ঘরোয়া ফুটবল আর মোহামেডান-আবাহনী যেন মুদ্রার এপিঠ ও পিঠ। বাংলাদেশের ফুটবলের নাম আসলেই সবার আগে উঠে আসে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই দুই ক্লাবের নাম। পেশাদার ফুটবল লিগে যেখানে অন্যতম সফল ক্লাব ঢাকা আবাহনী। সেখানে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের রেকর্ড নেই একবারও শিরোপা জেতার। আসন্ন মৌসুমেও মাঝারি মানের দল গড়ে পঞ্চম অথবা ৬ষ্ঠ স্থানে থাকার প্রত্যাশা করছে সাদা-কালোরা। কারণ হিসেবে সামর্থ্যের অভাবের কথা জানালেন ক্লাবের পরিচালক সারোয়ার হোসেন।
ঘরোয়া লিগটা পেশাদার ফুটবলে পা দেয়ার পর কখনো শিরোপা জেতা হয়নি দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের। অথচ এই তথ্যটা হয়তো অনেকেরই অজানা যে ঢাকা ফুটবল লিগে এই মোহামেডানই জিতেছিল ১৯টি শিরোপা! যার ৭টি দেশ বিভাগের আগে ও ১২টি দেশ বিভাগের পর অর্জন করে তারা। পেশাদার ফুটবল লিগের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। প্রথম আসর থেকে পর পর তিনবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনীর থেকে পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে রানার্স আপ হয় সাদা-কালোরা। এটিই ছিল তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য। বিগত কয় আসরের মধ্যে ২০১২ এবং ২০১৪-১৫ আসরে তৃতীয় হয়েছিল তারা। এরপরের আসরগুলো আরও হতাশাময়। গত কয়েক আসর ধরে লিগের শেষ দিকে এসে অবনমনের শঙ্কায় পড়ার মতো লজ্জাজনক পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে এক সময়ের দাপুটে ক্লাবটিকে। আর চলতি মৌসুম শুরুর আগেই আরও বড় সংকট পার হয়ে দল গড়তে হয়েছে তাদের। ক্যাসিনো কান্ডে লন্ডভন্ড মোহামেডান এবার দল গড়তে পারবে কিনা সেটাই ছিল সংশয়ে। তবে সাবেক ফুটবলাররা নতুন করে দায়িত্ব নিয়ে সেই সংকট কাটিয়েছেন। মোহামেডানের দলবদলকে কেন্দ্র করে মতিঝিল এলাকা হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর। দীর্ঘদিন পর আবারো একসঙ্গে হয়েছিলেন মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার, সমর্থক আর ক্লাব কর্মকর্তারা। তারুণ্যনির্ভর একটা দল গড়ে মৌসুমের শুরুতে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেও গিয়েছিল তারা। অথচ আহামরি কোনো দল নয়। ডাগ আউটে ইংলিশ কোচ শন ব্রেন্ডান লেন। দলে তারকা বলতে একমাত্র গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল। অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটাও তার হাতেই। সাদা কালোরা রক্ষণভাগ সাজিয়েছে মালির জাতীয় দলের ফুটবলার ওসমান বের্থ, স্থানীয় অপরিচিত মুখ আতিকুজ্জামান, সাদেকুজ্জামান, হুমায়ুন, ইমনদের নিয়ে। আছেন নাইজেরিয়ান স্ট্যানলে আমাদি। আর মধ্য মাঠে অনিক, শ্যামল, হাবিব, মিথুন নাইজেরিয়ান ওগোচুকুয়া জাপানিজ নাগাতাদের নিয়ে। আক্রমণভাগে মালীর ফরোয়ার্ড সোলেমান ডাইব্যাট, ওসাই মং মারমা আর আমির হাকিম বাপ্পিকে নিয়ে।
মূলত বাজেট স্বল্পতার কারণেই এবারও শিরোপা লড়াই করার মতো দল গড়তে পারেনি ক্লাবটি জানালেন মোহামেডানের পরিচালক সারোয়ার হোসেন, 'চ্যাম্পিয়ন ফাইট দেয়ার মতো দল গড়তে যে পরিমাণ বাজেট প্রয়োজন সেটি আমাদের ছিলনা। আমরা ভালো মানের স্থানীয় ফুটবলার পাইনি। তাই তারুণ্যনির্ভর একটা দল গড়েছি। তবে ভালো বিদেশি কোচ আর ভালো মানের পাঁচ বিদেশিকে নিয়ে দলটা এখন মাঝারি মানের হয়েছে।'
স্বভাবতই এই দল নিয়ে পেশাদার লিগের চ্যাম্পিয়ন হবার স্বপ্নটা দেখতে পারছে না মোহামেডান। আর তাই ক্লাব পরিচালক মনে করছেন ৫-৬ থাকতে পারলেই সেট হবে ভালো ফল, 'আমরা মৌসুম সূচক ফেডারেশন কাপের সেমিতে খেলেছি। তবে বাস্তবতা হলো প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা লড়াই করার মতো দল গড়তে পারিনি। তাই আমাদের লক্ষ্য পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ স্থানের মধ্যে থেকে লিগ শেষ করা। এই দল নিয়ে সেটি করতে পারলেই মনে করবো ভালো ফল।'