রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংযোগ সড়ক বিহীন একাধিক সেতু নির্মাণ কাজে আসছে না একটিও

বেলাব (নরসিংদী) প্রতিনিধি
  ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩২

সেতুগুলো নির্মান করা হয়েছে প্রায় ১০-২০ বছর আগে। সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় স্থানে নির্মান করা এসব সেতু দিয়ে কোন মানুষ যাতায়াত করেনা। সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই ভূতুরে প্রকল্প দেখিয়ে সেতুগুলো নির্মান করা হয়েছে বলে অভিযোগ কলেজছাত্র আরিফুল ইসলামের।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট নির্মান প্রকল্পের আওতায় বেলাব উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অব্যবহৃত সেতুর সন্ধান পাওয়া গেছে । এসময় কলেজ ছাত্র আরিফুলের মত একাধিক গ্রামবাসি এসব সেতুর সুফল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয়রা জানান,সেতুগুলো নির্মানের এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। সেতুগুলো নির্মান করার পর কোন সংযোগ সড়ক না করায় এবং অপ্রয়োজনীয় স্থানে হওয়ায় সেতুগুলো ব্যবহার করতে পারছেনা স্থানীয়রা। বর্তমানে এসব অপরিকল্পিত সেতুগুলোর বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ভাংগন।

এদিকে অনেক আগেই দায়সারা ভাবে সেতুগুলো নির্মান করে প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে এসব সেতু নির্মানের নথিপত্রও চাপা পড়েছে পুরানো কাগজপত্রের নিচে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে অপ্রয়োজনীয় ও অব্যবহৃত এসব সেতু সবচেয়ে বেশি নির্মান করা হয়েছে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নে। কিছু সেতু নির্মান করা হয়েছে জঙ্গলে কিছু সেতু ফসলী জমিতে কিছু সেতু অপ্রয়োজনীয় স্থানে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করায় সেতুগুলোতে বর্তমানে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। দেখলেই বুঝা যায় প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই কোনরকম দায়সারা ভাবে নির্মান করা হয়েছে এসব সেতু।

বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাউয়ালেরচর উত্তরপাঁড়া গ্রামের ইয়াসিন মাষ্টারের বাড়ির কাছে জঙ্গলবিশিষ্ট একটি স্থানে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে স্থানীয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৪৬ টাকা ব্যয়ে নির্মান করে বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের অপ্রয়োজনীয় একটি সেতু। আড়িয়াল খাঁ নদের একপাশে রাস্তা ও অ্যাপ্রোচ বিহীন জঙ্গলময় স্থানে সেতুটি নির্মানের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৭ বছর। স্থানীয়দের অভিযোগ কোনরকমে একটি অপ্রয়োজনীয় স্থানে এই সেতুটি নির্মান করা হলেও কোন সুফল পায়নি তারা।

একই ইউনিয়নের দীঘলদীকান্দা গ্রামের স্লুইচগেট সংলগ্ন স্থানে একই অধিদপ্তরের আরেকটি সেতু মূল রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রায় বিশ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এই সেতুটির পাশাপাশি নির্মান করা হয় একটি স্লুইচগেট। ফলে নির্মিত স্লুইচগেটের উপর দিয়ে রাস্তা পাকাকরণ হওয়ায় আগের সেতুটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। সেতু এলাকার প্রকল্পের ব্যয় সম্বলিত কোন সাইনবোর্ড বা নেমপ্লেট না থাকা ও সংশ্লিষ্ট অফিসে কোন কাগজপত্র না পাওয়ায় সেতুটির নির্মান ব্যয় জানা যায়নি। ইউনিয়নের গোশালাকান্দা ও জালোকান্দা দুই গ্রামের মধ্যবর্তী একটি বিলের মাঝখানে ২০১০ সালে প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আরেকটি কালভার্ট। এক যুগ আগে এটি নির্মান করা হলেও সংযোগ সড়ক ও পাশ্ব রাস্তা না থাকায় ব্যবহার করতে পারেনি এলাকাবাসি।

এছাড়াও অ্যাপ্রোচ ছাড়াই বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের সূতিঘাট খালের ওপর নির্মান করা হয়েছে আরেকটি সেতু। আমলাব ইউনিয়নের পাহাড় উজিলাব এলাকায় ফসলী জমির উপর নির্মান করা হয়েছে একটি সেতু। সবগুলো সেতুই নির্মান করা হয়েছে জনবিচ্ছিন্ন স্থানে।

অনেকে মনে করছেন সেতু নির্মানের পূর্বে প্রকল্প এলাকা যাচাই না করা বা প্রকল্প চলাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি ও পরিদর্শন না করায় সেতুগুলো অপ্রয়োজনীয় স্থানে নির্মান করা হয়েছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে এসব সেতু নির্মান করে উত্তোলন করা হয়েছে সরকারের কয়েক কোটি টাকা।

কাশিমনগর এলাকার আব্দুল মোতালিব নামে একজন আক্ষেপ করে বলেন,কোন কাজেই আসছেনা ব্রীজগুলো। সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও লোকালয়হীন স্থানে এসব ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য।

বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজিয়া সুলতানা বলেন,কিছু ব্রীজের দুই পাশে সংযোগ সড়ক ও মাটি ভরাট করে দিলে হয়তো মানুষ চলাচল করতে পারবে।

বেলাব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা.নায়েমা তাবাছসুম শাহ অপ্রয়োজনীয় স্থানে এসব ব্রীজ নির্মানের ব্যাপারে বলেন,আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্রীজগুলো নিয়ে কিছু করা যায় কিনা এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে