শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্ত্রী-পুত্রের পাকস্থলীতে বায়েজিদের মুখে বিষের গন্ধ

ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

মিরপুরের কাফরুল থেকে উদ্ধার হওয়া স্বামী-স্ত্রী ও তাদের একমাত্র পুত্রের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে স্ত্রী ও পুত্রের পাকস্থলীতে এবং বায়েজিদের মুখে মিলেছে বিষের গন্ধ।

শুক্রবার দুপুরের দিকে ময়নাতদন্ত শেষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. একেএম মঈন উদ্দীন জানান, সকাল ১০টা থেকে ময়নাতদন্ত শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর ১টার দিকে।

ডা. মঈন উদ্দীন জানান, তিনটি মরদেহ থেকেই ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিডনি, লিভার, পাকস্থলী থেকে টিসু্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো এখন পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের সময় বায়েজিদের গলায় একটি দাগ দেখা গেছে। আর তার মুখে মিলেছে বিষের গন্ধ। এর পাশাপাশি স্ত্রী ও তার ছেলের পাকস্থলীতেও বিষের গন্ধ পাওয়া গেছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, বায়েজিদ বেশ কয়েকটি ব্যবসা শুরু

পৃষ্ঠা ২ কলাম ২

করেছিলেন। বারবার প্রতিটি ব্যবসায় তার ক্ষতি হচ্ছিল। মূলত তিনি ছিলেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। ভারী হয়েছে ক্ষতির পালস্না। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণও নিয়েছেন। একের পর এক ক্ষতি হওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বেশ কিছুদিন ধরে বাসায় থাকতেন তিনি।

ব্যবসায় ধারাবাহিক লোকসান, ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং হতাশা থেকে কাফরুলের ওই বাসায় স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার পর নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে বায়েজিদ আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করছেন তার আত্মীয়স্বজন ও পুলিশ।

জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে বায়েজিদ ও অঞ্জনার বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ বছর পর তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় মো. ফারহান। সে ঢাকা কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ত।

বায়েজিদের এক স্বজন কিবরিয়া হোসেন জানান, তিনি মূলত গার্মেন্ট ব্যবসা করতেন। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হয়। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তিনি নানা ধরনের ব্যবসা করেছেন। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। শোনা যাচ্ছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণও নাকি নিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে তাকে হতাশা ঘিরে ধরেছিল বলেই মনে হচ্ছে।

বায়েজিদের কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে ব্যবসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। শুনেছেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণও নিয়েছিলেন। হয়তো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারার হতাশা থেকে তারা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তাদের সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন ছিল।

পুলিশ জানায়, বায়েজিদের ঘরের দেয়ালে সাঁটানো ৫০ থেকে ৬০টির মতো চিরকুট উদ্ধার করা হয়। আর এসব চিরকুট দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বায়েজিদ হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।

মিরপুর ডিভিশনের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, 'ওই বাসায় গিয়ে আমরা দেখতে পাই ছেলে এবং স্ত্রী বিছানায় শুয়ে আছেন। আর বায়েজিদের দেহ ঝুলে আছে ঘরের সিলিং ফ্যানে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা বেশকিছু চিরকুট পেয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন আলামত উদ্ধারসহ ময়নাতদন্তের জন্য তিনটি মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছিল। ময়নাতন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তিনজনের মৃতু্যর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।'

এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেয়ালে সাঁটানো চিরকুটে অনেক কিছুই লেখা ছিল। এর মধ্যে কিছু চিরকুটে লেখা ছিল 'আমাদের মৃতু্যর জন্য কেউ দায়ী নয়।' বুধবার (৯ অক্টোবর) মধ্যরাত বা ভোরের যেকোনো সময়ের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আর পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃতু্য মামলা (ইউডি) করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর কাফরুল থানার মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনের একটি বাসা থেকে সরকার মোহাম্মদ বায়েজিদ ওরফে এসএম বায়েজিদ (৪৭), স্ত্রী অঞ্জনা (৪০) এবং তাদের একমাত্র সন্তান ফারহানের (১৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<70805 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1