রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পাঁচ বছরেই অঢেল সম্পদের মালিক জাহাঙ্গীর-ময়না

রাজশাহী অফিস
  ০৫ মে ২০২৪, ১৮:৩২
ছবি-যায়যায়দিন

আগামী ৮ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে। এ নির্বাচনে এবারো প্রার্থী হয়েছেন গোদাগাড়ীর বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও তানোর বর্তমান চেয়ারম্যান লুৎফর রশিদ হায়দার ময়না। ২০১৯ সালে তারা প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তারা হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক।

জাহাঙ্গীর আলম গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। চেয়ারম্যান হয়েই ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে তিনি কামিয়েছেন অঢেল সম্পদ। জাহাঙ্গীর আলম ২০১৯ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর আশীর্বাদে গোটা উপজেলাতেই গড়ে তোলেন একক আধিপত্য।

নির্বাচনি হলফনামায় জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করেছেন। জাহাঙ্গীরের কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক আয় ৭০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে পান তিন লাখ ২৬ হাজার ৫৪৭ টাকা। আর ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৪০ হাজার ৪৩০ টাকা। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে বছরে সম্মানি পান ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

জাহাঙ্গীর আলমের নগদ আছে ১০ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ এবং অন্যান্য খাতের ব্যবসায়িক পরিসম্পদ চার কোটি ৩৪ লাখ ৭৭ হাজার ২০৫ টাকা। জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর আছে ২৮ ভরি স্বর্ণ এবং ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৫ টাকা। নিজের নামে এবং স্ত্রী-সন্তানের নামেও আছে জমি। স্থাবর সম্পদ হিসাবে মৎস্য খামারের মূল্য দেখিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। আর গরুর খামার আছে এক কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের। স্বামী-স্ত্রীর নামে ব্যাংক ঋণ রয়েছে ১১ কোটি ৪৫ টাকা। এর মধ্যে স্ত্রীর নামে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৪২ লাখ টাকা।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা করি। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। সব সম্পদের বিবরণ হলফনামায় আছে। এর বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই।’

অপরদিকে, তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর রশিদ হায়দার ময়না এবারও প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি তানোর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।

২০১৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ময়নার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ এলাকার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট জেলা প্রশাসককে লেখা অভিযোগে তৎকালীন ইউএনও নাসরিন বানু উল্লেখ করেন, প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কিনতে গেলে ময়না তাতে বাধা দেন।

এছাড়া চেয়ারম্যান নিজেই সিন্ডিকেট করে গত কয়েক বছরে সরকারি গুদামে ধান, চাল ও গম সরবরাহ করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছেন। ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, উপজেলা রাজস্ব উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাস্তা মেরামতের নামে কাজ না করেই ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছাড় করার জন্য ইউএনওর ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন ময়না।

এতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেন। একই অর্থবছরে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। চেয়ারম্যান সেই টাকা উত্তোলন করলেও বিতরণ করেননি।

এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য বরাদ্দ আসে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকাও উত্তোলন করে চেয়ারম্যান নিজের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর নামে-বেনামে ময়না দুই হাতে জমি কেনাসহ অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনি হলফনামায় ময়না নিজের পেশা ঠিকাদারি ও কৃষি বলে উল্লেখ করেছেন।

কৃষি খাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র আছে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকার। আর চেয়ারম্যান হিসাবে বছরে সম্মানি পান ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ময়নার নগদ আছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫১ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৪ টাকা। স্থায়ী আমানত আছে ৩০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ১০ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে ময়না পৈতৃক সূত্রে ২০ বিঘা জমির মালিক। আর হেবামূলে পেয়েছেন ১২ বিঘা অকৃষি জমি।

লুৎফর রশিদ হায়দার ময়না বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কুৎসা রটাতে নানা কথা বলে বেড়ায়। কিন্তু আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি।’

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে