শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ডোলান অ্যাকাউটেন্সির কণর্ধার সিমন ডোলান

স্কুল ড্রপ-আউট ছেলেটিই এখন মাল্টিমিলিয়নার!

নতুনধারা
  ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
সিমন ডোলান

খুব কম মানুষই আছেন যারা কিনা সফলতার ইতিকাব্য আগ থেকেই অঁাচ করতে পারেন। কে জানত, পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনই তার জীবনের বঁাক চিনিয়ে দেবে? একসময়ের স্কুল ড্রপ-আউট সিমন ডোলান ভাবলেন বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে অ্যাকাউন্টেন্সি সেবা দেবেন। এ কনসেপ্ট থেকেই স্থানীয় পত্রিকায় মাত্র ১০ পাউন্ডের একটি বিজ্ঞাপন।

এবার একটু পেছনের গল্প না জানলেই নয়। ২২ বছরের তাগড়া যুবক ডোলান। ওই বয়সে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে ড্রাইভিং লাইসেন্স হারান। গেল চাকরিটাও। তার ঋণের পরিমাণও বাড়ছে হু হু করে। বন্ধকী সম্পত্তিগুলোর পুনরায় অথার্য়নের ভারে নুয়ে পড়ছিলেন তিনি।

কিন্তু এত কিছুর মাঝেও তিনি শুরু করেন অ্যাকাউন্টেন্সি ফামর্ এসজেডি। তার ভাষায়, ‘ঘটনার তিন সপ্তাহ পর একজন নারী গ্রাহক আমাকে ফোন দিলেন। তার অ্যাকাউন্টিংয়ের কাজটি করে দিলাম। অন্তত আমার আরেকজন গ্রাহকের আস্থা অজর্ন করতে পারলাম।’

তিনি মানুষকে অ্যাকাউন্টিংয়ের এই সেবা দিতেন ঘরে বসেই। নিজের কিচেন রুমে একটি টেবিল সেট করলেন শুধু এ কাজের জন্যই। পাক্কা পঁাচ বছর এভাবেই চলল। ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর ১৯৯৭ সালে এসে নিজের জানান দিলেন। ওই বছর লন্ডন থেকে ২৬ মাইল উত্তর-পশ্চিমে বাকার্মস্টেডে তার ফামর্ এসজেডির একটি শাখা খুলে বসলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফামির্ট বেড়ে উঠল। অ্যাকাউন্টেন্সি খাতের একক মাকের্ট লিডার হিসেবে তিনি রাজত্ব করতে শুরু করলেন। তার পরের গল্প শুধু বড় থেকে আরও বড় হওয়া।

লাভের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ খ্যাতি তখন। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো তার দুয়ারেই ঘোরাফেরা করতে শুরু করল। ২০১৪ সালের গল্পই ধরা যাক। প্রতিষ্ঠানটির কাগজে-কলমে গ্রাহকের সংখ্যা তখন ১৪ হাজার ৫০০। বাষির্ক লেনদেন ২০ মিলিয়ন পাউন্ড। এই বছর সিমন ডোলান তার কোম্পানি সোভারিন ক্যাপিটাল নামের একটি কোম্পানির কাছে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তিতে অংশীদারি শেয়ার বিক্রি করলেন। যেহেতু তিনি এসজেডির একক মালিকানায় ছিলেন। ডোলান বলছিলেন, তিনি তখন ৮১ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন। তারপর থেকেই সাফল্যের গল্প আনুপাতিক হারে তার হাতে এসে ধরা দিতে শুরু করল।

এখন ৪৯ বছর বয়স সিমন ডোলানের। এসেক্সের কেল্মফোডের্ জন্ম তার। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের গল্প বলেই যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তখন আমাদের ক্যাশ ফ্লোর ধারাবাহিকতার কারণে আমরা আরেকটি শাখা খুলে বসলাম। আমরা কখনো কাউকে ভাড়া করে আনিনি। আমাদের প্রবৃদ্ধি পুরোটাই অগাির্নক। এত কম কম্পিউটার, কম জনবল নিয়ে এমন সুন্দর ব্যবসা খুব ভালোভাবেই চালানো যায়। প্রতি মাসেই আমাদের লাভের প্রবৃদ্ধি আগের মাসের চেয়ে ভালো হচ্ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি প্রথম ৮০০ পাউন্ড লাভ করল। পরের মাসে আমি ১০০০ পাউন্ডের লাভের সিদ্ধান্ত নিলাম। আপনি যদি একটি কাজ বছরের পর বছর মনোযোগ দিয়ে করেন তবে কাজটি বড় থেকে আরও বড় হবেই।’

ফামির্টর এই সাফল্যের ধারাবাহিকতার মাঝখানেই একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তার মালিকানাধীন অবস্থাতেই এসজেডির কিছু কমর্চারী প্রতারণার মাধ্যমে অথর্ হাতিয়ে নিতে শুরু করে। তারা ১০ হাজার পাউন্ড থেকে চুরি শুরু করে। শেষে ৬০ হাজার পাউন্ড চুরির পরই নজরে আসে কতর্র্ৃপক্ষের।

সিমন বলেন, ‘এই কাজটি তাদের জন্য কঠিন ছিল। কারণ এখানে ২০০-এর অধিক কমর্চারী ছিল। এটি একা করাও সম্ভব ছিল না। এর মধ্যেই কেউ কেউ জোট বেঁধেই কাজটি করার সাহস দেখিয়েছে।’

এমন একজন সফল মানুষের সেই ছোট্টবেলাটি কেমন ছিল? জানতে তো সবারই আগ্রহ হয়! তবে এই প্রশ্নে রীতিমতো বিরক্ত তিনি। কারণ সেই ১৬ বছর বয়সেই তিনি স্কুল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। সিমন ডোলানের ভাষায়, ‘এমন বিশ্রী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে আমার বিরক্ত লাগে।’

এই সফল উদ্যোক্তা সে সময়ের ইংল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা বরাবরই করেন। তিনি এটিকে ‘পয়েন্টলেস’ ও ‘অবাস্তব’ আখ্যা দেন সব সময়ই। তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হয় শুধু ভালো চাকরি জোগাড় করার ধারণা দিয়ে।

তো কী কারণে স্কুল তাকে বহিষ্কার করল? তাও জানা গেলে। স্কুলে সে সময় তার ব্যবসার ধারণার বাস্তবায়ন করা শুরু করলেন। বয়স তখন সবে ১০। তখন তিনি স্কুলের বন্ধুদের কাছে ছোটখাটো পত্রিকা বিক্রি করতে শুরু করলেন। ১৩ বছর বয়সে এসে তিনি স্কুলে স্ক্র্যাচ কাডর্ বিক্রি শুরু করলেন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি অঙ্কে পাকা ছিলাম। সুতরাং তখন আমার হাতে আসা লাভের টাকা ঠিকঠাক গুণে রাখতাম। বেশ ভালোই অথর্ আয় হচ্ছিল। ব্যবসাতেই মনোযোগ তখন বেশি হয়ে গেল, স্কুল আর ভালোমতো করা হলো না। ওই পবের্র ইতি ওখানেই।

ওই ব্যবসার ধারণা তাকে ভালো বিনিয়োগ এনে দিল। ধারাবাহিক এই উদ্যোক্তা একটির পর একটি উদ্যোগ হাতে নিতে থাকলেন। ২০০৮ সালে তিনি জোটা স্পোটর্ নামের একটি স্পোটির্ং রেসিং টিম গঠন করলেন। অবশ্য এই ধারণা তার মাথায় এসেছিল তার স্ত্রী তার জন্মদিনে একটি স্পোটের্র জন্য একটি ট্র্যাক কিনে দেয়ার পর। অবশ্য জোটা স্পোটর্ গঠন করা হয় টিম জোটা নামের আরেকটি টিম থেকেই। তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে তিনি টিমের কাজটি শুরু করেন। ২৪ ঘণ্টাই তিনি ফ্রেঞ্চ স্পোটর্ কার লে ম্যানস কাজ করে পঞ্চম স্থানে উঠে আসেন। ভেঞ্চাররা এই টিমটি কিনে নেয় ৮ মিলিয়ন পাউন্ডে। কর কতর্ন ছাড়াই তার লাভ আসে ৫ লাখ পাউন্ড।

এরপর ডোনাল জড়ান এভিয়েশন ব্যবসায়। নাম জোটা এভিয়েশন। সাউথেন্ড এয়ারপোটের্র একটি চাটার্ডর্ বিমান কোম্পানি এটি। তার দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে এটি একটি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরেই সিমন ডোলান আবার তার অ্যাকাউটেন্সি ব্যবসায় ফিরে আসেন। নাম ডোলান অ্যাকাউটেন্সি। তার কিছু পুরনো সহকমীের্দর নিয়েই ফের শুরু করেছেন এই গ্রæপটি। ঠিক আগের অ্যাকাউটেন্সি ফামের্র কাঠামোর মতো করেই। যেহেতু এই ব্যবসায় তার অভিজ্ঞতার ঝুড়ি পরিপূণর্ তাই কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই দিব্যি এগিয়ে যাচ্ছে তার ফামর্।

একজন মাল্টিমিলিয়নার হিসেবেই কি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন? শুধু একটু লাক্সারি জীবনযাপনের আশায়? তার সোজাসাপ্টা জবাব, ‘আমি তখন কাজটি করেছিলাম মাত্র ছয় মাসও হয়নি। যেহেতু আমার রক্তেই ব্যবসা ঢুকে গেছে। আমি আবার হঁাসফঁাস শুরু করলাম ব্যবসা শুরু করতে। এই অভ্যাসকে একজন ফুটবলারের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তারা শুধু ফুটবলেই কিক করতে ভালোবাসে। কখনো সেটি থামাতে চান না তারা। যে কাজটি ভালোবেসে করা শুরু করবেন আপনিও কখনো থামতে চাইবেন না।’

অনুবাদ : বিবিসি অবলম্বনে ইমদাদ হোসাইন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20809 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1