রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
কুমিল্লা সদর দক্ষিণের বিজয়পুর ইউনিয়ন

এবার সেই চেয়ারম্যানের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন, জমি দখলের অভিযোগ ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি

স্টাফ রিপোর্টার কুমিল্লা
  ০৬ মে ২০২৪, ১৯:৫১
এবার সেই চেয়ারম্যানের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন, জমি দখলের অভিযোগ ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফসলি জমি জবরদখল করে রাখার অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করা হয়েছে। জমি দখলের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি পরিবারের সংবাদ সম্মেলনের দুইদিন পরেই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন পারভেজ।

সোমবার (৬ মে) বিজয়পুর ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামের মসজিদের সামনে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিজয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান। এতে তিনি দাবি করেছেন- ফসলি জমি দখলের যেই অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছে সেটি ছিলো ষড়যন্ত্রমূলক। চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন পারভেজ উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের পদে রয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় এলাকাবাসী, কয়েকজন ইউপি মেম্বার, রাজনৈতিক নেতাকমর্ীসহ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন পারভেজ বলেন, ২০০৩ সালে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৪ সাল থেকে ২০২২ সাল আমি প্রবাসে ছিলাম। ছাত্র জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি সাথে যুক্ত ছিলাম। ২০১৫ সালের পর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে দলের সদস্য হই। ২০২২ সালে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে আসি এবং ওই বছরের ২৮ নভেম্বর বিজয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই নৌকা প্রতীক নিয়ে। ২০২৩ সালে থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। গত ৪ মে আমার নিজ গ্রামেরই বাসিন্দা সিলেট থেকে আসা কাঞ্চন মিয়া ও তার ছেলে মনির হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনেন। তারা বলেছেন- আমি নাকি তাদের কৃষি জমি জবরদখল করে রেখেছি ১০ বছর ধরে। আমার রাজনৈতিক শক্রু থাকতেই পারে। তাই বলে এতো নিচুমানের মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্র মূলক অভিযোগ আনা হবে- সেটা আমি ভাবতেই পারি না।

তিনি বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী ১০ বছর ধরে আমি তাদের জমি বেদখল করে রেখেছি, ফসল করতে দিচ্ছি না; কিন্তু আমি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছি ১ বছর ৪ মাস আগে এর আগে ছিলাম প্রবাসে। তাহলে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে কীভাবে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ জোরপূর্বক জমি দখল করে রেখেছি?

চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন পারভেজ আরো বলেন, আমার বিরুদ্ধে আরো একটি অভিযোগ আনা হয় কাঞ্চন মিয়ার ছেলে মো.সুমনকে আমার নিজস্ব লোক দ্বারা জোরপূর্বক ঘর থেকে তুলে নিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। তার ছেলেকে পুলিশের সোপর্দ করার ঘটনা সত্যি। কিন্তু সেটা আমার লোকজন দ্বারা- এই তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। গত ৩-৪ মাসে এলাকার অনেকের মোটর সাইকেল চুরি হয়। গত ১৫ এপ্রিল দুুপুরে জানতে পারি স্থানীয় জনতা মোটর বাইক চোর চক্রের ৪ জন সদস্যকে আটক করে টুকটাক মারধর করছে। পরে আমি এবং আমার পরিষদের দুইজন মেম্বার অলিউর রহমান ও রুই দাস পালকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং চোরদেরকে জনতার রোষাণল থেকে বাঁচিয়ে আমাদের হেফাজতে নেই। এরপর পুলিশ এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। যেখানে আমি গিয়ে চোরদের জীবন রক্ষা করেছি জনতার হাত থেকে, সেখানে আমার বিরুদ্ধেই মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

চেয়ারম্যানের বড় ভাই মোতাব্বির হোসেন নাসির বলেন, যেই জমি জবরদখলের কথা তঁারা বলছেন ওই জমি অনেক বছর আগেই ক্রয়সূত্রে মালিক হয়েছেন স্থানীয় ইকবাল হোসেন ও আবদুর রব গংসহ মোট ৩২ জন। ওই ৩২ জনের দুইজন হলাম আমি এবং চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন পারভেজ। কিন্তু কাগজপত্র না থাকার পরও তাঁরা ওই জমি নিজেদের দাবি করে মিথ্যাচার করছে। তাঁরা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে আমাদের সম্মান নষ্টের ষড়যন্ত্র করছেন। প্রসঙ্গত, গাবতলী-জেলখানা বাড়ি সড়কের পাশে ওই গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার বাড়ির সামনের সড়ক লাগোয়া ফসলি জমি জবরদখল করে রাখার অভিযোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তঁার ভাইয়ের বিরুদ্ধে গত শনিবার (৪ মে) সংবাদ সম্মেলন করেন ওই গ্রামের মো. কাঞ্চন মিয়া ও তঁার ছেলে মো. মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন। এ সময় তাঁরা দাবি করেন- চেয়ারম্যানসহ তাঁর লোকেরা জমি জবরদখল করে রাখার কারণে প্রায় দশ বছর ধরে ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই জমিতে আবাদ করতে পারছেন না। এ ঘটনায় গত ২৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান ও তঁার ভাই মোতাব্বির হোসেন নাছিরের বিরুদ্ধে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মো. মনির হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান ও তাঁর ভাইয়ের দাবির প্রসঙ্গে অভিযোগকারী মো. মনির হোসেন বলেন, আমরা কোন মিথ্যাচার করিনি। বরং চেয়ারম্যানই এখন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে বঁাচারোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। পুরো জমির মালিক আমরা; আমাদের সকল কাগজপত্র রয়েছে। এরপরও তাঁরা মিথ্যা দাবি করে জমি জবরদখল করে রেখেছেন। আমরা নিরীহ মানুষ। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার চাই।

যাযাদি/এস এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে