শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাকাতে আত্মপ্রচারণা সুন্নতসম্মত নয়

যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ মে ২০২১, ০০:০০

সারা বছর জাকাত দেওয়ার সুযোগ থাকলেও রমজানে ৭০ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়ার আশায় অনেকেই এ সময় তা পরিশোধ করে থাকেন। তাই রমজানের সঙ্গে আর্থিক ইবাদতের এ বিষয়টি আঙ্গিকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। তবে জাকাত প্রদান করতে গিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে, সাইনবোর্ড লাগিয়ে ও মাইকিং করে অনেকে আত্মপ্রচারণা করে থাকেন। যা ইসলামের দৃষ্টিতে সুন্নতসম্মত নয়।

এছাড়া স্বল্পমূল্যের শাড়ি ও লুঙ্গি দিয়ে জাকাত দেওয়া তাকওয়ার প্রকাশ নয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা কখনো প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তা ব্যয় করবে যা তোমরা

ভালোবাসো। তোমরা যেকোনো বস্তুই ব্যয় করো, তবে নিশ্চয়ই আলস্নাহ তায়ালা সে বিষয়ে অবগত।' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯২)।

আল কোরআনে নামাজের নির্দেশ যেমন ৮২ বার রয়েছে, অনুরূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের নির্দেশনাও ৮২ বার করা হয়েছে।

'জাকাত' শব্দ দ্বারা ৩০ বার, 'ইনফাক' শব্দ দ্বারা ৪৩ বার এবং 'সদাকাত' শব্দ দ্বারা ৯ বার এই নির্দেশনা রয়েছে। এর দ্বারা জাকাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। কোরআন মজিদে ১৯টি সুরায় জাকাতের আলোচনা এসেছে।

এ প্রসঙ্গে সুরা তাওবায় ইরশাদ হয়েছে, 'নিশ্চয়ই সদকাহ (যাকাত) হলো- ফকির, মিসকিন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্যে, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, আলস্নাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য- এটা আলস্নাহর বিধান। আলস্নাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।'

সুরা হজে জাকাত সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, 'আমি যদি তাদের পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি, তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আলস্নাহর ইচ্ছাধীন।'

জাকাতের প্রকৃত হকদার কারা সে সম্পর্কেও কোরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে সুরা বাকারায় বলা হয়েছে, 'এটা (জাকাত) প্রাপ্য সেসব অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আলস্নাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত থাকায় জীবিকার জন্য জমিনে পদচারণা করতে পারে না এবং (আত্মসম্ভ্রমের কারণে) কারও নিকট হাত পাতে না বলে অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদের (দারিদ্র্যের) লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে মিনতি করে যাচনা করে না। আর যে কল্যাণকর কিছু তোমরা ব্যয় করো, নিশ্চয় আলস্নাহ তা সবশেষ অবহিত।'

পবিত্র কোরআনুল কারিমের সুরা নুরে ইরশাদ হচ্ছে, 'সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আলস্নাহর স্মরণ, সালাত কায়েম এবং জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।'

জাকাত প্রদান সম্পর্কে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, তোমরা সদাকাহ (জাকাত) প্রদান করো, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না। (দাতা যাকে দেওয়ার ইচ্ছা করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে এলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারি : ১৪১১, সহিহ মুসলিম : ১০১১)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুলস্নাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আলস্নাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে তার জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন-সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে যার মাথার ওপর থাকবে দুটি কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সাপ ওই ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। (সহিহ বুখারি : ১৪০৩)

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুলস্নাহ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আলস্নাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আলস্নাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহিহ বুখারি : ১৪৪২, সহিহ মুসলিম : ১০১০)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে