শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝড়ের বিপদ কাটলেও বৃষ্টির শঙ্কা কমেনি

লঘুচাপটি গতকাল গাজীপুর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল। ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা আর নেই
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া স্থল নিম্নচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ হয়ে এটি এখন ঢাকা, গাজীপুরের আশপাশে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে দেশের অনেক এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। তবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের কোনো শঙ্কা নেই। তাই এসব এলাকার নদী-বন্দরগুলোকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়, স্থল নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবে মানিকগঞ্জ থেকে সরে গিয়ে গাজীপুর ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা আর নেই। এ কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলার এবং নৌকাগুলোকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নিম্নচাপের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে মৌসুমি বায়ুও বিদায় নিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ বলেন, নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ ভূখন্ড অতিক্রম করে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টির দাপট ধীরে ধীরে কমে আসবে।

তবে ঝড়-বৃষ্টির বিপদ কেটে গেলেও নদীতে পানি বেড়েছে। বিশেষ করে সিলেটের উজানে ভারতীয় অংশে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। সেখান থেকে ওই বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে দেশের অভিন্ন নদ-নদীগুলো দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। এসব নদনদীর পানি এরই মধ্যে দ্রম্নত বাড়তে শুরু করেছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে বলা হয়েছে, চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শিলিগুড়িতেও প্রায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে খুব বেশি ভয়ের আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সংস্থাটি বলছে, এই সময়ে নদীর পানি বেশ খানিকটা কম থাকায় উজানের ঢলে বড় বন্যার আপাতত কোনো আশঙ্কা নেই।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস বলছে, আগামী দু-এক দিন সিলেট ও কুমিলস্না-ফেনী জেলার নদ-নদীর পানি দ্রম্নত বাড়বে। এতে এসব জেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হতে পারে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে ৫২টির পানি বাড়ছে আর কমছে ৪৫টির। বাকিগুলোর পানি স্থিতিশীল আছে।

এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর

আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি তেমন হয়নি। ঢাকা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীতে মাত্র ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টির দাপট কমলেও গত কয়েকদিনের পানি জমে বেশকিছু রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে যানবাহন চলাচল ছিল কম। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ ঘরের বাইরে বের হয়নি। দোকানপাট খুললেও বেচাকেনা ছিল স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে সাধারণত যতটা ভিড় হয়, গতকাল সে ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ব্যতিক্রম ছিল। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাজকর্মেও যথেষ্ট ভাটা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

কক্সবাজার : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া স্থল নিম্নচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হলেও সাগর এখনো কিছুটা উত্তাল রয়েছে। তবে এরইমধ্যে পর্যটকরা সমুদ্রসৈকতে ঘুরে বেরিয়েছে। সৈকতের ঢেউ, বালিয়াড়িতে নিজেকে স্মরণীয় করতে অনেকে নিজেকে ছবির ফ্রেমে বন্দি করতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। সৈকতের প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে পর্যটকদের ভিড় লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট বরাবরের মতই ব্যতিক্রম। এখানে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের দেখা মেলে। তবে সৈকতের বালিয়াড়িসহ সাগরের লোনাপানিতে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও ভিড় জমতে দেখা গেছে।

অনেক পর্যটক জানিয়েছেন, করোনায় ঘরবন্দি জীবন থেকে মুক্ত সৈকতে এসে নতুন করে প্রাণ পেয়েছেন তারা। এখানে এসে মনে হয় না যে বাংলাদেশে করোনা আছে। পর্যটকদের আগমনের ওপর নির্ভর করে সৈকতের বালিয়াড়িতে রয়েছে সহস্রাধিক শামুক-ঝিনুক ও বার্মিজ পণ্যের দোকান। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেচা-বিক্রিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান দোকানিরা।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রাম চিলমারীতে গত দু'দিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় উঠতি আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ উপজেলায় পরপর চার দফা বন্যায় আমন বীজ তলা ও রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্ন এলাকা থেকে চড়া দামে চারা সংগ্রহ করে আমন ফসলের আবাদ করতে হয়েছে। এ অবস্থায় গত দু'দিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ধানগাছ মাটিতে নেতিয়ে পড়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষিবিদ জাহেদুর রহমান জানান, দু'দিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ৫০ বিঘা জমির ধানক্ষেত মাটিতে নেতিয়ে পড়েছে।

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সমুদ্রের নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকে অবিরামভাবে বয়ে যাচ্ছে ঝড়বৃষ্টি। টানা ঝড়বৃষ্টিতে এখানকার জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। হাট-বাজারে কমে গেছে জনসমাগম। ক্রেতার অভাবে বিক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। পথঘাটে লোকজন কমেছে। বিভিন্ন স্থানে নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে উদ্যোক্তাদের। ঝড় বৃষ্টিতে অনেক স্থানে মাটিতে নুয়ে পড়েছে কৃষকের আমন ধান।

এরমধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। ঝড়-বৃষ্টিপূর্ণ আবহাওয়ায় পূজার আনন্দ উৎসব পালনে বাধার সৃষ্টি করছে। অনেক স্থানে বাড়তি টাকা খরচ করে টিনের অস্থায়ী চালা বানিয়ে উৎসব পালন করতে দেখা গেছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সমুদ্রের নিম্নচাপের প্রভাবে কুড়িগ্রামেও বিরাজ করছে ঝড় বৃষ্টি। তবে নিম্নচাপটি এখন দুর্বল হতে শুরু করেছে। সোম ও মঙ্গলবার নাগাদ আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাদারীপুর : বৈরী আবহাওয়ার কারণে পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। শুক্রবার সকাল থেকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি বেড়ে গেলে নৌরুটে লঞ্চ এবং স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া নাব্য সংকটের কারণে আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। বিআইডবিস্নউটিএর কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে পদ্মা। মাঝ পদ্মায় প্রচন্ড ঢেউ থাকায় ঝুঁকি এড়াতে ভোর থেকেই লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিআইডবিস্নউটিএর কাঁঠালবাড়ী লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116436 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1