শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেই রাস্তা এখন ‘আগের চেয়ে ভালো’

যাযাদি রিপোটর্
  ৩০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
বিমানবন্দর সড়ক পারাপারে পদচারী সেতু ব্যবহার করছেন পথচারীরা -যাযাদি

বুধবার সকাল ১০টা। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে র‌্যাডিসন হোটেলের সামনে দুই ঘণ্টা ধরে দঁাড়িয়ে। দেখা গেল, পথচারীরা চলাচলের জন্য সামনের ফুটপাতই ব্যবহার করছেন। কেউ যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছেন না। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে পদচারী-সেতু ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া কোনো বাস পদচারী-সেতুর নিচে অযথা থেমে থাকছে না। কোনো বাসকে ওভারটেক করতেও দেখা যায়নি।

গত ২৯ জুলাই ঠিক এ জায়গায় হোটেল রেডিসনের বিপরীত পাশের উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তায় জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে একটি বাস রাস্তায় দঁাড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে দুই শিক্ষাথীর্ নিহত ও নয়জন আহত হয়। নিহত দুই শিক্ষাথীর্ হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। ওই ঘটনার পর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীর্রা। বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স, ফিটনেস পরীক্ষা করে তারা। অভিনব এই প্রতিবাদ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে। পরে সরকার তাদের নয় দফা দাবি মেনে নেয়ার কারণে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসে।

দ্?ুই শিক্ষাথীর্ নিহত হয়েছিল যেখানে, সেই জায়গায় আগে পদচারী-সেতু ব্যবহার না করে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই দুঘর্টনার শিকার হতেন অনেকে। গণপরিবহনগুলোর পাল্লাপাল্লির কারণে দুঘর্টনা ঘটত। এক মাস পর পরিস্থিতি কতটা বদলেছে, তা দেখতেই বুধবার সেখানে যাওয়া। কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা, ট্রাফিক পুলিশ ও বাসচালকদের সঙ্গে। তারা বলছেন, পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই বদলে গেছে। মানুষ এখন এভাবে রাস্তা পার না হয়ে পদচারী-সেতু ব্যবহার করছেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তা থেকে সরে গেছে। চালকরাও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখছেন।

দুই শিক্ষাথীর্ মারা যাওয়ার সময় সেখানে প্রত্যক্ষদশীর্ ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কমর্কতার্ হাবিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। আগে এখানে বাস প্রচুর ওভারটেক করত। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলত। কিন্তু দুই শিক্ষাথীর্ মৃত্যুর পর শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে।’

হাবিবুল ইসলাম বললেন, ‘এখন গাড়ি কমে গেছে। এর কারণ হচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামছে না। বাসচালকেরাও আগের মতো এক বাস আরেক বাসের সঙ্গে ওভারটেক করছে না। পুলিশ আগের থেকে অনেক তৎপর। এসব কারণে এই সড়কে শৃঙ্খলা এসেছে।’

কুমিের্টালা হাসপাতালের সামনে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার রিকশাচালক রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আগে তো কোন বাস আগে যাইব, সেইটা নিয়া ড্রাইভারেরা যুদ্ধ লাগায়ে দিত। দুজন মারা যাওয়ার পর হেরা আর এখানে ওই রকম করে না। করলেই পুলিশ মামলা দেয়।’

ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কামাল হোসেন দায়িত্ব পালন করছিলেন রেডিসন হোটেলের সামনে। তিনি বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। এই এলাকা দিয়ে যেসব বাস চলাচল করে, তারা নিয়ম মেনেই চলছে। মোটরসাইকেলচালকেরাও হেলমেট পরে চলাচল করছে। এভাবে চললে তো আমাদের কাজ সহজ হয়ে যায়।’

ক্যান্টনমেন্ট থানার সামনে কথা হয় পথচারী আবদুল মোমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে ওভারব্রিজের নিচে এমন এলোমেলোভাবে বাস দঁাড়িয়ে যেত যে পেছনের বাস থেমে যানজট হয়ে যেত। এক বাস আরেক বাসের সঙ্গে পাল্লা দিত কে কার আগে যাবে। এখন এটি আর দেখা যায় না বললেই চলে। পুলিশ সারাক্ষণ এগুলো খেয়াল রাখছে।

র?্যাডিসন হোটেলের সামনে পুলিশ বক্সে ছিলেন সাজের্ন্ট আরেফিন আলম। পরিস্থিতি এক মাসে কতটা বদলেছেÑএমন প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘এই এলাকায় শতভাগ অবস্থার পরিবতর্ন হয়েছে। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মানুষকে ওভারব্রিজ ব্যবহারে অভ্যস্ত করা। এখন তারা সবাই ওভারব্রিজ ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া রাস্তায় কোনো ফিটনেসবিহীন বাস নেই। তা ছাড়া বাসের রেষারেষিও নেই।’

আরেফিন আলমের কথা, সব মিলে আগের চেয়ে অবস্থার অনেক পরিবতর্ন এসেছে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীের্দর অবদানের কথাই সামনে আনলেন। তিনি বলেন, শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের কারণে এই পরিস্থিতি বদল হয়েছে। এটি ধরে রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<9747 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1