শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রেন গেলেই পাথর ছোড়া হয় ৩৬ স্পটে

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:১৫
চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছুড়ছে এক যুবক -ফাইল ছবি

ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন এহেছানুল হক ও সাবরিনা চৌধুরী দম্পতি। কুমিলস্নার আখাউড়া স্টেশনে পৌঁছার আগে তাদের আসনের পাশের জানালা ভেঙে কাচের টুকরো শরীরে আঘাত করে। এ সময় দুইজনই আহত হন। পরে যাত্রীদের সহায়তায় অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে চট্টগ্রাম পৌঁছেন তারা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা এটি। এহেছানুল হক রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা। চট্টগ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আসার সময় ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, ওইদিন বিকাল তিনটায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ট্রেনটি কুমিলস্নার কাছাকাছি পৌঁছার আগে ঘুম আসে দুজনের। সাবরিনা জানালার পাশে বসেছিল। এমন সময় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। সে এত ভয় পেয়েছিল যে, এখন আর জানালার পাশে বসতে চায় না। তিনি প্রশ্ন রাখেন- যারা পাথর ছুড়ে মারছে, তারা কি মানুষ? চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার পথে কুমিলস্নার গোমতী ব্রিজ এলাকায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৪ যাত্রী আহত হন। এর আগে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে ছোড়া ঢিল থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যায় ১৩ মাস বয়সি শিশু। ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় যাত্রীর মৃতু্যও হয়েছে। সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারী এলাকায় ২০১৩ সালে চলন্ত ট্রেনে ছোড়া ঢিলে প্রকৌশলী প্রীতি দাশ নিহত হন। ফাইল ফটো রেলওয়ে সূত্রমতে, পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল মিলিয়ে ৮০টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখান থেকে ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলের ৫টি জেলার ২০টি এলাকায় ৩৬টি স্পট খুব ঝুঁকিপূর্ণ, যেখান থেকে প্রায় সময় পাথর ছোড়া হয়। পূর্বাঞ্চলের যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ : গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কারওয়ানবাজার, ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, জগন্নাথগঞ্জঘাট, দেওয়ানগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, কিশোরগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, চট্টগ্রাম, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সীতাকুন্ড, পাহাড়তলি, বটতলি ও নরসিংদীসহ ২০টি এলাকার ৩৬টি স্পটে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে বেশি। তবে রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) ওসি মোস্তাফিজ ভূঁইয়া জানান, পাহাড়তলিতে একসময় পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটলেও এখন এ রকম ঘটনা নেই। পাহাড়তলিতে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটার পর কয়েকবার অভিযান চালানো হয় এবং স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করার ফলে পাথর ছোড়ার ঘটনা কমে এসেছে। ফাইল ফটো সূত্রমতে, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পূর্বাঞ্চলে ৮টি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে নথিভুক্ত হয়েছে ৪টি। এই চারটি ঘটনায় ট্রেনের ক্ষতি হয়েছে। তবে এর বাইরেও যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নথিভুক্ত হয়নি। জড়িতরা বস্তির শিশু-কিশোর জিআরপি সূত্রমতে, ট্রেনে পাথর ছোড়ার যেসব ঘটনা ঘটছে তার সঙ্গে জড়িত ৮০ ভাগই শিশু-কিশোর। যারা বিভিন্ন বস্তি এলাকায় বেড়ে উঠেছে। এতে প্রায়ই যাত্রীরা গুরুতর আহত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ট্রেনেরও। বস্তির এসব শিশুদের আটক করা হলেও বেশিরভাগ সময় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, পাথর নিক্ষেপের ফলে ট্রেনে যাত্রী আহত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদও নষ্ট হচ্ছে। মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় জানালার গস্নাস সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। এসব জানালা অনেক উন্নতমানের, দামও বেশি। মানুষ সচেতন না হলে এ রকম ঘটনা থামানো সম্ভব নয়। ওসি মোস্তাফিজ ভূঁইয়া বলেন, পাথর নিক্ষেপে জড়িত ৮০ ভাগই বস্তির শিশু-কিশোর। এছাড়া অনেকে দুষ্টুমির ছলেও পাথর নিক্ষেপ করে। প্রেম বিরহে এক যুবক সিলেটগামী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তাকে আটকও করেছিলাম। 'যারা পাথর নিক্ষেপ করে তাদের চিহ্নিত করাও চ্যালেঞ্জ। প্রায় সময় তাদের চিহ্নিত করা যায় না। তাই তাদের আইনের আওতায়ও আনা যায় না' বলেন জিআরপির এই ওসি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে