসঙ্গে পাশাপাশি করবে শুয়ে আছেন একই পরিবারের তিনজন। গ্রামটিতে একসঙ্গে তিনজন সড়ক দৃর্ঘটনায় মৃ্ত্যুর ঘটনা এই প্রথম। স্থানীয় একালাবাসীর মাঝেও ঘটনাটি গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

নুসরাতের বড় চাচা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছোট ভাই, তার স্ত্রী ৪বছরের মেয়ে মারা গেল। এমন আঘাত কিভাবে সইবো আমরা। ভাতিজিটা এতিম হয়ে গেল। যদি কঠিন আইন থাকতো তার প্রয়োগ সঠিকভাবে করা হতো, তাহলে এত প্রাণ ঝড়তোনা সড়কে প্রতিদিন। আমাদের পরিবারের এই তিনজনও হয়তো বেঁচে থাকতো।

স্থানীয় বামইন উচ্চ বিদ্যালয় কলেজে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে নুসরাত আক্তার। বাবা, মা বোনের জানাজা এবং দাফন শেষে নুসরাত বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছে, তার কান্না যেন কেউ থামাতে পারছেনা। কথা বলার মত অবস্থায় নেই নুসরাত। তবুও নুসরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চাওয়া হলো, শেষবারের মত কি কথা হয়েছিল মা-বাবার সঙ্গে। এসময় নুসরাত কাঁদতে-কাঁদতে বললো, ভাইয়া আমার আর কেউ রইলোনা এই দুনিয়ায়। মা,বাবা ছোটবোন এখন শুয়ে আছে কবরে।

যখন সড়ক দুর্ঘটনা হয় আব্বুর সাড়া গায়ে রক্ত। যখন আমি আব্বুর কাছে গেলাম,তখন আব্বু হাত চোখ দিয়ে ইশারা করে আরো কাছে ডাকলেন। আমার মাথা নিচু করতে বললেন, তখন আমি মাথা নিচু করে আমার মাথা আব্বুর মুখের কাছে নিয়ে গেলাম। আব্বু তখন কপালে একটি চুমু দিলেন। তার পর আব্বুর দুচোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছিল। আব্বুর মাথায় হাত দিলাম বলালাম আব্বু কেঁদোনা। কিন্তু আব্বুতো কথা বলার মত অবস্থায় ছিলনা। সন্ধ্যার কিছুপর আব্বুও আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’

যাযাদি / এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে