শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা

২০০১-২০০৬ পর্যন্ত দেশে কোনো আইনের শাসন ছিল না। হাওয়া ভবন নামে আর একটি সমান্তরাল সরকার দেশ পরিচালনা করত। এমনকি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করার জন্য পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। তাই খুনিদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী বাংলার জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
ড. অরুণ কুমার গোস্বামী
  ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্তা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় থেকেই শুরু হয় নাই। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কণ্টকাকীর্ণ সংগ্রামী প্রচেষ্টা শুরু বা চলমান থাকার সময়েও স্বপ্নের স্বাধীনতার বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। (পূর্ব) বাঙালিদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বিরোধিতার মুক্তিযুদ্ধের সময়েও (মার্চ ২৫, ১৯৭১ থেকে ডিসেম্বর ১৬, ১৯৭১ পর্যন্ত) লক্ষ্য করা গিয়েছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যা তথা আদর্শিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ হত্যার বিষয়টি বাংলার জনগণ কখনো মেনে নেয়নি। তাই শোকের এই ভয়াবহ সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই জনগণ এর তীব্র প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং খুনিদের ফাঁসির দাবি করেছিল। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই কম-বেশি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ হয়েছিল। কালক্রমে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের এই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করেছিল। যে আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা এখনো শেষ হয়নি।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করছি। ১৯৭৬ সালে জুলাই মাসে আমি ভর্তি হয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। পরের মাসই ছিল শোকের বার্তাবাহী আগস্ট। এর ঠিক এক বছর আগে বাঙালির জীবনে ঘটে গিয়েছিল চরম শোকাবহ বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর জগন্নাথ হলের সাউথ হাউসের ২৬৪ নম্বর কক্ষে ফ্লোরিং করার সুযোগ পেয়েছিলাম সে সময়ের ছাত্রনেতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা মুকুল দার কল্যাণে। আগস্টের ১৪ তারিখ রাত ১২টার দিকে ৫-৬ জন সিনিয়র ছাত্র আমাদের কক্ষে আসেন। আমরা তখন ঘুমানোর জন্য সবেমাত্র ফ্লোরে পুরনো খবরের কাগজের ওপর তোশক পেতেছি। এসময় ওই ৫-৬ জন ছাত্রনেতার দলটি কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা পরের দিন ১৫ আগস্ট খুব ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যাওয়ার কথা বলেন। পরের দিন সকালে দিন দুই আগে গুলিস্তান থেকে কেনা একটি কাঁধে ঝোলানো উপযোগী কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়েছিলাম যাতে আমাদের ভবনের সামনের বাগান থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্য ফুল নেয়া যায়। সামনের বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করার পর শহীদ মিনারের সামনে থেকে আরিচাগামী বাসে আমরা ৪-৫ জন উঠে পড়ি। এখনের কলাবাগান ওভার ব্রিজে বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে একটি পুলিশের জিপ আমাদের সামনে এসে কড়া ব্রেক করে থেমে যায়। কিছু বোঝার আগেই আমার সঙ্গী-সাথীরা যে যার মতো দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমার কাঁধে ছিল ফুলের ব্যাগ। পুলিশ পিছন থেকে ব্যাগ ধরে হ্যাচকা টান দেয়ার কারণে আমি রাস্তায় পড়ে যাই। সেই অবস্থাতেই পুলিশ আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এসময় পুলিশ যে কথাগুলো আমাকে বলেছিল এত বছর পরে সেগুলো এখনো কানে বাজে। কথাগুলো হলো- 'তোর বাবার কথা এখনো ভুলিস নাই।' একপর্যায়ে তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়। আমি সেই অবস্থায় সেখানেই রাস্তায় পড়েছিলাম। শার্ট-প্যান্ট সব ধুলোয় মাখা। তখন রাস্তার ওপারের কয়েকজন হোটেল বয় এবং এক পানের দোকানদার এসে আমাকে তুলে রাস্তার অন্য পারে নিয়ে আসে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তারা আমাকে ফিরতি একটি বাসে উঠিয়ে দেয় এবং হলে ফিরে আসি। সেই থেকে প্রতিবছর আগস্ট মাস অন্য অনেকের মতো আমার কাছে বয়ে নিয়ে আসে শোক, প্রতিবাদ এবং জাতির পিতার প্রতি গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধার বার্তা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলেও তিনি চিরদিন বাঙালির মনে এবং তার প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে বেঁচে থাকবেন। মৃতু্য তাকে কেড়ে নিতে পারেনি। জীবিতাবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধু আরও অনেক বেশি শক্তিশালী। ১৯৭১ সালে রক্তঝরা দিনগুলোতে ফাঁসির আদেশের পাশাপাশি পাকিস্তানের কারা প্রকোষ্ঠের পাশে কবর দেয়ার লক্ষ্যে সব আয়োজন হওয়ার পরেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারেনি সে দেশের মিলিটারি জান্তা। অথচ তার প্রিয় মাতৃভূমির কুলাঙ্গার কয়েকজন তাকে হত্যা করেছিল। হাতেগোনা কয়েকজন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করলেও এর পিছনে ছিল দীর্ঘকালব্যাপী এবং সুদূরপ্রসারী এক গভীর ষড়যন্ত্র। যার সঙ্গে জড়িত বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বড় বড় নেতা। জীবিত থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর অনুগ্রহের জন্য যারা ঘুর ঘুর করত তাদেরও কেউ কেউ এই ঘৃণ্যতম ষড়যন্ত্রে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিল। খোন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান এদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভু্যত্থান হওয়ার পর পরই কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নতুন সরকারকে সমর্থন জানানোর জন্য বেতার কেন্দ্রে হাজির হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল কর্নেল আবু তাহের, মেজর জিয়াউদ্দিন (পিরোজপুর), কর্নেল আকবর হোসেন, মেজর শাজাহান ওমর, মেজর রহমতুলস্নাহ্‌ এবং ক্যাপ্টেন মাজেদ। বি জেড খসরুর সাম্প্রতিকতম বই 'দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি কু্য অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিঙ্ক'-এ এ বিষয়টি উলেস্নখ করা হয়েছে। পরে একটি প্রহসনের বিচারে জিয়া কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে যুদ্ধের সময়েই শুরু হয়েছিল। যদিও মোশতাক আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিল, তার রাজনৈতিক বিশ্বাস অধিকতর ডানঘেঁষা ছিল। আর মোশতাক খুবই উচ্চাভিলাষী ছিল। মোশতাক এবং আরও অনেকে যদিও ১৯৭১ সালের মার্চের ২৬ তারিখের ক্রাক ডাউনের পর ভারত পালিয়ে গিয়েছিল এবং মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেছিল, তাদের বেশ বড় সংখ্যক আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভের ব্যাপারে ছিল সন্দিগ্ধ। এসব সন্দিগ্ধদের মধ্যে অধিকাংশ ছিল বেসামরিক আমলা আর ছিল কিছু রাজনীতিবিদ যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল মোশতাক। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই সফলতার ব্যাপারে তারা তাদের উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করছিল এবং মোশতাককে কেন্দ্র করে তারা একটি চক্র তৈরি করেছিল। এভাবে তারা তাদের সন্দেহ প্রকাশের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক বল ভেঙে দিতে চেয়েছিল। একপর্যায়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এই মর্মে প্রচারপত্র বিতরণ করে যে তাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা এবং এজন্য প্রয়োজনে সাময়িক সময়ের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম বন্ধ করতে পারে। অবশ্য এটি ছিল একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। মোশতাক এসময় গোপনে প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্র সচিব মাহবুবুল আলম চাষী এবং কুমিলস্নার আওয়ামী লীগ এমপি জহুরুল কাইয়ুমের মাধ্যমে কলকাতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের মাধ্যমে জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে এই মর্মে একটি বার্তা প্রেরণ করতে চেয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুকে যদি ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধ থামিয়ে দেয়া হবে। তারা এটিও বলে যে যুদ্ধ শেষ হলে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে একটি ঢিলেঢালা কনফেডারেশন গঠন করা যেতে পারে। এ সবকিছুই হয়েছিল একাত্তরের আগস্ট মাসে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন প্রশাসনের সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বিস্তারিতভাবে তার বইতে এই ষড়যন্ত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। প্রায় ১৫০০ পৃষ্ঠার এই বইতে ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভের পর থেকে ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভিয়েতনাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া পর্যন্ত সময়কালের বিবরণ কিসিঞ্জার এই বইতে লিখেছেন। এই বইতে কিসিঞ্জার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জেনেছিল এবং তা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে জানিয়েছিল। ভারত সরকারের সহায়তায় তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১-এর অক্টোবরে জাতিসংঘে বাংলাদেশি একটি ডেলিগেশনে যাওয়া থেকে বিরত করেন। পর্যবেক্ষকদের মতে মোশতাকের ষড়যন্ত্রমূলক চরিত্র বঙ্গবন্ধু বুঝতে না পারলেও তাজউদ্দীন আহমেদ তা বুঝেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে মুজিবনগর সরকার দেশে ফিরে আসার পর মোশতাককে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাজউদ্দীন সহজেই মোশতাককে বুঝতে এবং তার পরিকল্পনা অনুমান করতে পারতেন। মোশতাক এটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি এবং সে একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিক্সন প্রশাসন এবং বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের কারণে তাজউদ্দীনকে পরে মন্ত্রিপরিষদে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং সমগ্র জাতিকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। নিক্সন প্রশাসন তাজউদ্দীনকে পছন্দ করত না কারণ হচ্ছে তাজউদ্দীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মার্কিনী নীতি এবং বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার গণহত্যার প্রতি মার্কিনী সমর্থনের কড়া সমালোচক ছিলেন।

পাকিস্তানের দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে অল্প কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে ছিল। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা আবার শুরু হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যারা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছিল তারা আশ্রয় পায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং মেজর (অব.) এমএ জলিল, সিরাজুল আলম খান এবং আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে নবগঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী রাজনীতিকরা বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। এসময় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো কর্তৃক সে দেশের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে পুরো মাত্রায় সক্রিয় করে তোলা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নেতা কমরেড আব্দুল হক ভুট্টোর নিকট 'মাই ডিয়ার প্রাইম মিনিস্টার...' সম্বোধন করে চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে কমরেড হক মুজিব সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে তহবিল, অস্ত্র-শস্ত্র এবং ওয়্যারলেস যন্ত্রপাতি প্রভৃতি সরবরাহের অনুরোধ করেন। ভুট্টো কমরেড হকের পত্রের প্রাপ্তি স্বীকারের পাশাপাশি একটি নোটে লেখেন যে 'হি ইজ অ্যান অনেস্ট ম্যান। টেইক অল নেসেসারি স্টেপস টু ফুলফিল হিজ ডিজায়ার।' মুজিব সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করার দায়িত্ব ভুট্টো অর্পণ করেছিলেন আব্দুল মালেক নামে তার এক বিশ্বস্ত সহচরের ওপর। এই প্রেক্ষিতে আরব শাসকদের মধ্যে মুজিববিরোধী মনোভাব সৃষ্টির জন্য মালেক পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা এবং ভুট্টোর একজন উপদেষ্টা মাওলানা কাওসার নিয়াজীর সঙ্গে আরব দেশগুলো সফর করেছিলেন। লক্ষণীয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পরেই কেবল সৌউদি আরব এবং বেশির ভাগ আরব রাষ্ট্রগুলো এবং চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এ সব বিষয় এ এল খতিবের 'হু কিলড মুজিব' এবং মার্কিন গবেষক স্টানলি উলপার্টের 'জুলফি ভুট্টো অব পাকিস্তান' বই দুটিতে লেখা আছে। নিক্সন প্রশাসন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুজিব সরকারকে উৎখাত করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিল। এসময় পরপর বন্যার কারণে শস্যহানি হয়েছিল। অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুদদারী, কালোবাজারি এবং আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য রাতারাতি ঊর্ধ্বগতি হয়েছিল। আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধের মতো বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের ছিল। ভারত, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশকে পণ্য সাহায্য করেছিল। বাংলাদেশ এমনকি পণ্য বিনিময় বাণিজ্য বার্টার চালু করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের খুব অল্প কয়েক হাজার বেল পাট মজুদ ছিল। নস্যাৎকারীরা এসময় ঘোড়াশাল সার কারখানা উড়িয়ে দিয়েছিল। পশ্চাদাপসরণকারী পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক চট্টগ্রাম ও মঙলা বন্দরে ভাসমান মাইন পেতে রাখার কারণে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এই সমুদ্র বন্দর দুটি ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত অকার্যকর ছিল। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রশাসনব্যবস্থা চালু হওয়ার আগেই মুজিববিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাওলানা ভাসানী আরিচায় 'ভুখা মিছিল' বের করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু সাহায্য সামগ্রী পাঠিয়েছিল। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই কোনো কাজে আসেনি। কারণ এগুলো ছিল স্কার্ট, বিকিনি এবং শিশুদের খেলনা।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরের কয়েকজনের সম্পৃক্ততা এবং বৈদেশিক শক্তির সমর্থন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডকে সহজতর করে তুলেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন যখন শিকার তখন এ ধরনের হত্যাকান্ড ঘটানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা খুব সূক্ষ্ণভাবে পরিকল্পনা করেছে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করেছে। বঙ্গবন্ধু নিজে কখনো বিশ্বাস করতেন না যে তাকে এবং তার পরিবারের কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারে। কয়েকবার বঙ্গবন্ধুর কোনো কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি তাদের সতর্ক বার্তায় কর্ণপাত করেননি, বলেছেন তার নিজের লোকেরা তাকে কখনো হত্যা করতে পারে না। খোন্দকার মোশতাক যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাজউদ্দীনের মন্ত্রিসভায় ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে প্রেসিডেন্ট হয়েছিল, সে ছিল বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার মধ্যে এক কলঙ্ক। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহকর্মীদের মধ্যে মোশতাক ছিল একজন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। একাত্তরের সেপ্টেম্বরে কুমিলস্না থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ এমপি জহুরুল কাইয়ুমের মাধ্যমে মোশতাক কলকাতার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল জর্জ গ্রিফিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। তার 'দ্য হোয়াইট হাউস ইয়ার্স'-এ হেনরি কিসিঞ্জার বলছেন, মোশতাক কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেলকে এই মর্মে একটি বার্তা পাঠিয়েছিল যে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ মুজিবের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে সে মুজিবনগর সরকারকে মুক্তিযুদ্ধ থামিয়ে দেয়ার জন্য সম্মত করাতে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করতে চেষ্টা করবে। এই ঘটনার পরে গ্রিফিনকে ভারতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে মোশতাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসভাজন রয়ে যায় এবং পরে সফলতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সরকারকে ক্ষমতাচু্যত এবং হত্যা করতে সক্ষম হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রধান ষড়যন্ত্র হয়েছিল ঢাকা সেনানিবাসের মধ্যে এবং তা করেছিল তথাকথিত কিছু মুক্তিযোদ্ধা, খোন্দকার আব্দুর রশিদ (খোন্দকার মোশতাকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়), ফারুক রহমান, শরীফুল হক ডালিমসহ কয়েকজন। তারা সবাই ১৯৭১-এর অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে মুজিবনগর সরকারের কাছে এই মর্মে রিপোর্ট করেছিল যে তারা সবাই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এরা ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে পাকিস্তানের পক্ষের পঞ্চম বাহিনী। তারা তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন সিনিয়র সামরিক অফিসারকে পেয়েছিল যারা সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল এ কারণে যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের সিনিয়রদের ওপর পদোন্নতি পেয়েছিল। সেনাবহিনীর উপ-প্রধান ছিল জেনারেল জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সময় যার ভূমিকা ছিল বিতর্কিত, ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল যদিও বঙ্গবন্ধু তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। তাকে সেনাবাহিনীপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত না করার কারণে অসন্তুষ্ট ছিল। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলেন যে সিনিয়র অফিসার হিসেবে তিনি নিজে সরাসরি একাজে জড়িত হতে পারছেন না। জিয়ার কর্তব্য ছিল এই ঘটনাগুলো তার সিনিয়র অফিসারদের কাছে রিপোর্ট করা। কিন্তু তা তিনি করেননি। কারণ তিনি (জিয়া) নিজেই বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচু্যত করতে চাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এবং কয়েকজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা জানতেন যে জিয়া একজন অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী অফিসার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের কয়েক মাস আগে পূর্ব জার্মানি অথবা বেলজিয়ামে কূটনৈতিক দায়িত্বে জিয়াকে পদায়ন করা হয়েছিল কিন্তু কয়েকজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার সহায়তায় এই পদায়ন জিয়া বাতিল করাতে সক্ষম হন। জিয়া বঙ্গবন্ধুকে বলতেন যে তার (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি তার (জিয়ার) আনুগত্য নিরঙ্কুশ এবং একজন পেশাদার সৈন্য হিসেবেই তিনি (জিয়া) অবসর নিতে চান। বঙ্গবন্ধু তখন জিয়াকে বিশ্বাস করে জিয়ার নতুন পদায়ন বাতিল করেছিলেন। হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের যোগাযোগ ছিল। অস্ত্র ক্রয়ের ছদ্মবেশে তারা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছিল। ক্রিস্টোফার হিচেনস (২০০১) নামের একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক এবং বিশ্লেষক 'দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার' শীর্ষক বইতে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, চিলি, সাইপ্রাস এবং পূর্ব তিমুরের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে কিসিঞ্জারের জড়িত থাকার কথা লিখেছেন। এই বইয়ে হিচেনস লিখেছেন, 'ওহ ঘড়াবসনবৎ ১৯৭৪, ড়হ ধ নৎরবভ ভধপব-ংধারহম :ড়ঁৎ ড়ভ :যব ৎবমরড়হ, করংংরহমবৎ সধফব ধহ বরমযঃ-যড়ঁৎ ংঃড়ঢ় রহ ইধহমষধফবংয ধহফ যধফ ধ :যৎবব-সরহঁঃব ঢ়ৎবংং পড়হভবৎবহপবৃ. ডরঃযরহ ভবি বিবশং ড়ভ যরং ফবঢ়ধৎঃঁৎবৃ ধ ভধপঃরড়হ ধঃ :যব টঝ বসনধংংু রহ উধপপধ নবমধহ পড়াবৎঃষু সববঃরহম ধ মৎড়ঁঢ় ড়ভ ইধহমষধফবংযর ড়ভভরপবৎং যিড় বিৎব ঢ়ষধহহরহম ধ পড়ঁঢ় ধমধরহংঃ গঁলরন.' অভু্যত্থানকারীরা এসময় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ঢাকা স্টেশন প্রধান ফিলিপ চেরির সঙ্গে যোগাযোগ রাখত।

বঙ্গবন্ধুর অনুগত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা অভু্যত্থান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের কর্মকর্তা আর কে যাদব তার বই 'মিশন আর অ্যান্ড এডবিস্নউ'-তে এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আগেভাগেই 'র'-এর অবগত থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকে এ সম্পর্কে সাবধান হতে বলেছিলেন। 'র'-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর এন কাও ইন্দিরা গান্ধীকে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী এবং 'র' সবাই বঙ্গবন্ধুকে এ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কথিত ষড়যন্ত্রকারীরা তার (বঙ্গবন্ধুর) সন্তানের মতো তাই তারা তার (বঙ্গবন্ধুর) কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে বিচার বন্ধের জন্য ইনডেমনিটি আইন পাস করেছিল।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত ১২ জন খুনির মধ্যে পাঁচজন খুনিকে বিচারকের রায় অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ফাঁসি দিয়ে মৃতু্য নিশ্চিত করা হয়। এই পাঁচজন হলো মহীউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি); মেজর (অব.) বজলুল হুদা; লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার খান; সৈয়দ ফারুক রহমান; এবং মেজর (অব.) একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)। খুনিদের মধ্যে একজন বিদেশে মৃতু্যবরণ করে। অবশিষ্ট ৬ জন খুনি পলাতক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়ার কারণে দীর্ঘকাল পরে বাংলার জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যিনি তার সমগ্র জীবন সহায়হীন বাঙালি জাতির বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন, যিনি বাংলার স্বায়ত্তশাসন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জীবন ও যৌবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন, যে ব্যক্তি সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলার জন্য শান্তিপ্রিয় একটি জাতিকে সফলতার সঙ্গে উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের মানুষকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিলেন তাকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি এবং ছদ্মবেশী ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। জাতির পিতাকে হত্যার পরে এসব খুনিরা অত্যন্ত দম্ভের সঙ্গে দেশে এবং বিদেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কথা বলে বেড়াত। সবচেয়ে নিষ্ঠুর ব্যাপার ছিল ষড়যন্ত্রকারীরা, খুনে অংশগ্রহণকারীরা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বেনিফিশিয়ারিরা ইনডেমনিটি আইন পাস করেছিল যাতে কোনোদিন খুনিদের বিচার না হতে পারে। জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ সরকার খুনিদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে চাকরি দিয়েছিল। এমনকি খুনিরা একটি রাজনৈতিক দলও প্রতিষ্ঠা করেছিল সামরিক সরকারের মদতে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের দুই জীবিত সদস্যদেরও হত্যা পরিকল্পনা করেছিল। পরে ১৯৯৬-২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টেও হত্যাকান্ডের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে। সিভিল কোর্টে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিচারকার্য সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগে। ইতোমধ্যে ২০০১-২০০৬ সালে এবং পরে আরও দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া আটকে রেখেছিল। চূড়ান্ত পর্যায়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করার পরে এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারকার্য সমাপ্ত হয়। ১৯৭৫ সালের পরে দীর্ঘ ৩৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পরে ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর ৪ জন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭৫-এর পর থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত যেসব সরকার ক্ষমতায় ছিল, যে সরকার খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, যারা সেই সরকারের পদলেহন করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২০০১-২০০৬ পর্যন্ত দেশে কোনো আইনের শাসন ছিল না। হাওয়া ভবন নামে আর একটি সমান্তরাল সরকার দেশ পরিচালনা করত। এমনকি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করার জন্য পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। তাই খুনিদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী বাংলার জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রফেসর ড. অরুণ কুমার গোস্বামী: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এবং পরিচালক, সাউথ এশিয়ান স্টাডি সার্কেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62552 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1