গত মাসের সামরিক অভু্যত্থানের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের আরও একটি দিন দেখল মিয়ানমার। রোববার দেশটির রাজপথে নেমে আসে লাখো প্রতিবাদী মানুষ। সবার দাবি একটাই, অবিলম্বে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। এর আগে শনিবার রাতে ধরপাকড় চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের ধরতে অন্যতম বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর রাতভর অভিযান সত্ত্বেও এদিন সকাল থেকেই আবারও আন্দোলনে নামে বিক্ষোভকারীরা। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শান অঞ্চলের লাশিও শহরে অভু্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভে জড়ো হওয়া মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও বিকট শব্দ উৎপন্নকারী স্টান গ্রেনেড ছুড়ছে পুলিশ।
এছাড়া মন্দিরের জন্য বিখ্যাত ঐতিহাসিক বাগান শহরে বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। তবে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ রাবার বুলেট নাকি সরসারি প্রাণঘাতী তাজা গুলিবর্ষণ করেছে, সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি গণমাধ্যম। এছাড়া রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইয়াঙ্গুন-বাগান লাশিও শহর ছাড়াও আরও অর্ধডজন শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলে এদিন। এতে দেশটির লাখো মানুষ অংশ নিয়েছে।
এদিকে, একটি ভিডিও ফুটেজের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত সপ্তাহে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারীদের স্মরণে রোববার দুই মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের আন্দোলনকারীরা।
এর আগে শনিবারও মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ হয়। ইয়াঙ্গুনের সানচাং এলাকায় একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে সেখানে কোনো বিক্ষোভকারীর হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইতে অভু্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীরা 'গণতন্ত্রই
আমাদের উদ্দেশ্য', 'বিপস্নব অবশ্যই জয়ী হবে' বলে স্স্নোগান দেয়। এছাড়া বিক্ষোভকারী এক নেতা ফেসবুকে লিখেছেন, 'বিপস্নবের যে স্পন্দন শুরু হয়েছে, তা হারাতে দিতে পারি না আমরা। যারা সাহস করে লড়াই করে, তারাই জয়ী হয়। আমরাও জয়ী হব।'
এছাড়া আরেক আন্দোলনকারী নেতা জনতার উদ্দেশে বলেন, 'তারা (জান্তা বাহিনী) মানুষকে পাখির মতো হত্যা করছে। তাদের বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহ না করি, তাহলে কী করবো? আমরা অবশ্যই বিদ্রোহ করবো।' বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের অন্তত তিনটি এলাকায় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়। রাতে সেনা ও পুলিশ শহরটির বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রবেশ করে গুলি ছোড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা কিয়াকতাদা এলাকা থেকে অন্তত তিন জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তবে কী কারণে এসব গ্রেপ্তার, তার কারণ জানেন না তারা। সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের কর্মী একজন আইনজীবীর খোঁজও করেছিল সেনারা, কিন্তু তাকে খুঁজে পায়নি বলে জানিয়েছেন বিলুপ্ত পার্লামেন্টের সদস্য সিথু মং।
'অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স' গোষ্ঠী জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত সর্বমোট এক হাজার ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জান্তা কর্তৃপক্ষ। তবে শনিবার রাতে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে সংখ্যাটি জানাতে পারেনি তারা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করছে, সংযতভাবে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তারা। তবে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়, এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তারা।
উলেস্নখ্য, ফেব্রম্নয়ারির প্রথম দিন সেনাবাহিনী সরকারকে হটিয়ে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অচলাবস্থার সূচনা হয়। প্রাত্যহিক বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশ রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অচল হয়ে গেছে দেশটির দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রমও।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, অভু্যত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের হাতে অর্ধশতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। এরমধ্যে গত বুধবারই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ৩৮ জন বিক্ষোভকারী। এরপরও বিক্ষোভকারীরা প্রতিদিনেই রাস্তায় নামছে এবং সু চির মুক্তিসহ গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
দেশের জন্য মরতেও প্রস্তুত
অদম্য প্রতিবাদীরা
এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন ও তাজা গুলি মিয়ানমারের সামরিক অভু্যত্থান-বিরোধীদের রাজপথ থেকে সরাতে পারছে না। বরং প্রতিদিনই তারা সুসংহত হয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের সাফ কথা- 'আমরা দেশের জন্য মরতে চাই। এবার আমাদের অবশ্যই জয়ের জন্য লড়তে হবে।'
মং সাউংখা নামে এক অধিকারকর্মী বলেন, 'আমরা দেশের জন্য মরতে প্রস্তুত। এবার আমাদের অবশ্যই জেতার জন্য লড়তে হবে। আমাদের বিশ্বাস তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে যৌথভাবে এই লড়াই বিজয় এনে দেবে।'