শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
টেস্ট ক্রিকেট

দেশের বাইরে খেলার জন্য কতটা প্রস্তুত টাইগাররা?

ভারতের কাছে ইন্দোর টেস্টে নাস্তানাবুদ হওয়ার পরই প্রশ্ন উঠেছে দেশের বাইরে এই চ্যালেঞ্জ নিতে বাংলাদেশ আসলেই প্রস্তুত তো?
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ইন্দোরে প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারায় হতাশায় ঘিরে ধরেছে মুমিনুল হকের দলকে (বাঁয়ে)। সফরকারীদের বিপক্ষে একের পর এক উইকেট পাওয়ায় ভীষণ উচ্ছ্বসিত রাহানে-কোহলি-অশ্বিন-জাদেজারা -ওয়েবসাইট

ঘরের মাঠে অতি ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতির রেখা হিসেবে এইসব জয়কেও তখন বড় করে দেখা হয়েছিল। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো সেই চেষ্টা কোনো সুফল দিচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি একটু বিরূপ হলেই বেরিয়ে আসছে দলের কঙ্কাল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সূচিতে আগামী এক বছরে দেশের বাইরে অনেক টেস্ট খেলতে হবে বাংলাদেশকে। ভারতের কাছে ইন্দোর টেস্টে নাস্তানাবুদ হওয়ার পরই প্রশ্ন উঠেছে দেশের বাইরে এই চ্যালেঞ্জ নিতে বাংলাদেশ আসলেই প্রস্তুত তো?

দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে শনিবার ভারতের কাছে ইনিংস ও ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে সফরকারীরা। টেস্টে বাংলাদেশের এটি ৪১তম ইনিংস হার। এরমধ্যে ২৭টি ইনিংস হারই দেশের বাইরে। লড়াইবিহীন হারের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলার ধরন আর অ্যাপ্রোচ হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

টেস্টে দেশের মাঠে তাও যা, কিন্তু দেশের বাইরে খুবই বেহাল দশা বাংলাদেশের। এখন পর্যন্ত ১১৬ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ১৩টিতে। আর দেশের বাইরে বাংলাদেশে জিতেছে মোট চার টেস্ট। যার মধ্যে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় সারির দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আছে দুই জয়। বাংলাদেশ জিতেছে কাছাকাছি শক্তি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে শততম টেস্টের জয়টাই কেবল আছে আলাদা মূল্য।

বাকি বড় জয়গুলো সবই এসেছে ঘরের মাঠে, ভীষণ অনুকূল কন্ডিশনে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান আর বোলারদের পরিসংখ্যানও খুব আশা জাগানিয়া নয়। এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে ৫৪ টেস্টে (একশর বেশি ইনিংস) খেলে মাত্র ১৭ বার করতে পেরেছে তিনশর বেশি রান। ব্যাটসম্যানরা অবশ্য সেঞ্চুরি পেয়েছেন ২১টি। বাকি ২৯ সেঞ্চুরি এসেছে ঘরের মাঠে।

ব্যাটসম্যানরা দেশের বাইরে অনেক সময়ই পান রানবান্ধব উইকেট। সেক্ষেত্রে দলে মানসম্মত পেসার না থাকায় বোলিং আক্রমণকেই ভুগতে হয়েছে বেশি। দেশের বাইরে এতগুলো টেস্ট খেলে বোলাররা ৫ উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১৬ বার। স্পিনারদের মধ্যে গত বছর সর্বশেষ ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। পেসারদের পরিসংখ্যান পীড়াদায়ক আরও বেশি। সর্বশেষ ৫ উইকেট খুঁজতে হলে যেতে হবে ২০১৩ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রবিউল ইসলাম।

অথচ দেশের মাঠে বাংলাদেশের বোলাররা ৫ উইকেট নিয়েছেন মোট ৪১ বার। যার অধিকাংশই অবশ্য স্পিনারদের নেওয়া। আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের বাইরে ভারত সফরের টেস্টসহ মোট ৮ টেস্ট খেলতে হবে বাংলাদেশকে। একটি ছাড়া এর সবগুলোই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। দেশের বাইরে খেলার দলের বেহাল দশা জানা আছে অধিনায়ক মুমিনুল হকের। তার কাছে মনে হচ্ছে সামনে পড়তে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জে, 'দেশের বাইরে টেস্ট খেলা সবসময় চ্যালেঞ্জিং আমার কাছে মনে হয়। আমরা দেশের বাইরে খুব একটা ভালো খেলতে পারি না। এটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং সত্যি কথা বলতে। অনেক চাপ থাকে, সেভাবে সবাইকে মানসিকভাবে আরও প্রস্তুত হতে হবে। একই সঙ্গে বাড়তি অনুশীলনও করতে হবে।'

এদিকে শক্তি, সামর্থ্যে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে ভারত। তাদের পেস বোলাররা আছেন সময়ের সেরা অবস্থায়। টাইগাররা অনেক পিছিয়ে থাকলেও খেলা তিন দিনে শেষ হয়ে যাবে, এটাও আশা করেনি ভারত। ভারতের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর মনে করেন কিছু কৌশলগত ভুলেই এমন অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশের। ইন্দোরে টস জিতে পেসারদের জন্য সহায়ক উইকেটে ব্যাট করার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মাত্র দুই সেশনেই ১৫০ রানে অলআউট হয়ে সেই সিদ্ধান্ত কাজে যায়নি। প্রথম ইনিংসের সেই ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে আর ঘুরে দাঁড়ানো যায়নি। ভারতের ৬ উইকেটে ৪৯৩ রানে ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশ করতে পারে ২১৩ রান।

তৃতীয় দিনের বিকেলের আলো চড়া থাকতেই মুমিনুল হকের দল ম্যাচ হেরে যায় ইনিংস ও ১৩০ রানে। ম্যাচশেষে ভারতের ব্যাটিং কোচ জানান খেলা এমন একপেশে হবে ভাবেননি তারা, 'বাংলাদেশ বেশ ভালো দল। আমাদের বোলিং খুবই ভালো ছিল। আমার মনে হয় টস জিতে তাদের ব্যাট করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে। এটাও খেলাকে তিন দিনে শেষ করতে ভূমিকা রেখেছে। তিন দিনে শেষ হওয়ার কথা আমরা আশা করিনি।'

দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারানোর পরও শরীরী ভাষায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়নি ভারত। শুরুর মতো সমান তীব্রতা নিয়ে ম্যাচশেষ করেছে তারা। এর পেছনে দলটির সাফল্যের ক্ষুধাকে বড় করে দেখছেন ব্যাটিং কোচ, 'এটাই দলের সংস্কৃতি। এটা কেবল ব্যাটিং বা বোলিংয়ের বিষয় নয়। আমাদের দল বিশ্বে এক নম্বর দল থাকতে চায়। সে কারণেই এই সাফল্যের ক্ষুধা রয়েছে আমাদের।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76007 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1