শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
২৫তম জলবায়ু সম্মেলন

যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফেরাতে তৎপর বাংলাদেশ

চিলির পরিবর্তে স্পেনের মাদ্রিদে হবে এবারের সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রকে ফেরাতে পারলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ
নূর মোহাম্মদ
  ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আগামী ২ ডিসেম্বরে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত হবে ২৫তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৫)। এবারের সম্মেলনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য নিয়ে আলোচনা হলেও ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় কপ-২১ সম্মেলনে ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তৎপরতা থাকবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (সবুজ জলবায়ু প্রকল্প) যে অর্থায়ন করার কথা সেটি আটকে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সচেষ্ট থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) ড. নূরুল কাদির যায়যায়দিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থায়নের প্রক্রিয়া আটকে গেছে। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রকে কীভাবে ফেরানো যায় সেই চেষ্টা তাদের থাকবে। তিনি বলেন, সেজন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

জানা গেছে, আগামী ২৫তম জলবায়ু সম্মেলন ২ ডিসেম্বর স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনটি ১৩ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এবারের সম্মেলনটি চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মুখে তা ভেস্তে গেছে। গত সপ্তাহের বুধবার চিলি সরকার ডিসেম্বরের জলবায়ু সম্মেলন এবং নভেম্বর মাসে নির্ধারিত এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে তাদের নাম প্রত্যাহার করার পর স্পেন সেই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, জলবায়ু ঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। তিনি একটি গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনার টেবিলে বড় একটি পয়েন্ট হিসেবে তুলে ধরবেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন) জাকির হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, এবারের সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্যারিস চুক্তি ভেস্তে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। ক্ষতি পোষাতে যে অর্থায়ন হবে তা যেন অনুদানভিত্তিক হয় সেটি আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে 'সবুজ জলবায়ু প্রকল্প' থেকে যে অর্থায়ন করার কথা ছিল সে অর্থ এখন পর্যন্ত ছাড় হয়নি। কবে হবে তাও বুঝা যাচ্ছে না। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ায় প্যারিস চুক্তির জন্য বড় ক্ষতি। যুক্তরাষ্ট্রকে আবার প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন কয়েকজন প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের দিয়ে চাপ তৈরি করতে হবে যাতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিশ্রম্নত অর্থ দেয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না দিলে মানবাধিকার বা আইনের মাধ্যমে সেটি আদায় করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভালোভাবে অনুধাবন শুরু করেছে। আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়, পস্নাবন, খরা, লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এর সব কটি থেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বয়ে আনতে পারে। দেশে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তাপমাত্রা, বৃষ্টি, বন্যা কিংবা খরার বিরূপ আচরণ খুবই পরিষ্কারভাবে টের পাওয়া যায়। কোনোটিই আগের মতো সময় মানছে না। অসময়ে যেমন অতিবৃষ্টি হয় তেমনি আবার অসময়ে খরা কিংবা বন্যাও হয়। বিশেষ করে এমন পরিস্থিতিতে পানি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও রাসায়নিক দূষক পদার্থ বহন করে থাকে। একইভাবে ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটায় ও নানা কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গুসহ নানা ব্যাধি বাসা বাঁধছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকাল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। বর্ষাকাল তার সময় থেকে সরে যাচ্ছে। ঋতুর চিরচেনা রূপের দেখা না মেলায় এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি, ফসল ও মানুষের ওপর। ঋতুভিত্তিক ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ুর এই ক্ষতিকর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শহরগুলোতে অভিগমনের হার বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে ড. নূরুল কাদির বলেন, এবারের ডেঙ্গু এবং গত বছরের চিকনগুনিয়ার জন্য জলবায়ু ব্যাপকভাবে দায়ী। জলবায়ুর জন্য উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শহরগুলোতে অভিগমনের মাত্রা বেড়ে গেছে। এবারের সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য ও অভিগমনের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনা করা হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রিত কার্বন নির্গমনের জন্য বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে চাপ তৈরি করতে হবে। এটি যেহেতু আমাদের একার বিষয় নয় এজন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হচ্ছে। আগামী সম্মেলনে আমাদের পক্ষ থেকে প্যারিস চুক্তির রুল বুক বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ কোনোভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না, তাই আমরা ঋণ নেব না, অনুদান নেব এ বাক্যটি আবার তোলা হবে সম্মেলনে। ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হবে, এদের দায়িত্ব ধনী দেশগুলোর নিতে হবে, প্যারিস চুক্তিতে এটা বলা ছিল। এরপর বাংলাদেশ কোনো আর্থিক সহযোগিতা পায়নি। সেই পয়েন্টে জোরালোভাবে বলবে বাংলাদেশ। শিল্প বিপস্নবের পর থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে, কিন্তু এর কোনো নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশ পায়নি। এবারের সম্মেলনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশ আলোচনার টেবিলে রাখবে। প্রশমন ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ২৭ ও ৪২ বিলিয়ন ডলার প্রয়াজন কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টাকাই পাওয়া যায়নি, এটিও গুরুত্বসহকারে আলোচনার টেবিলে থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74852 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1