বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

দাদা দাদীর ব্যাবহার করা তৈজসপত্র বিক্রমপুর জাদুঘরে দান

লৌহজং - মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:০৩
দাদা দাদীর ব্যাবহার করা তৈজসপত্র বিক্রমপুর জাদুঘরে দান

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে দাদা দাদীর ব্যবহার করা কাঁসা এবং পিতলের বাসনকোসন বা তৈজসপত্র বিক্রমপুর জাদুঘরকে দান করলেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের লৌহজং উপজেলা শাখার সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মোঃ কবির ভূঁইয়া কেনেডি। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রবিবার শ্রীনগর উপজেলার বালাসুর গ্রামের বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে এসব পুরোন তৈজস জিনিসপত্র দান করার সময় তিনি জানান, 'এখানে আমার দাদা দাদীর ব্যবহার করা জিনিস পত্র গুলো মা ব্যবহার করতেন এখন আর ব্যবহার হয় না কিন্তু মা এ সব জিনিস গুলো খুব যত্নে আগলে রেখেছিলেন তাহার শ্বশুর শাশুড়ির এই অমূল্য জিনিসপত্র। বাড়িতে না থাকায় অনেক জিনিস পত্র খোয়া গেছে। আজ মা নিজের হাতে জাদুঘরে দান করে মানুষের দেখার সুযোগ করে দিলেন এবং এতদিনের ভালোবাসার জিনিস পত্র গুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে মা খুব খুশি।'

লৌহজংয়ের ডহরী গ্রামের বাড়িতে জিনিস পত্র গুলো রক্ষিত ছিল আজ সে নিজে গাড়িতে করে এনে বিক্রমপুর জাদুঘরে দিয়ে গেলেন।

দানকৃত জিনিস পত্র গুলো হলো, পিতলের মটকা বড় ১টা, পিতলেব মটকা মাঝারি-১টা,তামার পাতিল ১টা,পিতলের চাল ধোয়ার পাতিল ১টা, পিতনের চিলনচি ১টা,কাঁসার লগন ১টা,পিতলের পানদান- ১টা,পিতলের বদনা ২টা, পিতলের জগ-১টা, তামার হুক্কা-১,পিতলের হুক্কা-১, তামার কল্কি ১টা, লোহার ইস্ত্রি-১টা এবং পিতলের হাতা/ রান্না করার চামচ বড় এবং মাঝারি সাইজের-৭টা সহ সর্বমোট মোট ২০টি তামা, কাঁসা এবং পিতলের সামগ্রী বিক্রমপুর জাদুঘরকে দান করেন।

দান সমূহ গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন লৌহজং উপজেলা শাখার কার্যকরী পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহলম বাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম,কার্যকরী পরিষদের সদস্য বেলায়েত হোসেন, বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল ও ম্যানেজার রেজাউল হক প্রমূখ।

এসময় বিক্রমপুর জাদুঘর এর পক্ষ থেকে কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মোঃ কবির ভূঁইয়া কেনেডি ও তাহার পরিবারের সদস্যদের প্রতি।

জাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ করার জন্য জাদুঘরের পক্ষ থেকে কিউরেটর প্রাচীন তৈজসপত্র, পাথর বা অন্যান্য ধাতু/চীনা মাটি ও মাটির নির্মিত থালা, বাসন, অতীত যুগের ব্যবহার্য সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারি, পুঁথি-পত্র, বই তালপাতায় বা হাতে বানানো কাগজে হাতে লেখা প্রাচীন গ্রন্থ, নৌকা, মৃৎশিল্প, পোড়ামাটির নিদর্শন, মূর্তি, কয়েন, অলংকার, হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম, প্রাকৃতিক সম্পদ, ধাতব শিল্পকর্ম, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, নকশিকাঁথা, কাঠের শিল্পকর্ম,পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত বস্তুগুলো নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে (প্রদর্শিত হচ্ছে) মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি। এই মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারির জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি,শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, বই-পত্র অন্যান্য সামগ্রী। নৌ জাদুঘরের জন্য নৌকা পেলেই জাদুঘরটি সমৃদ্ধ হবে। সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় বিক্রমপুর জাদুঘর দেশের মধ্যে একটি উচ্চমানের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে উঠুক এটা আমাদের একান্ত কামনা। আমরা চাই প্রত্যেকেই আমাদের প্রচেষ্টার সহযাত্রী হোন - সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই 'বিক্রমপুর জাদুঘর'-এ প্রত্ন ও প্রাচীন সামগ্রী দান করে আপনিও হতে পারেন জাদুঘর গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন যে, 'আমরা প্রতিটি বস্তুর প্রাপ্তির পাকা রশিদ বা দানপত্রের কাগজ দিয়ে থাকি এবং প্রদর্শনীতে দাতার নাম, তাহার পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সংগ্রাহকের নাম ঠিকানাও থাকে। দর্শনার্থী দেখে যেন তৃপ্তি পায়। আমরা তাই করি যেন আপনার দান অক্ষয় থাকে। তাই বলছি পুরাতন জিনিস অযত্নে অবহেলায় ফেলে না রেখে আমাদেরকে জানাবেন আমরা তা নিয়ে এসে সংগ্রহে রাখবো।

উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর পরগনার তথা বিক্রমপুরের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। প্রাচীন পূর্ববঙ্ বিক্রমপুরের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এ ছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য 'অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন' নামে একটি সামাজিক সংগঠন মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাসুর গ্রামের জমিদার যদুনাথ রায়ের পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” (Bikrampur Museum) প্রতিষ্ঠা করেন।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে