শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় 'ছোঁ পার্টির' তৎপরতা বেড়েছে

সক্রিয় কমপক্ষে শতাধিক সদস্য ষ নিমিষেই মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে ষ মাদকের টাকা জোগাড় করতেই এমন অপরাধ ষ চক্রের সদস্যরা প্রায় শতভাগই মাদকাসক্ত
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ঢাকায় প্রায়ই ছোঁ-মেরে মোবাইল ফোন, চেইনসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে এই পার্টির কমপক্ষে শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। 'ছোঁ পার্টির' সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ দোকানদার সেজেও রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে এমন ঘটনা ঘটায়। তবে এই পার্টির সদস্যরা নিরাপদে পালিয়ে যেতে অনেক সময় মোটর সাইকেলও ব্যবহার করছে। 'ছোঁ পার্টির' ১৬ সদস্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।

শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চলন্ত যানবাহন থেকে ছোঁ মেরে যাত্রীদের মোবাইল, ল্যাপটপ, ব্যাগসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ঢাকার উত্তরখান থানা এলাকা থেকে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা হলেন, মিজান, আমিরুল ইসলাম বাবু, শরিফ হোসেন, হৃদয়, রাজ, সুমন, সোহেল বাবু, হৃদয়, মনিরুজ্জামান,

নাজমুল, মনির, ইমরান, ফারুক, আশরাফুল ইসলাম সজীব, আরিফ ও হাসান। এরা প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। তাদের কাছে পাওয়া গেছে ছোঁ-মেরে ছিনতাই করার কাজে ব্যবহৃত নম্বর পেস্নটবিহীন ১টি মোটর সাইকেল, ছিনিয়ে নেওয়া ৫০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল, ৪টি চাকু, দুই জোড়া স্বর্ণের দুল ও সাড়ে ২৩ হাজার টাকা।

ডিআইজি হারুন-অর-রশীদ জানান, গ্রেপ্তারদের তথ্যমতে ঢাকায় 'ছোঁ পার্টির' অন্তত শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। যাদের সম্পর্কে তথ্যও পাওয়া গেছে। প্রত্যেক সদস্যের টার্গেট দিনে অন্তত ৩টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া। সে হিসাবে ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত ৩০০ মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, 'ছোঁ পার্টির, সদস্যরা বাস বা ট্রেন বা প্রাইভেটকারের আশপাশে হকার বা নানা ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। সুযোগ পেলেই যাত্রীর মোবাইল ফোন বা স্বর্ণের চেইন বা ল্যাপটপ বা হাতব্যাগ ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিয়ে নিমিষেই পালিয়ে যায়। ছিনতাই করা মালামাল নামমাত্র দামে তাদের মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দেয়। মহাজনরা নির্ধারিত দোকানে এসব ছিনতাই করা পণ্য বিক্রি করে। দোকানিরা তুলনামূলক কম দামে সেগুলো সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। অনেক সময় মোবাইল ফোনের দামি যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে তারা। মোবাইল বিক্রির আগে সেটের আইএমইই নম্বর পরিবর্তন করে।

ডিবি প্রধান জানান, উত্তরখানের বিসমিলস্নাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামে একটি দোকানে এসব মোবাইল বিক্রি হতো। গ্রেপ্তাররা সবাই ওই দোকানে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল বিক্রি করতেন। তারা মহাখালী থেকে টঙ্গী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ১৬টি স্পটে ছোঁ মেরে ছিনতাই করতেন।

চক্রের নেতা মিজান, জয়, বাবু ও শরীফের নেতৃত্বে বাস, প্রাইভেটকার ও সিএনজি যাত্রীদের মূল্যবান সামগ্রী ছোঁ-মেরে ছিনিয়ে নিত। এসব মালামাল বেচাকেনা হতো সুমন, ফারুক ও আশরাফুল ইসলাম সজীবের মাধ্যমে বিসমিলস্নাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামে একটি দোকানে।

ডিবি প্রধান জানান, চক্রের প্রায় শতভাগ সদস্যই মাদকাসক্ত। মাদকের টাকার জোগাড় করতেই তারা ছিনতাই করত। চক্রের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলে তাদের জামিনে মুক্ত করত মহাজনরা। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তাই গ্রেপ্তারের পর তাদের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে হয়তো এ ধরনের অপরাধ কমে আসবে। সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমাতে মাদকবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমানসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে